চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ ছয় ॥
আবার এক মাসের কম সময় সিয়াম পালন করলে ভালো ফল পাওয়া যায় না। অথচ একনাগাড়ে ৪০ দিনের বেশি সিয়াম পালন করলে তা নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়।
সমাজে এরকম একটি ধারণা রয়েছে যে, শীতকালে পানাহার থেকে বিরত থাকলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। বস্তুতপক্ষে এরকম ধারণার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। জীববিদ্যা সম্বন্ধীয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, যখন বরফ পড়তে শুরু করে তখন বন্যপ্রাণীরা বাস্তবিক পক্ষে কোনো খাদ্য খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। এ সময়ে তাঁদের অনাহারে ঘুমিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে সময় কাটাতে হয়। অথচ বসন্তে তারা নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে। বৃক্ষরাজির বেলায়ও একথা সত্য। শীতের সময়ে বৃক্ষের পত্র পল্লব পড়ে যায়। এমনকি বৃক্ষরাজিতে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকে না। গাছপালাগুলো যেন এ সময়ে ঘুমিয়ে কাটায়। এভাবে মাস কয়েক উপোষ থাকার পর বসন্তের শুরুতে তারা আবার যেন নতুন জীবন ফিরে পায়। পূর্বাপেক্ষা যেন অধিকতর সতেজ রূপ লাভ করে। এ সময়ে বৃক্ষরাজিকে দেখা যাবে নতুন পত্র পল্লবে বিকশিত ও মুকুলিত অবস্থায়। বস্তুতপক্ষে প্রাণী দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো পরিপাক যন্ত্রেরও বিশ্রাম দরকার। পানাহার থেকে বিরত থাকাই এধরনের বিশ্রামের একটি উপযুক্ত মাধ্যম। সম্প্রতি পাশ্চাত্য জগতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে। এ পন্থায় প্রধানত ক্রনিক রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীকে স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানাহার থেকে বিরত রাখা হয়।
কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে যে, “কেউ কোনো সৎ কাজ করলে সে তার দশগুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে, আর তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না” (৬ : ১৬০)। অর্থাৎ একটি ভালো কাজের জন্য আল্লাহ দশগুণ প্রতিদান দিয়ে থাকেন। রাসূল করীম (সা.)-এর একটি হাদীসের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। রাসূল (সা.) বলেছেন যে, যে রমজান মাসে এবং পরবর্তী শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি সিয়াম পালন করবে সে যেন গোটা বছরের জন্য সিয়াম পালন করল।
ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৫৫ দিনে একটি চন্দ্র বছর পূর্ণ হয়। এবং মাস গণনা করা হয় ২৯ অথবা ৩০ দিনে। সুতরাং একজন মু’মিন মুসলিম রমজান মাসের অতিরিক্ত আরো ছয়টি রোজা রাখলে মূলত সে বছরে ৩৫ অথবা ৩৬ দিন সিয়াম পালন করে এবং প্রতিদিনের জন্য দশগুণ হিসাবে সে ৩৫০ দিন অথবা ৩৬০ দিনের সওয়াব পেয়ে যায়।
সূফীয়ায়ে কিরাম লক্ষ্য করেছেন যে, মানব মনের মধ্যে পশু স্বভাবও রয়েছে। এ স্বভাব মানুষের আত্মিক উন্নতির পথে বাধার সৃষ্টি করে। দেহকে আত্মার নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দৈহিক প্রেরণাকে সংযত করতে হয়। সমৃদ্ধ করতে হয় আত্মিক শক্তিকে। লক্ষ্য করা গেছে যে, দৈহিক প্রেরণাকে সংযত করতে হলে একদিকে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য ও বিপুল তাড়নাকে পরিহার করতে হয়। অপরদিকে জিহ্বা ও মনের চাহিদা এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এভাবে দৈহিক প্রেরণাকে যত সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, অন্য কোনোভাবে তা সম্ভব নয়। মানুষ যখন তার পশু স্বভাবের উপর আত্মিক ও বিবেকের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে তখনই সে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। পশু স্বভাব কখনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও আত্মসংযমের মাধ্যমে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। সে কারণেই সিয়ামের মতো। কঠোর সংযম সাধনার মাধ্যমে সে পশু স্বভাবকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করে।
কেউ যদি কোনো অন্যায় বা পাপকর্ম করে ফেলে তা হলেও সে সিয়াম পালন করে অনুশোচনা করবে ও অনুতপ্ত হবে। সে তার রিপুকে দমন করতে সচেষ্ট হবে। এভাবেই সে প্রশান্তি পাবে। পরিশুদ্ধ হবে তার অন্তর। এমনকি একপর্যায়ে তার ইচ্ছাশক্তি তার নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। তখন সে পুনর্বার অন্যায় অপকর্ম করা থেকে বিরত থাকবে। পূর্বে আরো বলা হয়েছে যে, ফেরেশতাদের পানাহার করতে হয় না। এটা তাদের বৈশিষ্ট্য। সিয়ামের মাধ্যমে পানাহারকে সংযত করে মানুষ ক্রমান্বয়ে ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্যকেই গ্রহণ করে। বস্তুতপক্ষে সমস্ত কাজকর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ মূলত আল্লাহর আদেশ-নির্দেশগুলোকে মেনে চলার চেষ্টা করে। এক সময় তাতে সে সফলও হয়। তখন যে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।