পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঈদের আর আর দশ দিন বাকি। ইতোমধ্যে ঘরমুখো মানুষের যাওযার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অগ্রিম বাসের টিকেট ছাড়া হয়েছে। এক-দুই দিনের মধ্যে ট্রেনেরও অগ্রিম টিকেট ছাড়া হবে। বাসের অগ্রিম টিকেট কেনা নিয়ে যাত্রীদের চিরাচরিত সেই সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। টিকেটের অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে। ঈদ এলেই বাস কোম্পানিগুলো বাসের টিকেটের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তাই করেছে। টিকেট প্রতি একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ফিরতি পথে যাত্রী না পাওয়া। যাত্রীদের দাবিও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেয়া দরকার। সরকারের উচিৎ বাসের টিকেটের দাম মান অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেয়া যাতে যাত্রীরা স্বস্তিতে ও সাশ্রয়ে যাতায়াত করতে পারে। পুলিশের আইজিপি ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের প্রতিটি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ঘুরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারি সংস্থাগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংগটনটি চিঠি দিয়েছে।
ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে দুর্ঘটনায় নিপতিত না হওয়া। এটাকেই সবসময় প্রাধান্য দেয়া হয় এবং দেয়া উচিৎ। তবে শুধু দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলাই যাত্রীদের ভ্রমণের একমাত্র স্বস্তিদায়ক বিষয় নয়। এর সাথে যানবাহনের টিকেটের সহজলভ্যতা, ন্যায্য দামে পাওয়া, যাতায়াতের পথ মসৃণ হওয়া, যানজট মুক্ত থাকা, ভ্রমণকে আরামদায়ক করা, মালসামানের নিরাপত্তা এবং চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি থেকেও মুক্ত থাকার বিষয় জড়িত। এসব বিষয় বড় হয়ে দেখা দেয় ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের সময়। প্রতি বছরই মানুষের পথে পথে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কোনো কোনো সড়ক-মহাসড়কে মাইলের পর মাইল যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এর উপর দুর্ঘটনা তো রয়েছেই। গত দুই বছর করোনার কারণে অনেক মানুষই বাড়ি যেতে পারেনি। কেউ কেউ নানা দুর্ভোগ উপেক্ষা করে নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছে। এবার করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক মানুষ এবার ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাবে। শুধু রাজধানী থেকেই ষাট-সত্তুর লাখ মানুষ গ্রামে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমারে যাত্রীদের ব্যাপক সমাগম ও ভীড় বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। রাজধানী ছেড়ে যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তাদের বাসা-বাড়ির জিনিসপত্রের নিরাপত্তার কথা ভেবে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার আত্মীয়-স্বজন বা পুলিশের কাছে রেখে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এটা এক ধরনের নিরাপত্তার বিষয় হতে পারে, তবে তা পুলিশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দায়িত্ব শিথিল করে না। ঈদের সময় মহাসড়কে চাঁদাবাজির মহোৎসব শুরু হয়। যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে পণ্যবাহী ট্রাককে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। এতে বাস মালিকরা প্রদেয় চাঁদার ভার টিকেটের দাম বাড়িয়ে যাত্রীদের উপর চাপিয়ে দেয়। একইভাবে পণ্যের বাড়তি দাম ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে তুলে নেয়। দেখা যায়, সবদিক থেকেই ক্ষতিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এবার জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় অনেকের পক্ষেই স্বচ্ছন্দে রোজা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে আয় কমে যাওয়া, আরেক দিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন অনেকের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে টিকেটের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি। এসব বিবেচনায় সরকারের উচিৎ ঘুরমুখো মানুষের যাতায়াত স্বস্তিদায়ক করতে সব রকম উদ্যোগ নেয়া।
উন্নত বিশ্বে যাতায়াত ব্যবস্থা এতটাই মসৃণ যে যাত্রীদের কখনো বাস, ট্রেন বা অন্যকোনো যানবাহনের টিকেট পাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। সবকিছুই সরল রেখায় চলে। যাত্রীদের কোনো ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। যখন খুশি তখন তারা যেতে পারে এবং সহজে টিকেট কেটে যানবাহনে উঠে যেতে পারে। পার্শ্ববর্তী ভারতেও গণপরিবহণে যথেষ্ট শৃঙ্খলা রয়েছে। আমরা উন্নতি করছি বললেও আমাদের যানবাহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা এতটাই যে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এখানে যাত্রীরা যানবাহন কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে থাকে। সেবা বলতে যাত্রীরা কিছু পায় না। অথচ অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়। এমতাবস্থায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও তদারকি অত্যাবশ্যক। বাস, রেল, নৌ টিকেট ন্যায্য দামে পাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীদের সহায়তা করার বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি স্টেশনে যাতে যাত্রীরা স্বস্তিতে যানবাহনে উঠে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে, এ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোথায় কী কারণে যানজট লাগে এবং লাগতে পারে, সেসব প্রতিবন্ধকতা আগেই দূর করতে হবে। চালকরা যাতে অধিক ট্রিপ পাওয়ার আশায় তাড়াহুড়ো বা বেসামাল হয়ে গাড়ি না চালায়, এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক করতে হবে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার সব ধরনের সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। যাত্রীদেরও তাড়াহুড়ো বা গাদাগাদি করে যানবাহনে উঠা পরিহার করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।