নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দেশে তেল নেই, গ্যাস নেই, বই-খাতা নেই। খাদ্য সঙ্কটে চারপাশে হাহাকার। মানবিক বিপর্যয়ে জেরবার জীবন। প্রতিটি দিন সেখানে বেঁচে থাকার নিত্য লড়াই। স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কটে শ্রীলঙ্কানদের মন থেকে হারিয়ে গেছে সুখ। তাদের মুখে নেই হাসি। দ্বীপ দেশটির মানুষের জীবন থেকে ‘সুখবর’ নামক ব্যাপারটি হারিয়ে গেছে অনেক দিন ধরে। বেঁচে থাকার দৈনন্দিন লড়াইয়ে বিনোদন সেখানে এখন চরম বিলাসিতা। তবে জীবন তো থেমে থাকে না। লড়াইয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত মন একটু শান্তির উপলক্ষ খোঁজে নানা উৎস থেকে। দেশের মানুষকে সেই স্বস্তির ছোঁয়া এনে দিয়েছে তাদের ক্রিকেট দল। উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে তারা জিতে নিয়েছে এশিয়া কাপের ট্রফি। জীবনযুদ্ধের এই কঠিন সময়ে ক্রিকেটের জয় খুব বড় কিছু নয়। তবু লঙ্কান ক্রিকেটারদের আশা, এশিয়া কাপের শিরোপা কিছুটা হলেও ভালো লাগার পরশ বুলিয়ে দেবে বিপর্যস্ত দেশবাসীর মনে।
গতপরশু রাতে দুবাইয়ে ফাইনালে তারা পাকিস্তানকে হারায় ২৩ রানে। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফেভারিটের কাতারেই রাখা হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। শুরুটাও হয়েছিল তাদের যাচ্ছেতাই। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে তারা আফগানিস্তানের কাছে ১০৫ রানে গুটিয়ে ম্যাচ হারে বাজেভাবে। সেই দলই ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ নজির গড়ে শেষ পর্যন্ত মেতে উঠল উৎসবে। টানা চার ম্যাচে তারা রান তাড়ায় হারায় বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানকে। ফাইনালেও তাদেরকে রচনা করতে হয়েছে প্রত্যাবর্তনের নতুন অধ্যায়। ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ব্যাটিং লাইন আপ। সেখান থেকে ভানুকা রাজাপাকসার দুর্দান্ত ইনিংস আর দারুণ দুটি জুটি দলকে এনে দেয় লড়ার মতো স্কোর। এরপর বোলারদের উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে বাবর আজমের দলকে আবার হারিয়ে শিরোপা জেতে দাসুন শানাকার দল।
৪৫ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলে ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ভানুকা রাজাপাকসা ম্যাচ শেষে বললেন, এই সাফল্যের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিলেন তারা, ‘আমরা সবসময় দেখাতে চেয়েছি যে আমাদের ভেতর আগ্রাসন আছে এবং আমরা আবার এই মুহূর্তগুলোর জন্ম দিতে চেয়েছি। সামনে তাকিয়ে, বিশ্বকাপের আগেও আমরা এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে চাই। দেশে যে সঙ্কট চলছে, শ্রীলঙ্কানদের জন্য সময়টা এখন খুব কঠিন। তবে আশা করি, আমরা এখন দেশের মানুষের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফোটাতে পেরেছি। এই সাফল্য গোটা জাতির জন্য, এমন কিছুর জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিল তারা।’
অধিনায়ক শানাকা বললেন, প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তারা, ‘প্রথম ম্যাচ হারার পর সিরিয়াস আলোচনা হয়েছিল আমাদের মধ্যে। আমরা জানতাম যে, প্রতিভা আমাদের যথেষ্টই আছে। কিন্তু ব্যাপারটি ছিল ম্যাচ পরিস্থিতিতে সেই প্রতিভাকে কাজে লাগানো ও সবাই মিলে নিজেদের মেলে ধরা। দল হিসেবে ও কোচিং স্টাফ থেকে আমরা যে ধরনের আবহ তৈরি করেছি, সেটিই এখানে কাজে দিয়েছে।’
দেশের চরম আর্থিক সঙ্কটের আগে থেকেই সঙ্কট চলছিল শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে। অনেক দিন থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল তারা, চেষ্টা চলছিল দল গুছিয়ে নেওয়ার, হারানো সুসময়কে ফিরিয়ে আনার। কখনও কখনও সাফল্যও এসেছে, তবে তা ধরে রাখা যায়নি। শানাকার আশা, এশিয়া কাপ জয় দিয়ে আবার তাদের ক্রিকেট ছুটবে সাফল্যের রথে। ভরসা রাখতে বললেন তিনি ক্রিকেটারদের ওপর, ‘ক্রিকেটারদের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। অনেক বাজে কিছু হচ্ছে চারপাশে। ক্রিকেটার হিসেবে ওদেরও অধিকার আছে নিজেদের জীবন উপভোগ করার। বাজে কিছু ছড়ানোর প্রয়োজন নেই। ওদেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে। বিশ্বাস রাখাটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়ক হিসেবে আমি দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাতে চেষ্টা করি, যতটা পারি। এর চেয়ে বেশি কিছু ওদের কাছে আর চাইতে পারি না। দুই-তিন বছর আগেও আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে জয় ধরা দিচ্ছিল না, সেই ব্যাপারটি ছিল। এই সাফল্য আমাদের ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আবার। এই দলের বেশির ভাগ সদস্যই আরও অন্তত ৫-৬ বছর খেলতে পারে। এটাও খুব ভালো লক্ষণ।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।