Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মের অনুসরণেই জীবনের প্রশান্তি

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

॥ তিন ॥
রাসূলে করীম (সা.)-এর মি’রাজের সময় মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে বাধ্যতামূলক করা হয়। রাসূলে করীম (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন যে, একজন ঈমানদারের জন্য সালাত হলো তাঁর মি’রাজ। সালাতের মাধ্যমে সে পৌঁছে যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সান্নিধ্যে।
এগুলো কোনো অর্থহীন বক্তব্য নয়। বরং সালাতের সময় একজন মুসলমান যেভাবে আচরণ করে তার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে এর সত্যতা। প্রথম সে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, হাত উঠিয়ে ইহরাম বাঁধে এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেয় যে, “আল্লাহু আকবারÑআল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ মহান। আল্লাহ ব্যতীত অন্য সমস্ত সত্তাকে সে অস্বীকার করে, এবং মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে সর্বোতভাবে আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহর হামদ বা মহিমা ঘোষণা করার পর সে খুবই বিনম্র বোধ করে। তখন সে আল্লাহর আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ তার সামনে মাথা নত করে এবং বলে সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম, “আমার মহান পভু, পবিত্র”। অতঃপর সে সোজা হয়ে দাঁড়ায় এবং সত্য পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানায়। আল্লাহর মহত্ত্ব তার অন্তরকে এমনভাবে আলোড়িত করে যে, সে আল্লাহর সামনে মস্তক অবনত করার তীব্র তাগিদ অনুভব করে। এক সময়ে পরিপূর্ণ বিনয়ের সঙ্গে ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে বলে, সুবহানা রাব্বিয়াল আলাÑ “আমার শ্রেষ্ঠতম প্রভু পবিত্র”। বার বার সে এগুলো পুনরাবৃত্তি করে এবং এভাব তার দেহ আধ্যাত্মিক সাধনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ক্রমান্বয়ে সে অর্জন করে পার্থিব জগতের বেড়াজাল থেকে উত্তরণের যোগ্যতা। এক সময় সে আসমানী পরিম-ল অতিক্রম করে চলে যায় আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যে। সেখানে সে আল্লাহর মহান দরবারে অভিবাদন পেশ করে এবং তার জবাবও পেয়ে যায়।
বস্তুতপক্ষে এ স্তরে উপনীত হওয়ার জন্য সে এমন নীতি ও পন্থা অনুসরণ করে যেগুলো মি’রাজের সময়ে রাসূল (সা.)-এর অনুসৃত নীতি ও পন্থারই অনুরূপ। এ সময়ে সে বিনয় নম্রভাবে বলে যে, “সকল প্রকার ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর জন্য। হে নবী, তোমার উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর শান্তি, নেমে আসুক আল্লাহর দয়া ও বরকত। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের এবং আল্লাহর সমস্ত নেক বান্দার উপর।” এটাকে বলা যেতে পারে একজন মু’মিনের রূহানী সফর। এ সফরের লক্ষ্য হলো আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্তি। এখানে তাকে জড় পদার্থের কোনো প্রতীক ব্যবহার করতে হয় না। এটাই হলো সালাতের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। জাগতিকভাবেও সালাতের অসংখ্য গুরুত্ব রয়েছে। যেমন, সালাত আদায় উপলক্ষে মহল্লার অধিবাসীরা দৈনিক পাঁচবার সমবেত হয়। পেশাগত জীবনে অবিরত কাজ করে যাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে একঘেয়েমি বা বিরক্তির ভাব আসে। সালাত মিনিট কয়েকের জন্য হলেও তাতে স্বস্তি জোগায়। একটি লোকালয়ের ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, সবাইকে পূর্ণ সমতায় একটি স্থানে (মসজিদ) সংঘবদ্ধ করে। লোকালয়ের যিনি বুযুর্গ তিনি স্থানীয় মসজিদে সালাতের নেতৃত্ব দেন। আবার রাষ্ট্রের যিনি প্রধান, তিনি সালাতের ইমামতি করেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় মসজিদে। মসজিদে বসে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে সর্বসাধারণের সাক্ষাৎ মেলে। কোনোরকম বাধা-প্রতিবন্ধকতা বা আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
সালাতের সামাজিক তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সালাতে এসে একজন মু’মিনের অন্তরে এ অনুভূতির সৃষ্টি হয় যে, তার চারপাশে এবং সমাজের সর্বত্র বিরাজ করছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। সে বসবাস করছে সামরিক শৃঙ্খলার মতো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি পরিবেশে। মুয়াযযিনের আযানের ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে সকলেই ছুটে আসে নির্ধারিত মিলনস্থল বা মসজিদে। ইমামের পেছনে সবাই দাঁড়িয়ে যায় সারিবদ্ধভাবে। সকলে একই ধরনের ক্রিয়া-কর্মে এবং অঙ্গচালনায় লিপ্ত হয়। তখন তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত রকমের সমন্বয় ও ঐক্য।
উপরন্তু বিশ্বের যে কোনো স্থানের সকল মু’মিন সালাতের সময় কা’বার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। মক্কায় অবস্থিত এ কা’বা শরীফ হলো আল্লাহর ঘর এবং কা’বাই সকলের অভিন্ন লক্ষ্যস্থল। এ কা’বা ঘর বিশ্বজগতের মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে শ্রেণী, বর্ণ, বা অঞ্চলের ভিত্তিতে কোনোরকম তারতম্য বা বৈষম্য সৃষ্টির অবকাশ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ