Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিন্দুদের দেবতাকে অপমান করায় কাঠগড়ায় অ্যামাজন, শিবকে ‘কন্ডোম’ পরিয়ে বিতর্কে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২২ পিএম

হিন্দুদের দেবতা ‘শিব’কে অপমান করে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার আলাদা দুটি ঘটনায় ভারতে অভিযুক্ত হয়েছেন ওয়েব সিরিজ 'তান্ডবে'র নির্মাতারা এবং কলকাতার অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। পরিচালক আলি আব্বাস জাফর অ্যামাজন প্রাইমের জন্য 'তান্ডব' নামে যে ওয়েব সিরিজটি বানিয়েছেন সেখানে হিন্দু দেবদেবীদের পোশাকে অভিনেতারা কদর্য ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন - এই অভিযোগে লখনৌর হজরতগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে একটি এফআইআর বা প্রাথমিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মিডিয়া উপদেষ্টা শলভ মণি ত্রিপাঠী সেই এফআইআরের একটি প্রতিলিপি টুইট করে জানিয়েছেন, তান্ডবের অভিযুক্ত পরিচালক ও অভিনেতাদের গ্রেপ্তার করতে রাজ্য পুলিশ মুম্বাইয়ের পথে রওনাও হয়ে গেছে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায় ভিন্ন একটি এফআইআরে অভিযোগ এনেছেন, কলকাতার অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের একটি টুইট একজন 'একনিষ্ঠ শিবভক্ত' হিসেবে তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসে চরম আঘাত হেনেছে। -বিবিসি বাংলা

দু'হাজার পনের সালে করা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের ওই টুইটে দেখা যাচ্ছে একটি শিবলিঙ্গের ছবি, যাতে কন্ডোম পরাচ্ছেন এক মহিলা। ছবিটি থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওই মহিলাকে এইডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট 'বুলাদি' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রাফিকের ভিতরে লেখা, 'বুলাদির শিবরাত্রি'। পোস্টের ক্যাপশনে ছিল, 'এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর'। এদিকে পুরনো সেই টুইট নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর সায়নী ঘোষ দাবি করেছেন, তাঁর অজান্তেই এই 'কদর্য' টুইট-টি তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছিল - এবং তিনি জানতে পারামাত্র সেটি ডিলিট করে দিয়েছিলেন। ভারতে অ্যামাজন প্রাইমের নতুন ওয়েব সিরিজ তান্ডবের নির্মাতা ও অভিনেতাদের বিরুদ্ধে এখন যে কোনও মুহুর্তে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এই সিরিজের মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে আহত করা হয়েছে, এই অভিযোগ মুম্বাই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা ও বিধায়ক রাম কদম। তাঁর সেই পদক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রণালয় অ্যামাজন প্রাইমের কাছে জবাবদিহিও তলব করে। এরপর লখনৌতে হজরতগঞ্জ পুলিশ থানায় কর্মরত একজন সাব-ইনস্পেক্টর 'তান্ডবে'র বিরুদ্ধে এফআইআর করেন সেই থানাতেই, এদিন সকালে যার প্রতিলিপি টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা শলভ মণি ত্রিপাঠী সেই সঙ্গেই লেখেন, "মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেললে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে তা কিছুতেই সহ্য করা হবে না।" "টিম তান্ডবের বিরুদ্ধে খুব গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, কারণ তারা শস্তা ওয়েব সিরিজের নামে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। গ্রেপ্তারের জন্য তৈরি হোন!" কয়েক ঘন্টা পরেই সোমবার আর একটি টুইটে তিনি অভিযুক্ত হিসেবে তান্ডবের পরিচালক আলি আব্বাস জাফর, প্রযোজক হিমাংশু মেহরা, লেখক গৌরব সোলাঙ্কি ও অভিনেতা সাইফ আলি খানের নাম করেন।

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল সড়কপথে মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদিকে কলকাতায় বিতর্ক শুরু হয়েছে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের পুরনো একটি টুইট নিয়ে, যেখানে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে শিবলিঙ্গকে কন্ডোম পরানোর ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। যদিও অনেকে বলছেন, ওই ছবি থেকে স্পষ্ট এইডসের বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযানের অংশ হিসেবেই সেটি পোস্ট করা হয়েছিল - অনেকে আবার দেবদেবীদের নিয়ে এই ধরনের 'চটুলতা ও অশ্লীলতা' মেনে নিতে পারছেন না। ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সাবেক রাজ্যপাল ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ তথাগত রায় গত শনিবার কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে লেখেন, "ওই টিভি অভিনেত্রীর করা টুইটে একজন একনিষ্ঠ শিবভক্ত হিসেবে আমার ধর্মীয় বিশ্বাস আহত হয়েছে।" পঁচিশ বছর আগে তিনি পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর পাড়ি দিয়ে শিবের পূজা দিতেও গিয়েছিলেন, এই তথ্য জানিয়ে তথাগত রায় ভারতীয় দন্ডবিধির ২৯৫এ ধারায় ওই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

২৯৫-এ ধারায় ধর্ম বা জাতপাতের ভিত্তিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছড়ানোর অভিযোগ আনা যায়। রোববার গুয়াহাটির পল্টনবাজার থানায় এবং ব্যাঙ্গালোরের আর একটি পুলিশ থানাতেও সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে এফআইআর আনা হয়েছে। ওই দুটি রাজ্যে, যথাক্রমে আসাম ও কর্নাটকে, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। টুইটারে সায়নী ঘোষ ইতিমধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছেন, "আমার নিজের ধর্মের অনুভূতিকে আঘাত করার কোনও অভিপ্রায় কখনওই আমার ছিল না। তিনি আরও দাবি করেন, বছরকয়েক আগে ওই পোস্টটি করা হয়েছিল তাঁর অগোচরে - এবং তিনি জানতে পারামাত্র সেটির নিন্দা করে তা মুছে দিয়েছিলেন এবং মানুষকেও সেটা জানিয়েছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টলিউড


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ