মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশ তাদের দৈনন্দিন কাজ হিসেবে ঠান্ডা মাথায় কাউকে গুলি করে হত্যা করে। তবে এবারে হত্যাটি রাজনৈতিক বা মাদক সংক্রান্ত ছিল না। বরং হত্যার শিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব সুরক্ষা বাহিনীর সাবেক সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। সরকারের সুরক্ষা বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার মতো, মেজর সিনহাও বিচারবহির্ভূত হত্যার অন্যতম শিকারে পরিণত হন। এটি এতটাই নির্লজ্জ হত্যাকান্ড ছিল যে, জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এক সময় যে ‘জিরো টলারেন্সে’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পালন করতে বাধ্য হন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস তার এ প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘২০০৮ সালে আমি যখন লন্ডনে তার বোনের ফ্ল্যাটে নির্বাসনে থাকা হাসিনার সাথে দেখা করি, তখন তিনি তার দেশের মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানান। মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র সমালোচনা করে তিনি জোরের সাথে বলেছিলেন যে, যদি তিনি পরের বছরের নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে এ অনাচারের সমাপ্তি ঘটাবেন। তিনি বলেছিলেন, আমি এ হত্যাকান্ড হতে দেব না। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’
জনাব শেখ হাসিনার এ ধরনের প্রতিশ্রুতি সত্তে¡ও তার আমলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভ‚তভাবে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৪শ’ জনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগুলো যতোই সাঙ্ঘাতিক হোক না কেন, তারা প্রতিবারই গৎবাঁধাভাবে অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, নিহত ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্য ব্যবসা করতে দেখা গিয়েছিল, বা সে হিংস্র অপরাধী ছিল। যেহেতু ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে ইচ্ছেমতো বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে যে কাউকে খুন করা যায়, নিরাপত্তা বাহিনী এ সুযোগে হত্যাকান্ড সঙ্ঘটিত করে আত্মরক্ষার জন্য হত্যার করার ভান করে।
মেজর সিনহা হত্যার পর পুলিশ তাদের চিরাচরিত বিবৃতি দিয়েছিল, ‘তার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছিল এবং সিনহা পুলিশের দিকে বন্দুক তাক করেছিলেন, তাই তারা আত্মরক্ষায় খাতিরে তাকে গুলি করে। কিন্তু মিথ্যার জালটি দ্রুত উন্মুক্ত হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়, যার ফলস্বরূপ এ পর্যন্ত ২১ পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এমনকি সরকার একটি গণশুনানিও করেছে, যা এবার অন্তত ন্যায়বিচার হবে কিনা, তা জানতে জনগণকে আগ্রহী করে তুলেছে।
মেজর সিনহার হত্যার পর সাময়িক বরখাস্ত এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকান্ডের জন্য ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তবুও গত বছর এ কর্মকর্তাকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ‘মাদক ব্যবসায়ীদের’ হত্যার পুরস্কার হিসেবে সম্মানসূচক পুলিশ মেডেল দেয়া হয়েছিল। কয়েক মাস পর তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রসফায়ার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে বলেছিলেন যে, তার দল ‘কেবলমাত্র অপরাধীদের’ হত্যা করেছে।
তবে সিনহা হত্যাকান্ড প্রমাণ করেছে যে, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকেও রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গত ৫ আগস্ট ক্রসফায়ারে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকে বাংলাদেশে আর একটিও ক্রসফায়ার সঙ্ঘটিত হয়নি।
অ্যাডামস পরিশেষে মন্তব্য করেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করা শেখ হাসিনার এ সুযোগটি ব্যবহার করা উচিত, যিনি ২০০৮ সালে আমার চোখে চোখ রেখে অবৈধ হত্যা ও নির্যাতনের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্রসফায়ার হত্যাকান্ডে জড়িতদের সকলকে বরখাস্ত করা উচিত এবং সমস্ত বিচার বহির্ভ‚ত হত্যার তদন্ত করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা উচিত এবং দায়বদ্ধদের জবাবদিহিতা রাখা উচিত। শুধুমাত্র তবেই তিনি ‘জিরো টলারেন্স’র প্রতিশ্রুতি পালন করতে শুরু করবেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।