চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ পাঁচ ॥
একজন মু’মিন মুসলমানের জন্য দ্বিতীয় ধর্মীয় দায়িত্ব হলো বছরে এক মাস সিয়াম পালন করা। বিষুবীয় ও গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের মুসলমানরা রমজান মাসে রোযা রাখে দিবাভাগে। অর্থাৎ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে। আর যারা মেরু অঞ্চল এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাস করে, তারা বিষুবীয় অঞ্চলের সমপরিমাণ সময়ের জন্য পানাহার করা থেকে বিরত থাকে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পানাহারের সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত জাগতিক চিন্তা ও ইন্দ্রিয় সুখ আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির পরিপন্থী তাও পরিহার করতে হয়। বস্তুতপক্ষে সিয়ামের মধ্যে রয়েছে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের কাছে ইসলামের এ নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা দুষ্কর বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিগত শতাব্দীগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ইচ্ছা এবং আগ্রহ থাকলে নওমুসলিমগণও অনায়াসে এ সমস্ত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে পারে।
ইসলামে বছর গণনা করা হয় চান্দ্র মাসের হিসাবে এবং গোটা রমজান মাস একজন মু’মিনকে সিয়াম পালন করতে হয়। ফলে বছরের সকল ঋতুতে অর্থাৎ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত বসন্ত পালা করে সিয়াম পালনের মাস রমজানুল মুবারক আসে। কোনো ঋতুতে প্রচ- গরম পড়ে। আবার কোনো ঋতুতে থাকে হাড় কাঁপানো শীত। মুসলমানগণ বিভিন্ন ঋতুর প্রতিকূল এবং ক্লেশকর পরিস্থিতির মধ্যেই সিয়াম পালন করে থাকেন। তারা এসব করে থাকেন আধ্যাত্মিক সাধনা এবং আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে।
সিয়াম পালনের আধ্যাত্মিক সুবিধা ছাড়াও জাগতিক বা পার্থিব উপকারিতা রয়েছে। সালাতে যে উপকারগুলো রয়েছে, সিয়াম পালন করেও সেগুলো পাওয়া যায়। সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে আরো পাওয়া যায় স্বাস্থ্যগত সুবিধা ও সামরিক প্রশিক্ষণ। তাছাড়া সিয়াম পালনের মাধ্যমে ইচ্ছাশক্তির বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটে। বিশেষ করে অবরোধ এবং যুদ্ধকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীর লোকদের খাদ্য ও পানির কষ্ট করতে হয়। এরপরও তারা প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের প্রতি অবিচল থাকে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অতি সহজে এ শিক্ষা লাভ করা যায়। সে কারণেই যে শাসক বা সেনানায়ক রমজান মাসে তার সৈন্যদেরকে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করে, সে সত্যিকার অর্থেই একজন নির্বোধ। কিন্তু একথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, সিয়ামের মূল ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইবাদত। এর লক্ষ্য হলো আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। কেউ যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে অথবা অন্য কোনো কারণে কেবলমাত্র পার্থিব উদ্দেশ্যে পানাহার করা থেকে বিরত থাকে তাহলে সেটা ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে না। আধ্যাত্মিকভাবেও সে উপকৃত হবে না।
অসুস্থকালীন সময়ে মহিলারা সালাতের মতো সিয়াম পালন করা থেকেও অব্যাহতি পেয়ে থাকে। তবে এটুকু ব্যক্তিক্রম যে, রমজান মাসে একজন মহিলা যে কয়দিনের জন্য সিয়াম পালন করতে পারছে না, সুস্থ হওয়ার পর তাকে ঠিক সে কয়দিন সিয়াম পালন করতে হবে। যারা রুগ্ন তাদের জন্যও এই একই বিধান প্রযোজ্য। আবার যে খুব বেশি বৃদ্ধ, সে সিয়াম পালন করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত। তবে তার আর্থিক সঙ্গতি থাকলে রমজান মাসের একটি রোজার জন্য তাকে একজন দরিদ্র পানাহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রাসূলে করীম (সা.) লাগাতার কয়েকদিনের জন্য যেমন ৪৮ অথবা ৭২ ঘণ্টা সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি নিষেধ করেছেন সারা বছর বা গোটা জীবনব্যাপী সিয়াম পালন করতে। এমনকি যারা বেশি বেশি আধ্যাত্মিক সাধনা এবং সওয়াবের জন্য অতি উৎসাহী ছিলেন, তাদেরকেও তিনি সারা বছর রোজা রাখতে বারণ করেছেন।
রমজান মাসে সিয়াম পালন করা মুসলমানদের জন্য ফরয। ইচ্ছা করলে এর বাইরেও মাঝে মাঝে সিয়াম পালন করা যায়। তবে সেটা গণ্য হবে অতিরিক্ত এবং নফল ইবাদত হিসাবে। রাসূলে করীম (সা.) একসঙ্গে দুদিনের জন্য সিয়ামের অনুমোদন দিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে সিয়াম পালনের মধ্যে যে সুফল পাওয়া যায়, সিয়াম বা উপবাস নিত্যদিনের স্বভাবে পরিণত হলেও সে ফল পাওয়া যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।