নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
একটা ট্রফির জন্য তৃষিত অপেক্ষা ছিল বার্সেলোনার, অপেক্ষা ছিল রোনাল্ড কোমানের। সেটা অবশেষে এলো সেভিয়ার মাঠে। কোপা দেল রের ফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে ৪-০ গোলে উড়িয়েই মৌসুমের প্রথম ট্রফির স্বাদ পেয়েছে বার্সা। প্রায় একতরফা ম্যাচে ৬০ থেকে ৭২ এই মাত্র ১২ মিনিটের ব্যবধানে গ্রিজমান, ফ্রাংকি ডি ইয়ং ও মেসির জোড়া গোল নিশ্চিত হয়েছে জয়। ম্যাচ শেষে কোমানের প্রথম ট্রফি উদযাপন করেছে নেচে গেয়েই।
চলতি মৌসুমে বার্সাকে শিরোপা এনে দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম খেলোয়াড় হিসেবে কাতালান জায়ান্টদের হয়ে ৩৫তম ও ক্যারিয়ারের ৩৭তম শিরোপা জিতলেন মেসি। এটি তার সপ্তম কোপা দেল রে শিরোপাও। গত জানুয়ারিতে স্প্যানিশ কাপ জিতলে এই মাইলফলকে আগেই পা রাখতে পারতেন তিনি। কিন্তু সেবার বার্সা হেরে যায় বিলবাওয়ের বিপক্ষে। এবার কোপা দেল রে’তে যেন তারই প্রতিশোধ নিলেন কোমানের দল।
ক্যারিয়ারের ৩৭তম শিরোপা জিতে ক্যাম্প ন্যুয়ের সাবেক দুই সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ম্যাক্সওয়েলকে ছুঁয়ে ফেলেছেন মেসি। অন্যদিকে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৪২ শিরোপা নিয়ে সবার শীর্ষে এলএমটেন’র আরেক সাবেক বার্সা সতীর্থ দানি আলভেজ। ক্যারিয়ারে ৩৬টি শিরোপা জিতে পাঁচে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রায়ান গিগস। ছয়ে থাকা স্যার কেনি ডালগিøশ ও জেরার্ড পিকে জিতেছেন ৩৫টি শিরোপা। ৩৪ শিরোপা নিয়ে আটে ভিতর বাইয়া। ৩৩টি করে শিরোপা নিয়ে ৯ নম্বরে চেয়ার ভাগাভাগি করছেন জাভি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
এই শিরোপাই আগেও জিতেছেন ছয়বার। তবে এবারেরটি মেসির কাছে হয়ে উঠেছে ‘খুব স্পেশাল’। কারণটাও জানালেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড; অধিনায়ক হিসেবে যে এই প্রতিযোগিতায় এটিই তার প্রথম শিরোপা। সেভিয়ার লা কার্তুসা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে বার্সা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একটু বেশিই উচ্ছ¡সিত মেসিকে দেখা গেল, ‘এই ক্লাবের অধিনায়ক হতে পারা বিশেষ কিছু। এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল কোপা, কারণ আমি নিজেই এটা উঁচিয়ে ধরতে পেরেছি। সমর্থকদের সামনে এই জয় উদযাপন করতে না পারাটা কষ্টের। পরিস্থিতিটাই এরকম এবং আমাদের এভাবেই বাঁচতে হবে।’
মন রাঙানোর মতো খেলা খেললেও এই মৌসুমে একটা জায়গায় গিয়ে মার খেয়ে যাচ্ছিল কোমানের বার্সা। লিগে এখনো তারা লড়াইয়ে আছে, ডিসেম্বরের পর ফর্মও দুর্দান্ত। কিন্তু বড় ম্যাচে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছিল বার বার। দুই ক্লাসিকোতে হার, অ্যাটলেটিকোর কাছে আরেকটি, এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির কাছে, সুপার কাপে সেভিয়ার কাছে... বার্সার কাছে এই মৌসুমে বড় ম্যাচ ছিল একটা ধাঁধাঁর নাম। সেটার সমাধান হলো কোপা দেল রের ফাইনালে।
আর কোচ রোনাল্ড কোমানের অনুভূতিটা কেমন? নিজেই বলেছেন, ‘চমৎকার।’ বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথম ট্রফি জেতার পর ক্লাবটির ভক্ত-সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতেও ভোলেননি তিনি, ‘বার্সেলোনার ভক্ত-সমর্থকদের জন্য এটি আনন্দের দিন। এই সাফল্য আমাদের প্রাপ্য ছিল। এটা চমৎকার একটা অনুভ‚তি।’ পাশাপাশি স্প্যানিশ লা লিগায় চ্যাম্পিয়ন হতে শেষতক চেষ্টা করার হুঙ্কার দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের সাবেক এই তারকা ফুটবলার, ‘ফাইনালে উঠতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমরা খুবই খুশি এবং আমাদের ক্লাব যোগ্য দল হিসেবে জিতেছে।’ লিগ শিরোপার জন্য অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে লড়ছে বার্সা। নেদারল্যান্ডসের সাবেক এই তারকা ফুটবলার এবার পাখির চোখ করেছেন ২০১৯-২০ মৌসুমে স্পেনের সেরা ক্লাব হতে, ‘আমরা ক্ষুধার্ত। আমাদের ঝুলিতে যেহেতু একটি ট্রফি আছে, এখন আমরা আরেকটির জন্য ছুটব। আমরা লা লিগার শিরোপা জেতার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করব।’
ম্যাচটা দেখতে মাঠে ছিলেন নতুন সভাপতি হুয়ান লাপোর্ত। ছিলেন ২০১৫ সালে বার্সাকে এই ট্রফি এনে দেওয়া ম্যানেজার লুইস এনরিক। তাদের সামনে মন রাঙানোর মতোই খেলেছে বার্সা। ৪-০ গোলের স্কোরলাইন আসলে পুরো গল্পটাও বলছে না। সহজ কিছু সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আর বিলবাও গোলরক্ষক অতিমানবীয় কিছু সেভ না করলে অনায়াসেই হাফ ডজন গোল ঢুকতে পারতো বিলবাওয়ের জালে।
ম্যাচ শুরু হতে না হতেই প্রথম গোলটা পেয়ে যেতে পারত বার্সা। সম্ভবত ম্যাচের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়া ডি ইয়ং সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিলেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই। মেসির লে অফ থেকে বক্সের ভেতর ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন ডাচ মিডফিল্ডার, কিন্তু তার শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। মিনিট দশেক পর গ্রিজমানের পাস থেকে মেসি আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। এর মধ্যে অবশ্য বিলবাও একটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু সেট পিস থেকে পা ছুঁইয়েও গোল করা হয়নি তাদের।
তবে বার্সার কাছেই ছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। একের পর আক্রমণে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল বিলবাও রক্ষণকে। কিন্তু গোল করার সুযোগটা আর পাচ্ছিল না। প্রথমার্ধ শেষ হলো কোনো গোল ছাড়াই। মনে হচ্ছিল হয়তো দ্বিতীয়ার্ধে দেম্বেলেকে নামাতে হতে পারে কোমানের, ৩-৫-২ ফর্মেশনে পরিবর্তন আনতে হতে পারে। অনেক দিন পর মাঠে ফিরে পিকেকে সেরকম কঠিন পরীক্ষায়ও পরতে হয়নি। একবার ইনাকি উইলিয়ামস সুযোগ পেয়েছিলেন, কাজে লাগাতে পারেননি।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধেই বদলে যায় সব। শুরুটা ৬০ মিনিতে, ডি ইয়ং এর ক্রস থেকে গ্রিজমান ট্যাপ ইন করে এগিয়ে দেন দলকে। মিনিট খানেক পর এবার ডি ইয়ং নিজেই গোল করেন। আলবার ক্রস থেকে হেড করে এগিয়ে দেন দলকে। এরপরেই ম্যাচের সেরা গোলটা পেয়ে যায় বার্সা। ডি ইয়ং এর সাথে দুর্দান্ত ওয়ান টু ওয়ানের পর মেসি বক্সে জায়গা করে নেন, বাঁ পায়ের শটে বল জড়িয়ে দেন জালে। এরর আলবার পাস থেকে মেসি করেন আরেকটি, বার্সার গত কিছুদিনের সবচেয়ে ট্রেডমার্ক গোলগুলোর একটি। বাঁ পায়ের প্লেসিং শট হাত লাগিয়েও ঠেকাতে পারেননি সিমন। এরপর গ্রিজমানের একটা গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডে। সেটা না হলে ব্যবধান আরও বড় হতে পারত বার্সার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।