Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রক্রিয়া দ্রুতায়িত করে বন্ধ পাটকল চালু করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশ জুটমিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) ২২টি জুটমিলের মধ্যে ১৭টি বেসরকারি খাতে লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৭ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে বিজেএমসি। আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন গত ১৭ জুন পর্যন্ত ১৪টি পাটকল লিজ নিতে ৫১টি আবেদন জমা পড়েছে। বাকি তিনটির জন্য কোনো আবেদনপত্র জমা পড়েনি। আপাতত এই ১৪টি পাটকল লিজ দেয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা হবে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বিজেএমসির চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসনের ওপর ভিত্তি করে পাটকল শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে সরকারি পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি বছরের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করে লিজগ্রহীতাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, দেশের এক সময়ের প্রধান খাত পাটশিল্পের দৈন্যদশা ঘুচানোর জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। পাটকলগুলোর উন্নয়ন, সংস্কার ও আধুনিকরণের দিকে মনোযোগ না দেয়ায় এ শিল্প ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে। পাট তার ঐতিহ্য যেমন হারাতে থাকে তেমনি পাটকলগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের দেশে পাটশিল্পের ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বহু প্রাচীন। ’৪৭-এ দেশ ভাগের পর থেকে এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে একের পর এক পাটকল গড়ে তোলা হয়। ৫০-৬০ এর দশকে পাটশিল্প ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। এর অংশ হিসেবে এশিয়ার সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজি জুট মিল গড়ে উঠে। নারায়ণগঞ্জকে কেন্দ্র করে পাটকল গড়ে ওঠায় নারায়ণগঞ্জ পরিচিতি পায় প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের এক নম্বর অর্থকরি ফসল হিসেবে পাটকে বলা হয় সোনালী আঁশ। তোষা জাতের পাট বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠে। কৃষকরা পাট চাষ করে লাভবান হতে থাকে। পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রফতানি করে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। স্বাধীনতার পর গোটা খাতকে জাতীয়করণ করায় এ শিল্প তার ঐতিহ্য হারাতে থাকে। বিভিন্ন পাটকল লোকসানের বৃত্তে আটকে পড়ে। এদিকে কৃষক পাট চাষ করে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়। তারপরও লাখ লাখ কৃষক এখনও পাট চাষ করে যাচ্ছে। সাধারণ হিসাবে, দেশে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ একর জমিতে পাট চাষ হয়। এ থেকে উৎপাদিত হয় গড়ে ৫৮ লাখ বেল বা ১০ লাখ টন পাট। এর মধ্যে রফতানি হয় ২১ লাখ বেল, যা থেকে এক হাজার কোটি টাকা আয় হয়। বিশ্বে পাট উৎপাদনে ভারতের পরই বাংলাদেশের স্থান। বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই হওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি বিদেশে পাট দিয়ে গাড়ির উপকরণ তৈরির কথাও শোনা যায়। এছাড়া পাটের চট, দড়ি, ব্যাগ, ম্যাট, ত্রিপল, জুতা, কাপড়, কার্পেট থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করা হয়। পাটের এই বহুবিধ ব্যবহারের কারণে বিশ্বে এর চাহিদা ব্যাপক। অথচ আমাদের সমৃদ্ধ পাটশিল্পকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যেখানে আমাদের রফতানি পণ্যের সংখ্যা খুবই কম, সেখানে প্রতিষ্ঠিত পাটশিল্পকে রুগ্ন অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। লোকসানের কথা বিবেচনা করে পাটকলগুলো চালু রাখার পরিবর্তে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি মাথাব্যাথার কারণে মাথা কেটে ফেলার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুগ্ন হওয়া পাটকলকে কিভাবে সংস্কার ও আধুনিক করে সচল রাখা যায়, এ উদ্যোগ না নিয়ে বন্ধ করাকেই শ্রেয় মনে করা হয়েছে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে লোকসানে পরিণত হওয়া আদমজি জুট মিলস বন্ধ করে দেয়া হয়। এটা ছিল একটা ভুল সিদ্ধান্ত। প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করার পরিবর্তে বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। বর্তমান সরকারও পাটশিল্প রক্ষা এবং উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে, তা বলা যাবে না। পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে লিজ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা সরকার অনেক আগেও নিতে পারত। কিংবা পাটকলগুলো যুগোপোযুগি করে গড়ে তুলতে পারত। সরকারের কাছে গার্মেন্ট শিল্পই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এ খাতে প্রণোদনাও দিয়েছে। অথচ পাটশিল্পের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এ খাতে প্রণোদনা দিয়ে যথাযথ ব্যববস্থাপনার মাধ্যমে চালু রাখলে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যেত।

পাটকলগুলোর লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, ততই মঙ্গল। এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করা উচিৎ হবে না। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিজ নেয়ার আবেদন করেছে তাদের মধ্যে প্রকৃতই যারা পাটকল চালানোর সক্ষমতা রাখে তাদের হাতে হস্তান্তর করতে হবে। পাটকলগুলোতে কর্মকর্তা, কর্মচারি ও যেসব শ্রমিক কর্মরত প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের ওপর ভিত্তি করে তাদের বহাল রাখতে হবে। চাকরিচ্যুত করা যাবে না। হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট লিজগ্রহীতাকে দ্রুত উৎপাদন কার্যক্রম চালু করতে হবে। পাটকল উদ্বোধন করে বসে থাকলে চলবে না। পাটকল চালুর ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। পাটকলগুলোর বিপুল জমিজমা রয়েছে। লিজগ্রহীতারা যাতে সেখানে কোনো ধরনের আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে না পারে, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে। তবে সেসব জমিতে যদি তারা উৎপাদনশীল কোনো কলকারখানা গড়ে তোলে, তাহলে তা করতে দেয়া যেতে পারে। আমরা মনে করি, পাটশিল্পের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং একে অন্যতম প্রধান রফতানিখাতে পরিণত করতে লিজগ্রহীতারা দ্রুত তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এক্ষেত্রে সরকারেরও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজেএমসি

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন