পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আফগানিস্তানে তালেবানের বিস্ময়কর সাফল্য ম্লান করার জন্য যখন ভারত থেকে Wild propaganda বা উন্মাদ প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তখন তালেবানের প্রতি রুশ রাষ্ট্রদূতের দৃঢ় সমর্থন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলকে হতবাক করেছে। কাবুল ও কান্দাহারে ভারতীয় দূতাবাসে তল্লাশিকে ইঙ্গিত করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সহিংসতার ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকার বেশিদিন টেকে না। তারপরেই শুরু হয়েছে তালেবানের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার ওয়াইলড প্রোপাগান্ডা। নিচে এই ধরনের কয়েকটি উস্কানিমূলক সংবাদের উদ্ধৃতি দিচ্ছি:
১। ২০ আগস্ট কলকাতার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ লিখছে, ‘পশতুন তালেবানের বরাবরই স্পর্ধিত ব্যতিক্রম পাঞ্জশির। আজও সেখানে বীরত্বের শেষ কথা আহমদ শাহ মাসুদ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবার ছেড়ে যাওয়া কালাশনিকভে এখন হাত ছেলে আহমদ মাসুদের। তার ওপরই এখন পাঞ্জশিরকে তালেবান মুক্ত রাখার চ্যালেঞ্জ কিংবদন্তি আহমদ শাহ মাসুদের ছয় সন্তানের সবচেয়ে বড় আহমদ মাসুদ। ৩২ বছরের হাসিখুশি সেই মাসুদই এখন পাঞ্জশিরের পাশাপাশি গোটা দুনিয়ার আশা ভরসা। তালেবানদের জেট গতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাইফেল হাতে সিংহ বিক্রমে এলাকা আগলাচ্ছেন মাসুদ। তবে তিনি একা নন, অসম এই লড়াইয়ে ছোট মাসুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমরুল্লাহ সালেহ। তিনি তত্ত্বাবধায়ক ঘানি সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি তিনি নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’
একই রিপোর্টে থলের বিড়াল বের করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৯৯৬ সালে তালেবান যখন ক্ষমতায় যায় তখন তার প্রতিপক্ষ হয় আহমদ শাহ মাসুদের নর্দান অ্যালায়েন্স। আনন্দবাজার বলছে, ‘সেই সময়ে নর্দান এলায়েন্স এর সমর্থনে দাঁড়িয়েছিল ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ভারত।’ এখন ভারত ছাড়া আহমদ মাসুদের পেছনে কেউ নেই। রাশিয়াও এখন তালেবানের পক্ষে। ২৩ আগস্ট দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, আহমদ মাসুদ তালেবানের আনুগত্য স্বীকার করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্টের দাবিদার আমরুল্লাহ সালেহও তালেবানের সাথে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
দুই
২। ২১ আগস্ট আনন্দবাজার রিপোর্ট করছে, ‘পাঞ্জশির এবং পারওয়ানের পর এবার বাগরান প্রদেশ। ফের তালেবান ফৌজের ওপর প্রত্যাঘাত বিরোধী জোটের। শুক্রবার উত্তর মধ্য আফগানিস্তানের ঐ তিনটি জেলা তালেবানের দখলমুক্ত করেছে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালের অনুগত বাহিনী। তীব্র লড়াইয়ের পর বাগরান প্রদেশের বানু পুল-ই হিসার এবং দে-সালাহ্ জেলা পুনরুদ্ধার করেছে বিরোধী জোট। সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন তালেবান যোদ্ধা।’ আরেক প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট উজবেক নেতা যুদ্ধবাজ আব্দুর রশিদ দোস্তামের ছেলে ইয়ার মোহাম্মদ দোস্তাম আহমদ মাসুদের সাথে হাত মিলিয়েছেন বলে আনন্দবাজার রিপোর্ট করেছে।
৩। ২১ আগস্ট ‘সংবাদ সংস্থা’ এই নামে আনন্দবাজার একটি বানোয়াট খবর প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে তালেবানের সাহায্য চেয়েছেন হিজবুল মুজাহেদীন নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিন। সৈয়দ সালাউদ্দিন নাকি একটি অডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে মোনাজাত, তিনি যেন আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাতকে আরো শক্তিশালী করেন, যেন তারা কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহায্য করতে পারে।’ পাঠক, লক্ষ করুন, এখানে এক ব্যক্তির ইচ্ছাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একটি নিউজ করা হয়েছে।
৪। আনন্দবাজারী ডেস্কে ম্যানুফ্যাকচার করা আরেকটি নিউজ দেখুন। প্রকাশিত হয়েছে ২০ আগস্ট। বলা হয়েছে, ‘সাফল্যের ঘাটে এসেছে তালেবানের নৌকা। অথচ কান্ডারী নাই। তালেবান শীর্ষ নেতা হাইবাতুল্লা আখুন্দজাদা কোথায়? ভারত সরকারের তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে, আখুন্দজাদা সম্ভবত পাকিস্তানে রয়েছেন। বিদেশি গোয়েন্দারা তালেবান শীর্ষ নেতার অবস্থান সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছিল ভারতকে। সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে ভারত জেনেছে, আখুন্দজাদা পাক সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকতে পারেন।’ তাঁকে বলা হয়, ‘আমীরুল মুমেনিন’, অর্থাৎ সত্যবাদীদের আমীর।
তিন
লেখাটির এই পর্যায়ে আজ ২৩ আগস্ট, সোমবার। তালেবানের আফগানিস্তান দখলের ৮ দিন হয়ে গেল। এখনও তালেবান সরকার গঠন করেনি। দেশটি সরকার শূন্য অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং আফগানিস্তান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন দিকে যাবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সমীচীন হবে না। হয়তো একটা ধারণা করা যেতে পারে। কিন্তু সেটি ছাপার অক্ষরে এখুনি বলা ঠিক হবে না।
৫। তবে ২১ আগস্ট আনন্দবাজার একটি রিপোর্ট ছেপেছে। শিরোনাম, ‘তালেবানের পাশে চীন ও পাকিস্তান।’ আর এখানেই ইন্ডিয়ানদের যত মর্মজ্বালা। চীন অফিসিয়ালি বলছে, ‘তালেবানদের সম্মান করুন। এখনই কোনো চাপ দেবেন না।’ আর তালেবান মুখপাত্র সুহায়েল শাহিন বলেন, ‘আফগানিস্তানকে নতুন করে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা নেবে বেইজিং।’ চীন আরো বলেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে তালেবান শাসন আমরা দেখেছি, তার থেকে ওরা এখন অনেক বেশি বাস্তববাদী।
চার
আজকের এই কলামটি শুরু করেছিলাম তালেবানের প্রতি রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থনের উল্লেখ করে। এখন সেখানে আসছি। বার্তা সংস্থা এপির খবরে প্রকাশ, আফগানিস্তানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভ বলেন, আফগানিস্তানে তালেবানের বিকল্প নাই। তাদেরকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। রয়টার্সকে তিনি বলেন, তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেমন ছিল, তালেবান আসার পর পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে। ঝিরনভ বলেন, আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ্ বলেছেন, তিনি আফগানিস্তানের আইনসঙ্গত তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট। সালেহর দাবি সংবিধান পরিপন্থী। পাঞ্জশিরভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাদের কোনো সামরিক সম্ভাবনা নাই। তাদের দলে বেশি লোক নাই। তাদের কাছে জ্বালানি নাই। তারা একটি হেলিকপ্টার উড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু পেট্রোলের অভাবে সেটা পারেনি।
রুশ রাষ্ট্রদূত একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন, যা ইতোপূর্বে কেউ দেয় নাই। দেশ ছাড়ার জন্য যারা মার্কিন বিমানে ওঠার জন্য হুড়াহুড়ি করছে, তারা শুধু ভয়ে বা আতঙ্কেই করছে না। অনেক আফগান এই সুযোগে পাশ্চাত্যের নতুন জীবনের স্বাদ আস্বাদনের জন্যও করছেন।
রাষ্ট্রদূত ঝিরনভ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সরব প্রতিধ্বনি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘তালেবান আফগানিস্তান মোটামুটি দখল করেই নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্য দেশগুলির মতামত আফগানিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিৎ নয়।’ শুক্রবার মস্কোয় জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এই মন্তব্য করেন। আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, মস্কোর রুশ নেতৃবৃন্দের সাথে তালেবান নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে।
পাঁচ
আফগানিস্তানে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সেগুলো আফগানিস্তানের নিজস্ব এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু বাংলাদেশের এক শ্রেণির মুখচেনা মিডিয়া এমন বেসামাল হয়ে গেছে যেন মনে হচ্ছে যে, আফগানিস্তান নয়, তালেবান বাংলাদেশ দখল করেছে। আফগানিস্তান প্রশ্নে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট হওয়া উচিত। ওরা ওদের মুরগি গলা না পেছন দিক দিয়ে জবাই করবে সেটা ওদের ব্যাপার।
এব্যাপারে একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি অফিসারের বক্তব্য হাস্যকর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক নাকি আফগানিস্তান রওয়ানা হয়েছে। তাদের কয়েকজনকে নাকি ভারতে আটক করা হয়েছে। অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঐ সিনিয়র অফিসারের বক্তব্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় কথিত ঐসব লোক কীভাবে আফগানিস্তান যাবে? তারা কি হেঁটে যাবে?
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।