Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সন্ত্রাসীদের হাতে নগরবাসী জিম্মি হতে পারে না

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

সরকারের কঠোর অবস্থান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বিগত বছরগুলোতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অনেকটাই কোনঠাসা অবস্থায় ছিল। প্রকাশ্যে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারছিল না। জেলে কিংবা দেশের বাইরে থেকে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের সদস্যদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। তবে সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের অনেকের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের প্রকাশ্যে আগমনের জানান দিচ্ছে। এমনকি তাদের সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর নির্বাচন করে এবং কেউ কেউ নির্বাচিতও হয়। ফলে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিজ নিজ এলাকায় এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের পথ খুলে গেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থিত কাউন্সিলররা প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী থেকে শুরু করে এলাকার লোকজনদের হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজনের নামে তাদের শক্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে। নির্বাচনের পর মোহাম্মদপুরে এক নির্বাচনী এজেন্টকে খুন হয়েছে, এমনকি পুলিশের ওপরও হামলা হয়েছে। কোনো কোনো সন্ত্রাসী নিজ এলাকার ওসির সাথে ছবি তুলে তার ক্ষমতার জানান দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

একটা সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দাপটে এলাকাবাসী তটস্থ অবস্থায় থাকত। ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে এক এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীর সাথে আরেক এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীর দ্বন্দ্বে অনেক খুন-খারাবির ঘটনা অহরহ ঘটত। শীর্ষ ২২ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ ও ধরিয়ে দেয়ার ঘোষণা এবং র‌্যাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সাঁড়াশি অভিযানে কোনো কোনো এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্রস ফায়ারের শিকার হয়, কেউ কেউ ধরা পড়ে। এরপর থেকে অন্যান্য শীর্ষ সন্ত্রাসীর কেউ দেশ ছেড়ে পালায়, কেউ গা ঢাকা দেয়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসে। তারপরও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেলে থেকে কিংবা বিদেশ থেকে তাদের সাগরেদদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতায় তাদের এ অপকর্ম অনেকটা গোপনেই চলতে থাকে। তবে এবারের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন যেন তাদের প্রকাশ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে যোগসাজশে তারা নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়ে। সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া কাউন্সিলররাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে যারা নির্বাচিত হয়েছে, তাদের ওপর ভর করেই সন্ত্রাসীরা এখন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমে উঠেপড়ে লেগেছে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম না ঘটলেও নির্বাচনের পর সন্ত্রাসীরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। অথচ বিগত বছরগুলোতে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসনির্ভর এলাকাগুলোতে মানুষ স্বস্তিতে ছিল। নির্বাচনের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকিতে এই স্বস্তির পরিবেশ এখন উধাও হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও এলাকায় থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সন্ত্রাসীদের সমর্থিত প্রার্থী যখন বিজয়ী হয়, তখন সংশ্লিষ্ট এলাকায় শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ থাকার কারণ থাকতে পারে না। এমন অনেক কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। তাদের সাথে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মিলনমেলা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কী পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, তার আলামত ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়ে উঠেছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নতুন করে যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রæত অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এখন থেকেই যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান না নেয়, তবে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকা সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও কঠোর অবস্থান নেয়া দরকার। যেসব কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাদের ব্যাপারে সরকারকে তার দলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করা হলে, সন্ত্রাসীদের উৎপাতে নানা সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। যেসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে, তাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দমনে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। জনপ্রতিনিধি যে কোনো দলেরই হতে পারে। তাতে কারো আপত্তি করার কিছু নেই। তবে খুনী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজের মতো অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। তাদের কাছে নগরবাসী জিম্মি হয়ে থাকবেতা মোটেই সমর্থন ও বরদাশতযোগ্য নয়। কাজেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা ধরে এবং নতুন যেসব সন্ত্রাসী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে হবে। মুজিব বর্ষে, অনেক ভাল উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, এ বর্ষে সন্ত্রাসীদের উৎপাতে যাতে শান্তি বিঘ্নিত না হয় এবং নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করে, এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাস


আরও
আরও পড়ুন