চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ চার ॥
জামাআতে সালাত আদায় করাটাই উত্তম ও অধিকতর সওয়াবের। তবে জামাআতে সালাত আদায় করার সম্ভাবনা বা পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকলে পুরুষ বা মহিলা যে কেউ একাকি এবং ব্যক্তিগতভাবে সালাত আদায় করতে পারে। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার অর্থ হলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ২৪ মিনিট আল্লাহর সান্নিধ্যে এবং তাঁর স্মরণে সময় অতিবাহিত করা। তবে প্রকৃত অর্থে একজন মু’মিন মুসলমানকে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। সে আল্লাহকে স্মরণ করবে সুখে ও দুঃখে, কর্মে ও বিশ্রামে এবং কোনো কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায়। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে যে আকাশম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন লোকের জন্য যারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শুইয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের রব, এ তুমি নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে দোযখের আগুন হতে রক্ষা কর (৩ : ১৯০-১৯১)।
মানুষের প্রয়োজন এবং সুবিধার্থে আল্লাহ তা’আলা এ বিশ্ব জগতকে তার অধীন করে দিয়েছেন। এ সুবিধা বা নিয়ামতের জন্য তাকে কৃতজ্ঞ ও অনুগত থাকতে হবে। সে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না। অবিচার ও বেইনসাফী করবে না জগত সংসারের কারো প্রতি।
এখানে উল্লেখ্য যে, যে মুহূর্তে মানুষের জন্য সালাত আদায়ের বিধানকে বাধ্যতামূলক করা হয় তখন কুরআন মজীদে এ ঘোষণা দেয়া হয় যে, “আল্লাহ কারো উপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত। ” (২ : ২৮৬)
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা মানুষকে বিচার করবেন তার অভিপ্রায় ও নিয়ত অনুসারে। সে কোন পন্থায় কতবার আল্লাহকে স্মরণ করল, সেটা তাঁর কাছে গৌণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, বস্তুগত ও জাগতিক কাজকর্মের শত ব্যস্ততার মধ্যেও পারমার্থিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্বের কথা কারো ভূলে যাওয়া উচিত নয়। কেবলমাত্র অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম সালাত আদায় করার সুযোগ রয়েছে। এধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তির অসুস্থতা ও অবচেতন অবস্থা অথবা এমন কোনো কর্মব্যস্ততা যার মধ্যে ব্যক্তিকে বাধ্য হয়ে নিয়োজিত থাকতে হয়েছে।
হাদীসে উল্লেখ আছে যে, খন্দকের যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষ মুসলমানদের ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল। এমন কি রাসূল মুহাম্মদ (সা.) দিবাভাগের সালাত আদায় করার জন্য এক মুহূর্ত অবসর পাননি। ফলে তিনি যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাত গভীর রাতে একসঙ্গে আদায় করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবন হাম্বল, মালিক) কখনো কখনো রাসূল করীম (সা.) যোহরের সঙ্গে আসর এবং মাগরিবের সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করতেন ( হজ পালনকালে) অথচ এ সময় শত্রুর ভয় বা সফরের কোনো অসুবিধা ছিল না। আসলে মুসলিম উম্মাহর সালাত আদায়ে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্যই এরূপ করেছিলেন। এ বর্ণনা অনুসারে উক্ত দিনগুলোতে তিনি সালাত আদায় করতেন তিনবার (যোহরের সময় যোহর ও আসর একসঙ্গে এবং ইশার সময় মাগরিব ও ইশা একসঙ্গে) বস্তুতপক্ষে এসব কিছু নির্ভর করে মু’মিন মুসলমানের ব্যক্তিগত বিবেচনার উপর এবং এখানে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হয়। সে কোনোরকম প্রতারণার আশ্রয় নিতে বা কোনোকিছু আল্লাহর নিকট থেকে গোপন রাখতে পারে না।
আমরা জানি যে, বিষুবীয় বা গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চল ও মেরু অঞ্চলের মধ্যে সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। আল-বেরুনী দেখিয়েছেন যে, মেরু অঞ্চলে একনাগাড়ে ছয় মাস উদীয়মান থাকার পর আবার অস্ত যায়। ইসলামের শরীয়ত বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন যে, এতদঞ্চলে কেউ সূর্যের উদয়-অস্তের হিসাবে চলতে পারে না। বরং তাকে চলতে হয় ঘড়ির কাঁটার হিসাবে। সালাত, সওম এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীর জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট কিছুদিন এবং সন্তান প্রসবের পর কিছুদিন সালাত বিধান শিথিল করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।