Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব

সাইফুল্লাহ ইবনে ইব্রাহিম | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

অন্যান্য সৃষ্টির মতো ভাষাও আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষাভাষী মানুষ রয়েছেন। একাধিক তথ্যমতে পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি ভাষা রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে মাত্র তেইশটি ভাষায় পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কথা বলেন। ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ তার জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে শুনে শুনে যে ভাষা শেখে, যে ভাষায় কথা বলে বলে অভ্যস্ত হয়ে বেড়ে ওঠে, যে অর্থবোধক ভাষা হয় তার জীনের প্রথম ভাষা, সে ভাষাকেই বলা হয় তার মাতৃভাষা। মানুষ স্বাভাবিকই তার মাতৃভাষায় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বলতে ও লিখতে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সে ভাষাটিই হয়ে ওঠে মানুষের নিজস্ব ভাষা। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা যত নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। এ সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা: ইবরাহিম আয়াত: ৪) তাঁরা দুনিয়াতে এসে মানুষদেরকে মাতৃভাষায় দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের প্রতি নাজিলকৃত আসমানি কিতাবসমূহও তাঁদের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ করেছেন। তাঁরা তাঁদের মাতৃভাষায় সেগুলোকে প্রচার করতেন। যেমন—মুসা (আ.) এর উপর তাওরাত ইবরানি ভাষায় নাজিল হয়েছে। দাউদ (আ.) এর উপর যাবুর কিতার ইউনানি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। ইসা (আ.) এর প্রতি ইঞ্জিল কিতাব সুরিয়ানি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবি হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরিত হন। তিনিই সর্বশেষ রাসুল। তিনি আরবিভাষী ছিলেন। তাঁর প্রতি কুরআনে কারিম আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। আর আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে বলেন, ‘এটি আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ২) এ ছাড়াও যুগে যুগে আমরা দেখতে পাই, বহু প্রসিদ্ধ দায়িত্ব দীনের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে একাধিক ভাষা রপ্ত করেন, যেন ভিন্নভাষী মানুষদের তাদের মাতৃভাষায় দাওয়াত দিতে পারেন এবং সহজেই তারা দীনকে বুঝতে পারে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আর তাই আমাদেরও উচিত হবে, একাধিক ভাষা রপ্ত করতে পারি আর না পারি, ন্যূনতম নিজের ভাষাকে বিশুদ্ধভাবে শেখা। মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা করে নিজের বলা ও লিখার ভাষাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা। কেননা, মানুষ সৌন্দর্যকে পছন্দ করে। তাছাড়া প্রায় প্রত্যেক ভাষাই দুটো রূপে প্রচলিত থাকে। ১. বিশুদ্ধ ২. আঞ্চলিক। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে সবাই বুঝতে পারে না। এক অঞ্চলের ভাষা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। তাই বিশুদ্ধ ভাষা শিক্ষা করা জরুরি। আমাদের নবি (সা.) বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। সম্প্রতি বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক জনাব মুহম্মদ নূরুল হূদা ‘ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন’ আয়োজিত একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবার সময় বলেন, বাংলা ভাষা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ তম শীর্ষস্থানীয় ভাষা। ইন্টারনেট ঘেঁটেও ‘উইকিপিডিয়া’র তথ্যে এমনটিই (৫ম) পাওয়া যায়। তাছাড়া বাংলাভাষা এমন একটি ভাষা, যে ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠির একটি স্বাধীন রাষ্ট্রও আছে, আর সেটিই আমাদের এই ‘বাংলাদেশ।’ এভাবে কোনো ভাষাকে কেন্দ্র করে কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে, বিশ্বে এমন নজির আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা জানা নেই। নিঃসন্দেহে এ ভাষা পৃথিবীর অন্যতম একটি শক্তিশালী ভাষা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ এ ভাষার আরও বহু কীর্তিগুণ আছে। এ ভাষা সহজে বিলীন হবার নয়। সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি যে, আমরা যদি শুধু আমাদের মাতৃভাষাকেই বিশুদ্ধভাবে চর্চা করি, তাহলেই পৃথিবীর কত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে এ ভাষায় ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো সম্ভব। তাই মাতৃভাষাকে অবহেলা নয়; আসুন, আমরা মাতৃভাষাকে বিশুদ্ধভাবে শিখি। নিজের ভাষাকে সাহিত্য ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করি। নিজস্ব ভাষায় বিশ্বজুড়ে ইসলাম প্রচারে অংশ নিয়ে পরকালের পাথেয় উপার্জন করি। আল্লাহ তয়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ