Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাটকল বন্ধ হলেও থাকছে বিজেএমসি

সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণে তিন টাস্কফোর্স

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

পাটকল বন্ধ হলেও বন্ধ হচ্ছে না বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। কৃষকের স্বার্থ রক্ষা এবং পাট শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে কাজ করবে বিজেএমসি। বন্ধ হওয়া মিলগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, অবিক্রিত পাটপণ্য ও মজুদ কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণে টাস্কফোর্স কাজ শুরু করছে বলে জানা গছে। এ বিষয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে পৃথক তিনটি টাস্কফোর্স কাজ করছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, বিজেএমসি থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বন্ধ হওয়া মিলগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, অবিক্রিত পাটপণ্য ও মজুদ কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণের কাজ শুরু করছে। এরপরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজেএমসির বিষয়ে অবহিত করা হবে।

বিজেএমএসির চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালু হলেও বিজেএমসি থেকে যাবে। কোনো কারণে সমস্যা হলে সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন হবে। পাট বিক্রি নিয়ে কৃষকের সমস্যা হোক কিংবা শিল্প পর্যায়ে সমস্যা হোক পাট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে বিজেএমসি তখন প্রয়োজনীয় ভ‚মিকা নেবে। তিনি বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা এই তিন বিভাগে পৃথক তিনটি টাস্কফোর্স কাজ করছে।

স্বাধীনতার পর দেশের প্রধান রফতানি পণ্য ছিল পাট। তা থেকে রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসায় পাটকে বলা হত সোনালী আশ। সেগুলোই এখন বন্ধ। সরকারি সব পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। মিলগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, অবিক্রিত পাটপণ্য ও মজুদ জানা যাবে এ সপ্তাহে। বিলুপ্ত ঘোষণার পর এসব সম্পত্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মিল কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ নিরাপত্তা দলের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

বন্ধ পাটকলগুলো পিপিপি খাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগেই। আর্থিক লোকসানে থাকলেও প্রতি বছর পরিচালন ব্যয় বাড়ছে বিজেএমসির। বিজেএমসির পাটকলে গত ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসান হয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে মোট লোকসানের পরিমাণ এখন ১১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
এদিকে আয় ও উৎপাদন কমলেও নতুন নতুন নিয়োগ বন্ধ হয়নি। প্রতিবছরই বাড়ছে জনবল। নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রকাশনায় বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর সর্বশেষ সংখ্যা ৪০৫ জনের কথা বলা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৩৬১ জন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩৩২ জন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্টের এক আদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ’৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৯০ সালের পর বিশ্ব ব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভ‚ত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় দেশের বৃহত্তম আদমজী জুট মিল। শেষ পর্যন্ত বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি নন-জুট কারখানা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে। টাকার অঙ্কে তা প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি। এই অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ৭ শতাংশ।

গত অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির মধ্যে পাটসুতা থেকে (জুট ইয়ার্ন) ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ মোট রফতানির ৬৪ শতাংশই এসেছে পাটসুতা থেকে। কাঁচাপাট রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ডলার। এই অংক পাট খাতের মোট রফতানির ১৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে কাঁচাপাট রফতানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রফতানি হয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের। আয় বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। এছাড়া পাটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়েছে ১৯ কোটি ডলারের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ