Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্মের অনুসরণেই জীবনের প্রশান্তি

প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

॥ দুই ॥
মূল হলো তার মুখ। অন্য কথায় চির অসহায়ের মতো গাছপালা যেন চিরদিনের জন্য ভূতলশায়ী হয়ে রয়েছে। এর সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে সিজ্দার।
তাছাড়া, কুরআনের বর্ণনা অনুসারে পানির একটি প্রধান কাজ হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। ইবাদত-বন্দেগীর শুরুতে যে ওযু করা হয় তার সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে। কুরআনে বলা হয়েছে যে, “বজ্র নির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ উভয়ে তাঁর প্রশংসা, মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে (১৩ঃ১৩)। সালাতেও এ আয়াতটির অনুসরণ ঘটে। সালাতের সময়ও আমরা উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর উচ্চারণ করি। সালাতে কখনো উচ্চস্বরে, কখনো আবার নিম্ন স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করলেও আমাদেরকে সব সময়ই আওয়াজ করে আল্লাহু আকবর বলতে হয়। পাখিরা ঝাঁক বেঁধে আকাশে উড়ে আল্লাহর যিকর করে।
অনুরূপভাবে মুসলমানরাও সমবেতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে কখনো ছায়া প্রসারিত হয়, কখনো আবার সংকুচিত হয়ে আসে। এটাও মূলত আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করার একটা ধরন। সারাতের মধ্যে আমরা এর প্রকাশ দেখতে পাই। যেমন আমরা সালাত আদায় করতে গিয়ে কিয়াম (দাঁড়ান), রুকু এবং সিজ্দার মাধ্যমে কখনো নিজেকে প্রসারিত করি আবার সংকুচিত করি।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর যিকর-আস্কারকে ‘ইবাদত’ বলে। ইবাদতের মূল শব্দ ‘আবদ। এর অর্থ দাস। অন্য কথায় বলা যেতে পারে যে, মনিবের প্রত্যাশা অনুসারে চাকর যা করে সেটাই হলো ইবাদত। স্রষ্টার দাবি এই যে, পাহাড়-পর্বত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, পশু-পাশিরা নত হয়ে থাকবে, বৃক্ষরাজি থাকবে ভূতলশায়ী হয়ে। আর এটাই হলো তাদের আনুগত্য ও যিক্র-আসকার। যে ধরনের যিকর-আসকার একজনের জন্য উপযুক্ত আল্লাহ তা’আলা তার নিকট থেকে সেটাই প্রত্যাশা করেন। অনুরূপভাবে সৃষ্টির সেরা প্রাণী, জগতের মধ্যে সর্বাধিক বিবেকবান এবং ধরা বুকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে মানুষের জন্য যে ধরনের ইবাদত-বন্দেগী প্রযোজ্য আল্লাহ তার নিকট সেটাই প্রত্যাশা করেন।
ওযু ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে একজন পবিত্রতা অর্জন করে। আর পবিত্রতা হলো সালাত বিশুদ্ধ ও বৈধ হওয়ার পূর্বশর্ত। হাদীস গ্রন্থেও ওযু ও গোসলের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। পবিত্রতা অর্জন করার জন্য একজনকে হাত, মুখ, নাক, পা ও মাথা ধৌত করতে হয়। এখানে ওযু অর্থে কেবলমাত্র বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা বুঝায় না। বরং এটা ব্যবহৃত হয়েছে অতীতের জন্য অনুশোচনা এবং আগামীতে ন্যায়নিষ্ঠভাবে চলার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে। অনুশোচনা অতীতের পাপরাশিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়। অপরদিকে ন্যায়নিষ্ঠভাবে চলার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত লাভের আশা করি। প্রধানত যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হই, ওযুর সঙ্গে তার সংযোগ রয়েছে বেশি। হাত দিয়ে আমরা আঘাত বা আক্রমণ করি ও কোনোকিছু গ্রহণ করি। মুখ দিয়ে কথা বলি। নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেই। মুখম-লের সাহায্যে কখনো আমরা একজনকে অবজ্ঞা করি, কখনো আবার কাউকে প্রভাবিত বা চাপ দেয়ার জন্য উদ্যোগী হই। মাথা দিয়ে চিন্তা করি, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হই। কান দিয়ে শুনি।
যে পথে চলতে আল্লাহ বারণ করেছেন পা দিয়েই আমরা সে দিকে অগ্রসর হই। ওযুর নিয়ত করতে গিয়ে প্রথমেই একজনকে বলতে হয় যে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি পানিকে পরিষ্কার এবং পরিষ্কারক হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। মুখম-ল ধোয়ার সময় সে আল্লাহর কাছে এ মুনাজাত করে যে, শেষবিচার দিবসে আমার মুখম-লকে উজ্জ্বল করিও এবং কালিমা লিপ্ত রেখো না। হাত ধোয়ার সময় বলে, আমাকে ভালো কাজে নিয়োগ কর, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখ, রোজকিয়ামতের দিনে বাম হাতের পরিবর্তে ডান হাতে আমলনামা দান কর, হিসাব-নিকাশকে সহজতর করে দাও। মাথা মাছেহ করার সময় বলে আমাকে ইলম শিক্ষা দাও। কান ধোয়ার সময় বলে, আমাকে তোমার এবং তোমার রাসূলের বাণী শ্রবণ করার তৌফিক দাও। পা ধোয়ার সময় বলে জাহান্নামের উপর দিয়ে পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় পাপীষ্টরা পা ফসকে জাহান্নামে নিপতিত হবে। আর তোমার প্রিয় বান্দাদের পদযুগল থাকবে অতি দৃঢ়। হে আল্লাহ, সেদিন পা ফসকে আমার যেন পতন না ঘটে এবং আমার পদযুগলকেও দৃঢ় রেখো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ