চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হিজরি সনের অষ্টম মাস শাবান। মাসটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। শাবান আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো শাখা-প্রশাখা, বিস্তৃত হওয়া, ছড়িয়ে পড়া। রজব ও রমজান মাসের মাঝামাঝি শাবান মাসের অবস্থান। শাবান মাসজুড়ে আল্লাহতায়ালার অবিরাম রহমত ও বরকত নাজিল হতে থাকে। এ মাসের মধ্যরাতের একটি বিশেষ রজনীর নাম লাইলাতুল বরাত। জীবন ও জীবিকার জন্য আরবদের কাছে শাবান মাস যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ধর্মীয় দিক দিয়ে মুসলিম সমাজের কাছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর অতীব গুরুত্বের কারণেই রাসুলে পাক (সা.) শাবান মাসকে নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। হাদিসে বর্ণিত রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, শাবান হলো আমার মাস। আর যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, সে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, কিয়ামতের দিন আমি হবো তার নিকটবর্তী। আর রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস। (শুআবুল ইমান)। রাসুলে পাক (সা.) শাবান মাসের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য বিবেচনায় এ মাসে অধিক হারে নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন। মাহে রমজানের মর্যাদা রক্ষা এবং হক আদায়ের অনুশীলনের জন্য রাসুলে পাক (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) রাসুলে পাক (সা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), ‘আপনার কাছে মাহে রমজানের পর কোন মাসের রোজা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনের জন্য শাবানের রোজা উত্তম।’ (তিরমিজি)। মাহে রমজানে দীর্ঘ ৩০টি রোজা পালনের কঠিন কর্মসাধনা সহজে আদায় করার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শাবান মাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলে পাক (সা.)-এর প্রিয় মাসের একটি হলো শাবান। এ মাসে নফল রোজা আদায় করেই তিনি মাহে রমজানের রোজা পালন করতেন।’ (আবু দাউদ)। মানবজীবনের সব কালিমা দূর করার বিশেষত্ব নিয়ে রমজানুল মোবারক আসে শাবান মাস সমাপ্তির পরই। তাই এ গুরুত্ববহ মাস সারাবিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শাবান মাসে শবেবরাত নামে বিশেষ একটি রজনী আছে। রাসুলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আগমন করে, তখন আল্লাহ পাক বান্দাদের দিকে মনোযোগ দেন এবং মুমিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন, আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন, যতক্ষণ না তারা তওবা করে সুপথে ফিরে আসে (বায়হাকি)। বস্তুত মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে শাবান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং সে উদ্দেশ্যে শাবান মাসে মুমিন মুসলমানের জন্য বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন দিন গণনা করা। রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে শাবানের দিনগুলো গণনা করতে থাকো। বেশি করে নফল রোজা রাখো।’ রাসুলে পাক (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি নফল রোজা রাখতেন। জিকির-আজকার, কোরআন তিলাওয়াতসহ বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। যেন মাহে রমজানে আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সহজ হয়। বেশি করে দরুদ শরিফ পাঠ করা, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা ও অন্যান্য নফল ইবাদত করা। শাবান মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করা উচিত। বিশেষ করে এতিম ও দুস্থদের সাহায্য করা। রোগী দেখতে যাওয়া ও বিপদাপন্ন প্রতিবেশীকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর রাখা। যেন মাহে রমজানের হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করা যায়। মহান আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
মহান আলল্গাহর দরবারে রমজান মাসপ্রাপ্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। রজব মাস শুরু হলেই রাসুলে পাক (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাদ্বান।’ হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিন। আমরা এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা, দান-সদকা, কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকির, নবীজির প্রতি দরুদ পাঠসহ অন্যান্য নফল ইবাদত পালন করি। আল্লাহপাক আমাদের তৌফিক দান করুন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।