Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনন্দের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে মহাবিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

চন্দ্রা থেকে গাবতলী এক ঘণ্টার পথ পেরুতে ১২ ঘণ্টায়, শ্যামলী থেকে আধা কিমি. পথ কল্যাণপুর আড়াই ঘণ্টা :: বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ৩০ কিমি. যানজট :: কমলাপুর লোকলোকারণ্য একটি ট্রেনও নির্ধারিত সময়ে ছাড়েনি :: পদ্মা সেতুমুখি এক্সপ্রেসওয়েতে ৩ কিমি. যানজট :: ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে ধীরগতি :: সদরঘাটে লঞ্চযাত্রীদের হাঁকডাক


আগামীকাল রোববার পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। নারীর টানে বাড়ি- কেউ ট্রেনে, কেউ সড়ক পথে, কেউ নৌ পথ, কেউ রেলপথে আবার কেউ আকাশপথে বিমানে ছুটছেন। সড়ক পথে যারা গণপরিবহনের টিকিট পাননি তারা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন। কিন্তু সড়ক, রেলওয়ে কোনো পথেই স্বস্তি নেই। ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়, সড়ক পথে যেখানে সেখানে ভয়াবহ যানজটে পড়তে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ট্রেনে উঠা এবং ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা সড়কে যানজটে আটকে থেকে যাত্রীরা যাচ্ছেন গ্রামে। পথে এতো ভোগান্তি তারপরও ঘরমুখো মানুষের মধ্যে উচ্ছাস বাড়ি যাচ্ছি তো!

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে উত্তরাঞ্চলমুখী মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার যানজট। এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে ৫ ঘণ্টা। ট্রেনে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। এমনকি ছাড় ও ইঞ্জিনে উঠে শত শত লোক গন্তব্যে যাচ্ছেন। ঢাকা টু চট্টগাম মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি। এমনকি স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যারা যাচ্ছেন তাদেরও এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে সড়কে যানজট আর কমলাপুরে ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা তারপরও মানুষের মধ্যে বিরক্তি নেই। সবাই খুশি ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন। পুলিশ বলছে, মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বাসে সিট না পেয়ে অনেকে ট্রাকে বাড়ি যাচ্ছেন। যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে ঘুড়কা, সাহেবগঞ্জ ও চান্দাইকোনা এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও যানজট নেই। চন্দ্রা থেকে গাবতলী এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে ৬ ঘণ্টা থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগছে। তারপরও মানুষ খুশি। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গন্তব্যে পৌঁছিতে পথে কষ্ট হবে সে চিন্তা করেই ঘর থেকে বের হয়েছেন। একটু আধটু কষ্ট ও ভোগান্তি মেনে নিয়েই গ্রামের পানে রওয়ানা দিয়েছেন। তবে প্রশাসন থেকে যে সড়ক মহাসড়ক ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতির কথা প্রচার করেছে; বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। ঢাকা টু ময়মনসিং রোডে এবরোথেবরো সড়ক। ওই এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প চলছে; ঈদ উপলক্ষ্যে কাজ বন্ধ রেখে সড়ককে নির্বিঘ্নে গণপরিবহন যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। আবার ট্রেনে টিকিট কাটতে ভোগান্তির মতোই সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের নিদারুণ কষ্ট করতে হচ্ছে।

ঢাকায় বাসের টিকিট সোনার হরিণ : ঈদুল আজহায় ঈদে ঘরমুখি মানুষের ভিড় বেড়েছে বাস কাউন্টারগুলোতে। কিন্তু ভয়ঙ্কর শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। গতকাল শুক্রবার ও আগের দিন বৃহস্পতিবার রাত ১১টার বাস ছেড়েছে ভোর ৪টায়, সকাল ৬টার বাসের দেখা মেলেনি সকাল ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টার বাসের যাত্রীদের কোনো কোনো পরিবহন ফোন করে বিকেলে আসতে বলেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা ফেরত যানবাহনগুলো ১২ ঘণ্টা সময় লেগেছে চন্দ্রা থেকে ঢাকার কমলাপুরে আসতে। আর শ্যামলী থেকে কল্যাণপুর আধা কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। রাজধানীর কল্যাণপুর বাসটার্মিনালে ভোগান্তিতে পড়া যাত্রী ও কাউন্টার সূত্রে ঈদযাত্রার এ চিত্র পাওয়া গেছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কে দীর্ঘ যানজট। ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর পর নড়ছে গাড়ির চাকা। ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে দু’পথেই রয়েছে তীব্র যানজট।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওমেটিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিকুর রহমান ন্যাশনাল ট্রাভেলসে যাবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেজন্য বৃহস্পতিবার ১১টায় টিকিটও কেটেছেন। কিন্তু সারারাত বসে থেকেও বাসের দেখা পাননি তিনি। বেশিরভাগ যাত্রীই একই অবস্থায় পড়েছেন। গত রাত থেকে ১২ ঘণ্টা কোনো বাসই যথাসময়ে ছেড়ে যায়নি।

কল্যাণপুর হানিফ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ভয়ঙ্কর অবস্থা। রাত ১২টার বাস গেছে ভোরে। আমি সকালে আসছি। সকাল ৭টার বাস ঢাকাতেই ছিল। সেটা ছেড়েছি, কিন্তু খবর নিলাম, আড়াই ঘণ্টাতেও সে বাস গাবতলী পার হতে পারেনি। এরপর থেকে কোনো বাস যথাসময়ে আমরা ছাড়তে পারিনি।

এসআর পরিবহনের কল্যাণপুরের টিকিট বিক্রেতা মো. জিয়া বলেন, চন্দ্রা থেকে ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগছে ১২ ঘণ্টা। তাহলে যথাসময়ে বাস ছাড়বো কী করে। ভোগান্তি যাত্রীদের, ভোগান্তি আমাদেরও। কিন্তু কোনো উপায় নেই। এই যে দেখেন সড়কে গাড়ির চাকা ঘুরছে না। শ্যামলী থেকে কল্যাণপুর আড়াই ঘণ্টা।

কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ পরিবহনের বাসে সিডিউল বিপর্যয়ের একই দৃশ্য। ঈদের আগে এই সিডিউল ঠিক হওয়া সম্ভব নয়। সকালের অনেক বাস ঢাকায় পৌঁছায়নি। ঢাকা পৌঁছতেই লাগবে ৪/৫ ঘণ্টা। এরপর ঈদযাত্রা।

কল্যাণপুর দেশ ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, সোয়া ৬টার বাসটা ছাড়তে পেরেছি। সেটা এখনও আমিনবাজার ব্রিজে। এরপর সাতটা, পৌনে আটটা, আটটা, পৌনে ৯টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের একটি বাসও ছেড়ে যায়নি। এলেঙ্গা-চন্দ্রায় ভয়াবহ যানজট। সেটির প্রভাবে গাড়ি ঢাকা পৌঁছাতেই সময় লাগছে। যে কারণে শিডিউল বিপর্যয়।

চার ঘণ্টা ধরে কাউন্টারে অপেক্ষা করে বাস না পাওয়া ক্ষুব্ধ যাত্রী আলতাফ হোসেন বলেন, কখনও যানজটে, তো কখনও বাস সংকটে চিড়েচ্যাপ্টা যাত্রীরা। কনেয়ালে কয়ে যায়, বকনেওয়ালা বকে যায়, দেখনেওয়ালা দেখে যাও, সয়ে যাও।

ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের ৩০ কিমি. যানজট : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তরবঙ্গের দিকে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের কবলে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো লোকজন। তবে স্বস্তিতে চলাচল করতে পারছে ঢাকাগামী পরিবহনগুলো। শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিবহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হওয়ায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। বাস না পেয়ে বিকল্প হিসেবে পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে যাচ্ছে মানুষ। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব রেলস্টেশন এলাকায় দেখা গেছে, শত শত পরিবহন সেতু পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। বেশিরভাগই ট্রাক। আর তাতে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আশিকপুর বাইপাস এলাকা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানজট রয়েছে। তবে ফাঁকা রয়েছে ঢাকাগামী লেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতপূর্ব হতে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকার দুই লেনের সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে মহাসড়কে গণপরিবহনের চাপ বেড়েছে। এতে সড়কে ফিটনেসবিহীন পরিবহনগুলো দীর্ঘ সময় চালানোর পর বিকল হয়ে যায়। আবার সেতুতে ওঠার পরও কিছু কিছু বাস বিকল হয়ে পড়লে টোল আদায়ে বিঘ্ন ঘটে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি উদ্ধার হলে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে সেতু পারাপার হয়।

ঢাকার বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেট কারে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন তিন বন্ধু। রাত আড়াইটার দিকে তারা রওনা দিয়ে দুপুর ১টায় বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পাড়ে এসে যানজটে আটকা পড়েছেন। তারা জানান, ঢাকা থেকেই যানজটে পড়েছি। রাত গড়িয়ে সকাল হলেও এখনো সেতুই পাড় হতে পারিনি। সেতুর পূর্বপাড়ে একই সঙ্গে এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি সেতু পার হতে।

মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আতাউর রহমান জানান, সকাল থেকেই পরিবহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। সেতুতে টোল আদায়ে কিছুটা সময় লাগায় সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে চার কিমি. যানজট : রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে অন্য প্রান্তের বিভিন্ন স্থানগামী গণপরিবহনগুলোর চাপ বেড়েছে মাওয়া প্রান্তে। ফলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় দীর্ঘ চার কিলোমিটারের যানজট। মূলত ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় অকার্যকর থাকায় এই যানজট। শুক্রবার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতু প্রান্তে সবগুলো টোল এখনও ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদায়ের জন্য প্রস্তুত নয়। পুরনো পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে সীমিত সময়ের মধ্যে টোল দিয়ে সেতু পাড়ি দিচ্ছে যানবাহনগুলো।

মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজায় দায়িত্বে থাকা পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও সনাতন পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কারণে টোল প্লাজায় এসে যানবাহনকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ধীরগতিতে গাড়ি টোল প্লাজা অতিক্রম করছে। তাই টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগরের কেউটচিরার দিকে প্রায় চার কিলোমিটার যানজট হয়েছে। তবে সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধীরগতি : ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মহাসড়কের চিটাগং রোড বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনের দীর্ঘ জটলা থাকলেও তা একেবারে স্থবির হয়ে পড়েনি, ধীরগতিতে চলমান রয়েছে। তবে চিটাগং রোড থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, চিটাগং রোড, কাঁচপুর, মদনপুর ও মোগড়াপাড়া এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে মহাসড়কের প্রত্যেকটি স্ট্যান্ড ঘুরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী মহাসড়কে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সড়কে যে পরিমাণ যাত্রী রয়েছে সেই অনুপাতে নেই পরিবহনের ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। তবে বাড়তি ভাড়া দিয়েও মিলছে না আসন। এতে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকা কুমিল্লার সাঁচার এলাকার সায়মা রহমান নীধি বলেন, কাজের ব্যস্ততর জন্য অগ্রিম টিকিট কাটতে পারিনি। এখন মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থেকে মনে হচ্ছে বাসের সিট যেন সোনার হরিণের চেয়েও বেশি কিছু। দুই ঘণ্টা হলো অপেক্ষা করছি, দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও সিট পাচ্ছি না। বাসা থেকে এই পযর্ন্ত আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, আরও পথ বাকি আছে। দেখি কী করা যায়, এত সব কষ্ট আর কষ্ট থাকে না যখন বাড়ি ফিরে বাবা-মায়ের মুখ দেখি। বছরে একটা ঈদ বাবা-মা ও স্বজনদের ছাড়া হয় না।

চিটাগং রোড বাসস্ট্যান্ড শিমরাইল পুলিশ বক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শরফুদ্দীন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের কোথাও কোনো যানবাহন স্থবির হয়ে পড়েনি, চলমান রয়েছে। সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। তবে শিমরাইলের চিটাগং রোড এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ জটলা থাকলেও তা রানিং আছে। চিটাগাং রোড একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড হওয়ায় সেখানে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। যাত্রী ওঠানামার জন্য মহাসড়কের এই অংশে কিছুটা জটলা থাকতে পারে, তবে যানজট বলতে মূলত যা বুঝায় তা নেই।

সদরঘাটে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে : পদ্মা সেতু চালুর পর আশঙ্কা করা হচ্ছিল সদর ঘাটের লঞ্চ টার্মিনাল পরিত্যাক্ত হয়ে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতু দিয়ে সড়ক পথে বাড়ি যাবেন। কিন্তু গতকাল ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে।

সকালে কেবল চাঁদপুর নৌপথে যাত্রীদের চাপ থাকলেও বিকেলে দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, আমতলী, বরগুনা ও হুলারহাটসহ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীরা পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে লঞ্চে উঠছেন। চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোর ডেক যাত্রীতে প্রায় পূর্ণ ছিল। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চে। দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোর পন্টুনে যাত্রীদের তেমন উপস্থিতি সকালে কম থাকলে বিকেলে বেড়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের কর্মচারীদের হাঁকডাক বেড়ে যায়।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত টার্মিনালে লঞ্চ এসেছে ৬৩টি এবং টার্মিনাল ছেড়ে গেছে ৩১টি লঞ্চ।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শনে আসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল ও বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক ও এমভি ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন আল রশিদ বলেন, ঈদের ৩ থেকে ৪ দিন আগে থেকে টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এবার টার্মিনালে ভিন্ন চিত্র। তিনি আরও বলেন, সড়কে যানজট হওয়অয় টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে।
নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য লঞ্চে পারাপারে আমাদের প্রস্তুতির কমতি নেই।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট বাইকের দখলে : ঈদ উদযাপনে রাজধানী থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছেন ঘরমুখো লাখো মানুষ। দৌলতদিয়া ৫ ও ৬ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে আসতে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক ফেরিঘাটের প্রবেশপথ দখল করে রাখায় যাত্রীদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রশাসন ও নৌ-পুলিশের তৎপরতার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে দৌলতদিয়া প্রান্তের ৫ নম্বর ফেরিঘাটের প্রবেশমুখে দেখা যায় পন্টুনের ওপর ইজিবাইকগুলো পার্কিং করা রয়েছে। এছাড়া পন্টুন থেকে মহাসড়কের অ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশা জায়গা দখল করে রাখায় ফেরিতে যানবাহন উঠতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক সময় পন্টুনের লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা এইচআর পরিবহনের বাসচালক ফেরদাউস বলেন, ফেরি থেকে নামার পর অটোরিকশা ও ইজিবাইক কোনও আইন মানে না। ফেরিঘাট এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়াতে এসব যান চলাচল করছে। এদের কারণে অনেক সময় লোড আনলোড বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসন তেমন কিছু বলে না। অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পন্টুন পার করতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শাহনেওয়াজ রাজু বলেন, বিষয়টি আমি এখনই দেখছি। ঘাটে আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। ঘটনাস্থলে আমি এখনই তাদের পাঠাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আনন্দের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ