পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইনকিলাবকে অভিনন্দন
বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পত্রিকার সকল পাঠক, সাংবাদিক এবং পত্রিকার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রতি আমার শুভেচ্ছা থাকলো; অভিনন্দন জানাই। ৩৫ বছর শেষ করে, ৩৬ বছরে পা দিচ্ছে ইনকিলাব। বাংলাদেশে বিভিন্ন পত্রিকা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করার রেওয়াজ আছে। করোনাকালে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে উপযুক্ত অনুষ্ঠান করা কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা একটা মর্যাদাপূর্ণ ব্যাপার যে, দৈনিক ইনকিলাব নিজেদের মালিকানাধীন ভবন থেকে প্রকাশিত হয় এবং সাড়ে তিন দশক ধরে অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। অনস্বীকার্য যে, ইনকিলাবের তিন দশক আগের সার্কুলেশন বা সৌন্দর্য বা মহিমা এখন পুরোপুরি বিদ্যমান নেই। বিভিন্ন বৈরীতার কারণে, ইনকিলাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একটি শব্দ : ‘ইনকিলাব’ প্রসঙ্গে আলোচনা
দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় বিভিন্ন উপলক্ষে কলাম লিখেছি; কিন্তু কোনো কলামেই ইনকিলাব শব্দটিকে নিয়ে কিছু বলিনি। অর্থাৎ ইনকিলাব শব্দটির তাৎপর্য এবং দৈনিক ইনকিলাব নামক পত্রিকাটির ভূমিকার মধ্যে কতটুকু সম্পর্ক আছে বা সম্পর্ক নেই, সে প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আজকে ওই প্রসঙ্গে কিঞ্চিত আলোচনা করবো। ১৯১৮ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছিল এবং তার অব্যবহিত পরে বিলুপ্ত হয়েছিল সাতশো বছর বয়সি অটোমান সাম্রাজ্য তথা ওসমানীয়া খেলাফত। এই অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল তুরস্ক। বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মুসলমানগণের সঙ্গে সমতালে, তৎকালীন ভারতের শিক্ষিত রাজনৈতিকভাবে সচেতন মুসলমান রাজনৈতিক নেতৃবর্গও, তুরস্কভিত্তিক খেলাফতকে বাঁচানোর জন্য সাংগঠনিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মিত্র শক্তির দুইটি প্রধান দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্স ওসমানীয়া খেলাফতকে ভেঙে ফেলার জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যকে নিজেদের কব্জায় নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর, মাওলানা শওকত আলী এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (তথা আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ) নামক তিনজন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা এই আন্দোলনের প্রধান সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত খেলাফত আন্দোলন টিকেছিল। এই আন্দোলন যদিও ওসমানীয় খেলাফতকে বাঁচাতে পারেনি, কিন্তু তৎকালীন ভারতের শিক্ষিত মুসলিম সমাজকে যথাসম্ভব রাজনৈতিকভাবে সচেতন করতে পেরেছিল। ওই সময়ের খেলাফত আন্দোলন, পরিস্থিতিগতভাবেই বৃটিশবিরোধী ছিল। ওই সময়কার ভারত ছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। সমসাময়িক ভারতের আরেকটি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নাম ছিল ‘নন কো-ওপারেশন মুভমেন্ট’ তথা অসহযোগ আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলন ছিল একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশলগত কর্মসূচী। উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বৃটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগিতা প্রদান করে ওই সরকারের পক্ষে দেশ শাসনের কর্মটি কঠিন করে তোলা। অসহযোগ আন্দোলনের তুঙ্গ ছিল ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল। কিন্তু ভারত নামক একটি বিরাট দেশব্যাপী একটি আন্দোলনকে সবখানে শান্তিপূর্ণ রাখা কঠিন কাজ ছিল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না চাইলেও বিভিন্ন স্থানে অশান্তিপূর্ণ ঘটনা ঘটতে থাকে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অশান্তি
১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ছউড়ি-ছউড়া নামক স্থানে পুলিশ একটি শান্তিপূর্ণ কৃষক মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলি চালানোর কারণে কয়েকজন কৃষক মারা যায়। কৃষকগণ এবং এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়। তারা ছউড়ি-ছউড়া থানা আক্রমণ করে এবং থানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এই আক্রমণের ফলে, ২২ জন পুলিশ জীবন্ত দগ্ধ হয়। এই ঘটনায় অসহযোগ আন্দোলনের প্রধানতম নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করেন। স্থগিত করার আগে গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস-এর শীর্ষ কোনো নেতা বা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কারো সঙ্গে পরামর্শ করেননি। এর ফলে মহাত্মা গান্ধীর সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়।
গান্ধির সঙ্গে বিরোধ ও বিপ্লবী দল গঠন
গয়া শহরে, ১৯২২ সালে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামক দলটির কংগ্রেসে দলের নেতৃত্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপের বক্তব্য ছিল গান্ধীর সঙ্গে থাকো, উদার নীতি অবলম্বন করো। আরেকটি গ্রুপের বক্তব্য ছিল গান্ধীর সঙ্গ ত্যাগ করো এবং ‘রিভোলিউশন’ বা বিপ্লবের পথে আগাও। ১৯২৩ সালের জানুয়ারি মাসে উদারপন্থীগণ মতিলাল নেহেরু এবং চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে নতুন একটি দল গঠন করে, যার নাম ছিল ‘স্বরাজ পার্টি’। একই সময়ে, তরুণ বিপ্লবপন্থী নেতাগণ, একটি বিপ্লবী দল গঠন করে, যার নাম স্থির হয়েছিল হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশন, যার নেতৃত্বে ছিলেন লালা হরদয়াল, বিসমিল, সচিন্দ্রনাথ স্যানাল, যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি এবং ডাক্তার জাদুগোপাল মুখার্জী প্রমুখ। পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে এই দলটির সংশোধিত নাম হয়েছিল হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান এসোসিয়েশন। এই বিপ্লবী দলটি নিজেদের কর্মীদের শারীরিকভাবে দক্ষ ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল; এই কাজগুলো সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য, অনুশীলন সমিতি গঠন করা হয়েছিল। এই দলটি বিশ্বাস করতো, বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে, বিপ্লব করতে হবে, শক্তি প্রয়োগে তাদেরকে উৎখাত করতে হবে। দলটির প্রত্যক্ষ সদস্য না হলেও অনেক তরুণ দলটির চিন্তাধারার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছিল। ওই রূপ ব্যক্তিদের মধ্যে চারটি নাম হলো সুভাষ চন্দ্র বোস (যাঁকে আমরা নেতাজি সুভাষ বোস বলে চিনি), আশফাক উল্লাহ খান, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং ভগৎ সিং। এই দলটির প্রশিক্ষিত কর্মীগণ স্থানীয়ভাবে বোমা বানাতো। তৎকালীন কলকাতা মহানগরীর দক্ষিনেশ্বর এবং শোভাবাজার, তৎকালীন বিহারের দেওঘরে তারা বোমা বানানোর কারখানা স্থাপন করেছিল। ১৯২৫ এবং ১৯২৭ সালে তাদের কারখানাগুলো পুলিশ আবিষ্কার করে ফেলেছিল। এই বিপ্লবী দলটির বিপ্লবী চিন্তাধারা, বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতার চিন্তা তরুণ স¤প্রদায়কে তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রভাবান্বিত করেছিল। আমরা যেমন শব্দ ব্যবহার করছি বিপ্লব, তখন ওই বিপ্লবী দলটি ব্যবহার করতো যেই শব্দ, সেই শব্দটি ছিল ‘ইনকিলাব’। বিপ্লবী দলটির অন্যতম তরুণ সমর্থক ও সংগঠক ভগৎ সিং এই শব্দটি বেশি ব্যবহার করতেন এবং প্রচার করতেন।
ভগৎ সিং এর বিপ্লবী কর্ম
বর্তমানে পাঞ্জাব নামক প্রদেশ আছে দুইটি; একটি পাকিস্তানে একটি ভারতে। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টের আগে বৃটিশ-ভারতের অন্যতম শক্তিশালী ও প্রখ্যাত একক প্রদেশ ছিল পাঞ্জাব। পাঞ্জাবের অধিবাসীগণ হলেন পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবী শিখ ধর্মাবলম্বী ‘জাঠ’ স¤প্রদায়ভুক্ত একটি পরিবারে ১৯০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জনৈক ভগৎ সিং। কট্টর বিপ্লবী চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন ভগৎ সিং। এক পর্যায়ে হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিকান এসোসিয়েশন নামক বিপ্লবী দলটির অন্যতম নেতা লালা রাজপথ রায়-কে বৃটিশ পুলিশ হত্যা করে। ভগৎ সিং এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে প্রতিজ্ঞা করেন। কথা অনুযায়ী কাজও করেন। তিনি জন সনডার্স নামক জনৈক বৃটিশ পুলিশ অফিসারকে হত্যা করেন। কিছুদিন পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে থাকেন। অতঃপর দিল্লী মহানগরীতে তৎকালীন বৃটিশ ভারতের সেন্ট্রাল লেজিজলেটিভ এসেম্বলী বা কেন্দ্রীয় আইন সভা বিল্ডিংয়ের ভেতরে বোমা ছুড়ে দেন এবং দলীয় লিফলেট ছড়িয়ে দেন। এই কাজ করার পরপরই তিনি স্ব-ইচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা দেন। দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। অতঃপর চূড়ান্ত বিচারে তার ফাঁসি হয়। তখন তার বয়স ছিল ২৩ বছর। ফাঁসির আগে, ভগৎ সিংয়ের সর্বশেষ উক্তি ছিল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’ ইনকিলাব জিন্দাবাদ ফার্সি ভাষা থেকে হিন্দি ভাষায় আসা শব্দযুগল, যেটাকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা যায় এইরূপ: লং লিভ রিভোলিউশন; এবং বাংলায় অনুবাদ করা যায় এইরূপ: বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
ইনকিলাব শব্দ ও ইনকিলাব পত্রিকা
আমি ইচ্ছাকৃতভাবে ইনকিলাব শব্দটির পরিচিতি বৃত্তান্ত তুলে ধরলাম। কারণ এই কলামটি প্রকাশিত হচ্ছে, ঢাকা মহানগর থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ইনকিলাব-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে। ইনকিলাব নামক পত্রিকাটি গত শতাব্দির আশির দশকে মাঝামাঝিতে যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতাগণ কী চেয়েছিলেন, আমি সেই প্রসঙ্গে গভীর গবেষণা করিনি। কিন্তু যেহেতু প্রতিষ্ঠাতাগণ পত্রিকার নাম ইনকিলাব বেছে নিয়েছিলেন, সেহেতু অনুমান করতেই পারি যে, তারা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারা মানুষের আচার-আচরণে গুণগত পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারা মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্যের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ইনকিলাব পত্রিকার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মূল্যায়ন করতে পারবেন, তাদের জন্মলগ্নের সময় থেকে আজ অবধি, বাংলাদেশের সমাজ এবং মানুষের ভাগ্য কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে বা হয়নি। ইনকিলাব নিশ্চয়ই নিজের কর্মকান্ডের মূল্যায়ন ও আত্মসমালোচনা করবে এটা আবিষ্কার করার জন্য যে, পরিবর্তনে তাদের অবদান কী?
পরিবর্তনে, ইনকিলাবের অবদান
পরিবর্তনে অবদান অবশ্যই আছে। মিডিয়ার গুরুত্ব, মানব ইতিহাসের যে কোনো সময়ের তুলনায়, বর্তমান সময়ে সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে, একের উপর অপরের এবং সাধারণ জাগণের উপরে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য, প্রতিযোগিতামূলক সংগ্রাম চলছে। একদিকে ইলেকট্রনিক মিডিয়া অপরদিকে মুদ্রণ মিডিয়া; সাদামাটা ভাষায় একদিকে টেলিভিশন আরেকদিকে কাগজে ছাপানো পত্রিকা। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে, মুদ্রণ মিডিয়া প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ঐরকম কোনো ল²ণ দেখা যায়নি। বাংলাদেশের মুদ্রণ মিডিয়া বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনে ও মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য পরিবর্তনে অবদান রেখেই চলেছে। এর মধ্যে ইনকিলাবের নিজস্ব শেয়ারও আছে। বাংলাদেশ এখন আদর্শগতভাবে একটি রোড জাংশন বা সড়ক সংযোগে দাঁড়িয়ে। উদাহরণটি অন্যরকমভাবেও দেওয়া যায়। মনে করুন, রোড জাংশনে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি চারটি রাস্তার কোনো একটি রাস্তা দিয়ে আগাবেন। প্রত্যেক রাস্তাতেই বেশ কিছু লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে, ওই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে স্বাগতম জানানোর জন্য। চারটি রাস্তার প্রত্যেকটিতে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো শ্লোগান দিয়ে চিৎকার করে ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে এবং ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটির মন ও চিন্তার উপর প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। প্রত্যেকটি দল কামনা করছে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেন তাদের সড়কে আসে। চারটি সড়কের মধ্যে দু’টি সড়ক বিপরীতমুখী যথা উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম। দুইটি সড়ক পরস্পরের পরিপূরক যথা উত্তরগামী ও পূর্বগামী সড়ক অথবা, পূর্বগামী ও দক্ষিণগামী সড়ক অথবা, দক্ষিণগামী ও পশ্চিমগামী সড়ক অথবা, পশ্চিম বা উত্তরগামী সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তিনি কোন সড়ক দিয়ে হাঁটবেন।
পাঁচটি রাস্তা বা বিকল্প সড়ক
বাংলাদেশের জন্য রাস্তাগুলো হলো (এক) উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পরিপূরক সড়ক অথবা, গণতন্ত্র ব্যতিত শুধুমাত্র উন্নয়নের সড়ক। উল্লেখ্য যে, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে তত্ত¡ ও অভ্যাসগুলো সেগুলো হলো সততা বা অসততা, নীতি বা দুর্নীতি এবং সংযম অথবা লুটপাট। (দুই) মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যথাসম্ভব সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে বাকি বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন অথবা, মুসলিম বিশ্বকে অবহেলা করে বাকি বিশ্বের সঙ্গে দহররম-মহররম করা। (তিন) বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক প্রতিবেশীদেরকে প্রাধান্য দিয়ে বাকি বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অথবা, প্রতিবেশীদেরকে অবহেলা করে বাকি বিশ্বের সঙ্গে দহররম-মহররম করা। (চার) শিক্ষানীতি, সমাজনীতি অর্থনীতি ইত্যাদিতে ধর্মীয় মূল্যবোধের উপস্থিতি রাখা অথবা, ধর্মীয় মূল্যবোধের উপস্থিতি না রাখা। ধর্মীয় মূল্যবোধ-এর সাথে সম্পর্ক নৈতিকতা, সামাজিক আচার-আদব। (পাঁচ) দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কি বাকশালীয় তথা একদলীয় তথা সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির মডেলটি আনায়নের জন্য চেষ্টা শুরু করা হবে নাকি বহুদলীয় উন্মুক্ত গণতন্ত্রের মডেল, যেটি চালু আছে, সেটিই জোরদার করা হবে। বাংলাদেশ কোন রাস্তাটা বেছে নেবে সেটা নির্ভর করছে নীতি নির্ধারক মহলের ওপর। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকের প্রধান ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন চলমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নীতি নির্ধারক মহল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে জনগণের মতামত মূল্যায়ন করবেন। নীতি নির্ধারক মহলের নিকট জনগণের মতামত উপস্থাপন করা বা জনগণের মতামত গঠনে ভূমিকা রাখার কাজটিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মিডিয়া।
মিডিয়া তথা ইনকিলাবের ভূমিকা
বাংলাদেশে বিদ্যামান মিডিয়ার অন্যতম অংশ দৈনিক ইনকিলাব। দৈনিক ইনকিলাব বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মতামতকে গঠনমূলকভাবে উপস্থাপন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠনের প্রসঙ্গে, ধর্মীয় মূল্যবোধকে উজ্জ্বল রাখার চেষ্টায়, সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক গঠন প্রসঙ্গে দৈনিক ইনকিলাব প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেই আসছে। দৈনিক ইনকিলাব নতুন কোনো ইনকিলাবের জন্ম দিয়েছে কি দেয়নি সেটা যেমন আলোচনাযোগ্য একটি প্রশ্ন, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, দেশ ও সমাজে বিদ্যমান ইতিবাচকতাকে রক্ষা করার জন্য ভূমিকা রাখা। আমরা আশা করি, দৈনিক ইনকিলাব বিদ্যমান ইতিবাচকতা রক্ষায় আরও আগ্রহী ও অধিকতর গঠনমূলক ভূমিকা রাখতেই থাকবে। কাগজ বা কালি তো কথা বলে না; লেখক-সাংবাদিকদের চিন্তা ও কথা কালো রঙের অক্ষরে মুদ্রিত হয়। তাই সাংবাদিক ভাইদের প্রতি যুগপৎ অভিনন্দন ও উৎসাহ।
উপসংহার
ইনকিলাব নামক পত্রিকাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অনেক বিষয়ে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সাড়ে তিন দশক সময় পার করলো। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে। আবার, বাংলাদেশের মানুষ তথা বিশেষত মুসলমানগণ এবং তারও মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, পীর-মাশায়েখগণ, আলেম-ওলামাগণ, সরকারি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রগণ ইনকিলাব থেকে কী আশা করে, সেটা সততার সঙ্গে মূল্যায়ন করে পদক্ষেপ নিতে হবে। পত্রিকার ছাপার অক্ষরের ও কাগজের গুণগত মান, সংবাদ পরিবেশনের গুণগত মান, কলামগুলোর গুণগত মান, পত্রিকা বিতরণের গুণগত মান ইত্যাদিকে সময়োপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।