পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারীর সময়ে বিগত ঈদুল ফিতরে ঈদের উৎসব-আয়োজন, ঈদের বাজার , গণপরিবহণ এবং ঈদগাহে ঈদের জামাত নিষিদ্ধ থাকলেও শেষ মুহূর্তে ব্যক্তিগত গাড়ীতে ঈদে বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে লাখ লাখ মানুষ নানা উপায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঈদ পরবর্তী সময়ে দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমন দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পেছনে সে সময়ে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে দায়ী করা হয়। এর আগে এপ্রিল মাসে একাধিকবার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি খোলার ঘোষণা দিয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে লাখ লাখ শ্রমিককে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে নিয়ে আসার কারণে এসব এলাকা করোনার হটস্পটে পরিনত হয়। দেশে এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুইলাখ করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে প্রায় ২২শত। এর বেশিরভাগই বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের। মে মাসে ঈদুল ফিতরের সময় থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমনের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এহেন বাস্তবতায় আগামী ঈদুল আজহার ঈদযাত্রা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কার প্রেক্ষিতে বাড়তি কঠোরতা ও নিয়ন্ত্রণ আরোপের কোনো বিকল্প নেই। দেশে এখন করোনাভাইরাস মহামারীর পিক টাইম চলছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঈদুল আজহার সময়টিতে ব্যাপক মানুষের স্থানান্তর ও চলাচল নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন।
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে সারাবিশ্বের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫লাখ মানুষের মত্যু হয়েছে। এখনো থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। কোথাও কোথাও সংক্রমণ কমে এলেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে অতি সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুরোপুরি শুরু করতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারী হওয়ায় এ ক্ষেত্রে অগ্রাহ্য বা তথ্য ধামাচাপা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর আমাদের মত বৈদেশিক কর্মসংস্থান নির্ভর অর্থনীতির দেশের জন্য করোনা সংক্রমণ নিয়ে বাড়তি সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। এরই মধ্যে আমাদের জন্য অনেক দু:খজনক বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের করোনা পরীক্ষা এবং সংক্রমণের বাস্তব অবস্থার তথ্যাবলী সম্পর্কে দেশে-বিদেশে এক ধরণের অনাস্থা-অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। দেশে বেশ কিছু ভুয়া করোনা সনদ বিক্রেতা চক্রের তৎপরতা গণমাধ্যমে উঠে আসা এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ ফেরত প্রবাসিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করোনা পজেটিভ রিপোর্ট ধরা পড়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নতুন করে সমস্যায় পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের ফ্লাইট স্থগিত করেছে। কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্সকে বাংলাদেশের ট্রানজিট প্যাসেঞ্জারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যাচ্ছে। লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক ভাব-মর্যাদার প্রশ্নে এটি খুবই উদ্বেগজনক বিষয়।
চাকরি, ব্যবসায়, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আবাসন ও সন্তানদের শিক্ষাসহ সারাবছরের যাবতীয় কর্মকান্ড শহরকেন্দ্রীক হলেও ঈদের সময় গ্রামে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিলিত হওয়া আমাদের সমাজের মানুষের একটি পুরনো ঐতিহ্য ও আবেগ। এই করোনা মহামারীতে অনেক ঐতিহ্য ও ব্যবস্থায় অভাবনীয় ব্যত্যয় গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতের কাজ চলছে ঘরে বসেই। এহেন বাস্তবতায় কোরবানি ঈদে মানুষের ঘরে ফেরার ব্যাকুলতা যেন আমাদের করোনা পরিস্থিতিকে আবারো নতুন ঝুঁকির মুখে ঠেলে না দেয় সে দিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। ঈদে বাড়ি ফেরার পুরনো ঐতিহ্য ও আবেগের মূল্য দেয়ার সময় এখন নয়। দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ইতিমধ্যে চারমাস অতিবাহিত হলেও এখনো সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখী। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা অনেক বেশি জরুরী। আমরা যেন ঈদের প্রথাগত আনন্দ ও আবেগকে মূল্য দিতে গিয়ে নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও সমাজকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ঠেলে না দেই। মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশকিছু দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় চালুর উদ্যোগ শুরু হলেও বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, টেস্ট জালিয়াতি ও অপর্যাপ্ত টেস্টিং সুবিধার দায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রবাসী কর্মীদের বহন করতে হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মর্যাদার উপর। দেশে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ এবং করোনা চিকিৎসায় কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশে-বিদেশে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব নয়। করোনা টেস্টের হার আরো কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। ভুল রিপোর্ট এবং ভুয়া সনদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঈদুল ফিতরের অভিজ্ঞতার আলোকে ঈদুল আজহার সময় ব্যাপক সংখ্যক মানুষের স্থানান্তর ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।