পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৪ দিন। ঈদকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। ব্যতিক্রম নয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ঈদকে কেন্দ্র করে এ মহাসড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিনগুণ গাড়ির চাপ বাড়লেও নেই ভোগান্তি। যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় কুমিল্লা চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলার যানবাহনগুলো কোনও যানজট ছাড়াই অনায়াসে চলাচল করছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হাইওয়ে পুলিশ গঠন করেছে ১৫টি কুইক রেসপন্স টিম। মহাসড়কে কোথাও কোনও দুর্ঘটনা হলে এই টিমগুলো দ্রুততার সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক করবে। এছাড়া মহাসড়কের কোনও অংশে সমস্যা থাকলে দ্রুততম সময়ে তা মেরামতে ৪০ জনের একটি দল সার্বক্ষণিক কাজ করছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার ঈদযাত্রা অনেক বেশি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
জানা গেছে, গত ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিল বেশি। এতে সড়কে দ্বিগুণ চাপ সৃষ্টি হয়। সড়কের সংস্কার কাজ, হাইওয়ে পুলিশের লোকবল সঙ্কট, এক লেনে যান চলাচল এবং সর্বোপরি সড়কে গণপরিবহনের চাপ বেশি থাকার পরেও কোনও বড় যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তাই যাত্রী সাধারণের প্রত্যাশা এবারের ঈদে যাত্রা আরও স্বস্তির হবে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে গাড়ির চাপ বেশি রয়েছে। আর ঢাকামুখী লেনে পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ বেশি। তবে কোথাও যানজট নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে ও স্বস্বিতে ঘরে ফিরছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাকিল আহমেদ। কুমিল্লায় যাত্রা বিরতিকালে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, টিকিট পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। টিকিট কেটে পছন্দের আসন পেয়েছি। বাড়তি ভাড়াও দিতে হয়নি। ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত পথিমধ্যে কোনো জায়গায় গাড়ি দাঁড়াতে হয়নি। আমরা এখন স্বস্তিতে আছি। ঈদের পরও আমরা এমন পরিবেশ চাই।
হানিফ পরিবহনের চালক বেলায়েত হোসেন জানান, ঢাকা থেকে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট নেই। আশা করছি স্বাভাবিক নিয়মেই গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারবো। যাত্রীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারলে আমাদেরও ভালো লাগে। কুমিল্লাগামী বাসযাত্রী মেহরাব হোসেন বলেন, গত কয়েকটি মাস সড়ক সংস্কারের কারণে প্রায়ই যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দের।
স্টার লাইন পরিবহনের চালক দেলোয়ার বলেন, গত ঈদুল ফিতরের আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সংস্কারকাজ, মহাসড়কের পাশে বাজার থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে যানজটে আটকে থাকার আশঙ্কা ছিল। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছেছে মানুষ। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল মহাসড়কে অতিরিক্ত বাস ও পণ্য পরিবহন কম থাকা। আবার মোটরসাইকেলের কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছিল। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি বলে আমরা মনে করি। তাই এবারের ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার বিষয়টি সামনে রেখে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি মনে করলেও মোটর বাইক চালক সালাউদ্দিন সুমনসহ অনেকে বলছেন, বাসের ব্যবসা চাঙ্গা করতেই মোটরসাইকেল বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে অভিজ্ঞমহল বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে চালকেরা নিয়ম মানছেন না। চালক ও আরোহীরা হেলমেট ব্যবহার করে না। এক মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি না ওঠার নিয়মটিও মানা হয় না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলও অহরহ চলে। অনেকেরই মোটরসাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ থাকে না। আমরা মনে করি মোটরসাইকেল সড়কে নামানোর অনুমতি এবং চালকের অনুমতিপত্র দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি আরোপ প্রয়োজন।
এদিকে মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন বাজারের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব বিষয়েও পুলিশ তৎপর থাকবে বলে জানা গেছে। চৌদ্দগ্রাম এলাকার আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের কোনও অংশে যানজট নেই। তিশা পরিবহনের চালক তোফায়েল হোসেন বলেন, টোল কাউন্টারের কাছে সামান্য যানজট রয়েছে। এছাড়া পুরো সড়ক খালি রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা গ্রীনলাইন পরিবহনের যাত্রী আবদুর রহমান বলেছেন, মাত্র দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা আসলাম। ঈদ মৌসুমে এত কম সময়ে এর আগে মনে হয় না আসতে পেরেছি।
এদিকে মহাসড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। ঈদকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ভিন্ন উদ্যোগ। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের যেকোনও অংশে দুর্ঘটনার খবর পেলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে যেন ঘটনাস্থলে যেতে পারে তার জন্য গঠন করা হয়েছে ১৫টি কুইক রেসপন্স টিম। এই টিমের আছে পাঁচটি রেকার, যা ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের পূর্বাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কের টোল প্লাজায় কিছুটা ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। এছাড়া গত দুই বছর কোরবানির ঈদে গরু ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্তে যেতে পারেনি। এই কোরবানির ঈদ আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। কেননা এবার তারা দূর-দূরান্তে গরু নিয়ে যাবে। তাই তাদের যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, গত ঈদে সামান্য জনবল সঙ্কট থাকলেও এবার হাইওয়ে পুলিশের কোনও জনবল সঙ্কট নেই। আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে ৬০ জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য। এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি রোধে পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক নেতাদেরও সোচ্চার থাকতে বলেছি। যেসব বাজার দিয়ে সাধারণ মানুষ মহাসড়ক পার হয়, সেসব বাজারে আমাদের বিশেষ নজরদারি থাকবে। পুরো মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও বাড়তি আরও ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স রেখেছি। যাতে করে দুর্ঘটনায় কবলিতদের দ্রুত হাসপাতাল নেয়া যায়। মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্নে ও সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য আমাদের ৩৪টি মোবাইল টিম মাঠে থাকবে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, হাইওয়ে পুলিশের সাথে আমাদের ৪০ জন সদস্য সার্বক্ষণিক থাকবে। মহাসড়কের কোনও অংশ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করা হবে। ৭ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। চান্দিনা ও গৌরিপুরের বিশেষ কিছু অংশ সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাই এবার যানজটের সম্ভাবনা নেই বলা চলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।