পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইসরাইলী আগ্রাসনে গাজা নগরীর বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। রমজানের শুরুতে আল আকসা মসজিদের দামেস্ক গেইট বন্ধ করে দেয়া, পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জারাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা এবং আল আকসা মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের উপর পুলিশি হামলার পর প্রতিবাদী ফিলিস্তিনীদের কণ্ঠ রুখে দিতে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। ১০ দিনের হামলায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ২৩০জন ফিলিস্তিনীর প্রাণহানি এবং দেড় হাজারের বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে বিক্ষোভরত নাগরিকদের উপর ইহুদি পুলিশের হামলায় অন্তত ৩জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। হামাসশাসিত গাজা শহরকে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইলী বাহিনী। গাজার সব প্রবেশপথ স্থল এবং আকাশ সীমান্ত ইসরাইলী অবরোধের শিকার। এহেন বাস্তবতায় ফিলিস্তিনী বিক্ষোভকারীদের দমনের নামে বেপরোয় বোমা হামলার জবাবে ইসরাইলী শহরগুলোতে হামাসের রকেট বর্ষণও অব্যাহত রয়েছে। তবে ইসরাইলী বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় হামাসের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশু। শত শত বাড়িঘর ধ্বংস ও অর্ধলক্ষ বাস্তুচ্যুত মানুষের আর্তচিৎকারে গাজার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ইসরাইলী বিমান হামলায় সেখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, ওয়াটার প্লান্ট, হাসপাতাল, খাদ্যগুদামসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনী মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
ঘরবাড়ি ও স্বজনহারা হাজার হাজার ফিলিস্তিনী বিভিন্ন বেসরকারী ভবন এবং জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল ও হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে। রিফিউজি ক্যাম্পে বোমা হামলার কারণে এখনো বহু ফিলিস্তিনী আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের আশ্রয়, খাদ্য, পরিধেয়, ওষুধ এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে জায়নবাদী কষাই নেতানিয়াহু’র নির্দেশে ইসরাইলী বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। হতাহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তীব্রতর হচ্ছে আর্তমানবতার হাহাকার। যুদ্ধবিদ্ধস্ত মানুষের চিকিৎসা, খাদ্য ও রসদের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় ফিলিস্তিনীদের প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের সংহতি ও সমর্থ প্রকাশই যথেষ্ট নয়। ইসরাইলীদের অবরোধ ও সীমান্ত বন্ধ করে মানবিক সহায়তা বন্ধের মাধ্যমে লাখ লাখ ফিলিস্তিনীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার জায়নবাদী দূরভিসন্ধির বিপরীতে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌছে দেয়াই এই মুহূূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধ ও বিমান হামলা বন্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দিয়ে ভন্ডুল করে দিয়ে জো বাইডেন যুদ্ধ বিরতির আহবান জানিয়েছেন। নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, তার হুঙ্কার থেকে বুঝা যায়, তিনি ফিলিস্তিনীদের প্রতিবাদী কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চান। উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনীদের উপর বার বার বোমা হামলা চালিয়ে তিহাত্তর বছরেও তাদের প্রতিরোধ শক্তি দমিয়ে দিতে পারেনি। এখনো পারবে না। হামাস-হিজবুল্লাহ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতিরোধ শক্তি নিয়ে ইসরাইলী শহরগুলোতে পাল্টা আঘাত করে চলেছে।
কিছু চিহ্নিত ব্যতিক্রম বাদ দিলে, ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দায় সারাবিশ্ব যেন একাট্টা। বিশ্বের দেশে দেশে জায়নবাদ বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। তবে এই মুহূর্তে রাজপথে প্রতিবাদের পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন ফিলিস্তিনী মা-শিশু ও অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপণ্যের রসদ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ২০১৪ সালে প্রায় ২ মাসব্যাপী ইসরাইলী বিমান হামলায় গাজায় হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছিল, দুই হাজারের বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনীকে হত্যা করা হয়েছিল। এবারের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ যুদ্ধের চিত্রগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সংহতি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে ক্রমে উজ্জ্বল করে তুললেও ফিলিস্তিনে ইসরাইলী ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ এবং মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন, নিরাপত্তাহীন ফিলিস্তিনীদের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সাহায্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনীদের প্রতি সংহতি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দল ও ওলামা মাশায়েখদের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে হামলা বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং স্বে”্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় ফান্ড গঠনের মানবিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরীর আহবানে সাড়া দিয়ে অসংখ্য সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় টাকা পাঠাচ্ছেন বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়। দেশের বিত্তবানরা নিজ নিজ উদ্যোগে ফিলিস্তিনের মানবিক বিপর্যয় ও আল আকসা মুক্তির আন্দোলনে শরিক হবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। ইসরাইলী বোমায় রক্তাক্ত শিশু নাদিন আবদেল তাইফের আর্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে বিশ্বমানবতার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। এমন হাজারো শিশু মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মানবিক সহায়তার জন্য হাহাকার করছে। আমরা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে সাহায্যের হাত বাড়াতে ব্যর্থ হই। একদিন নিশ্চয়ই আমাদের বিবেকের এবং শেষবিচারের কাঠগড়ায় অপরাধী হয়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আসুন, আমরা দলমত নির্বিশেষে ফিলিস্তিনী অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।