পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময় ছিল প্রায় শতভাগ কৃষিনির্ভর। এখন শিল্পের হিস্যাই বেশি। দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও শিল্প খাতের অবদান অনস্বীকার্য। গত তিন দশক ধরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নীরব বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে বাংলাদেশে। তারই সুফল হিসেবে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। প্রসাধনসামগ্রী থেকে শুরু করে বাইসাইকেল, খেলনা, চামড়া ও প্লাস্টিকের জুতা-স্যান্ডেল, এমনকি সিরামিকের তৈজসপত্র পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে সেখানে। পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার এলাকার তৈরি কয়েক শ’ ধরনের দেয়ালঘড়ি এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ, মাতুয়াইল, পাগলা, জুরাইনসহ পুরান ঢাকার মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা ও ধারেকাছের ৬-৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। তাওয়াপট্টি, টিনপট্টি, আগানগর, বাঁশপট্টি, কাঠপট্টি, থানাঘাট, ফেরিঘাট এলাকার বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ২ হাজার ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পের কারখানা। ফ্লাস্ক থেকে মোবাইল ফোনসেট পর্যন্ত সবকিছুই তৈরি হচ্ছে এখানে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মালামাল তৈরি করছেন লেখাপড়া না জানা কারিগররা। স্থানীয়ভাবে তাদের ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামেই ডাকা হয়।
ইঞ্জিন-যন্ত্রাংশ, গাড়ির ক্ষুদ্র পার্টসসহ প্রায় ২০০ ধরনের মেশিনারিজ উৎপাদন ও বাজারজাতের বিশাল সম্ভাবনার খাত হয়ে উঠেছে ‘ধোলাইখাল ব্র্যান্ড’। এ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত পাঁচ লক্ষাধিক লোকের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে এখান থেকে। ধোলাইখাল ব্র্যান্ডের কারিগররা বাইসাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি, ট্রাক্টর, ক্রেন, রিরোলিং মিল, এমনকি ট্রেনের বগিসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ অনায়াসে প্রস্তুত করছেন। বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহাবুবুল আলম বলেন, দেশের এ হালকা প্রকৌশল শিল্পে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে ১৩৭টি আইটেম রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৭টি দেশে। পুরান ঢাকার মৈশুন্ডি, নবাবপুর, টিপু সুলতান রোড, বনগ্রাম, ওয়ারী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ শিল্পের বিস্তৃতি ঘটেছে। ধোলাইখাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অর্ধলক্ষাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বা হালকা প্রকৌশল শিল্পের নানা স্থাপনা।
উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ায় কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ঘটে গেছে নীরব বিপ্লব। বিসিক শিল্পনগরীসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির সাত শতাধিক কল-কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে পানির পাম্প, টিউবওয়েল, শ্যালো ইঞ্জিনের লাইনার, পিস্টন, পাওয়ার টিলার, ধান ও ভুট্টা মাড়াই মেশিনসহ সব কৃষি উপকরণ। এ ছাড়া প্ল্যানার, ক্রাঙ্ক শ্যাফট গ্রানডিং, মিলিং, সেপার, বোরিং মেশিন, লেদ মেশিন, স’ মেশিন ইত্যাদি তৈরি হয়। বগুড়ার বিসিক, গোহাইল রোড, স্টেশন রোড, রেলওয়ে মার্কেট, সান্তাহারসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানাগুলোর উৎপাদিত যন্ত্রাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যেতে হলে দরকার পাম্প টেস্টিং সেন্টার, হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, মডেল ওয়ার্কশপ নির্মাণ।
সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র, হালকা ও মাঝারি আকারের শিল্পকারখানা রয়েছে ৮৭ হাজারের বেশি। ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের হালকা প্রকৌশল শিল্পে প্রতি বছর টার্নওভার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ২৫০ কোটি টাকার বেশি। এসব শিল্পকারখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩৫ লাখ কর্মীসহ দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। ঢাকার বাইরে বগুড়া, যশোর, পাবনায় গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র মেশিনারিজ শিল্পের বিশাল পল্লী। এসব ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার অভাবনীয় মেধার খুদে কারিগরদের দক্ষতা সত্যিকার অর্থেই অবাক করার মতো। মেধাবী এসব কারিগরের দাবি, সরকারি অনুমোদন ও পুঁজি সহায়তা পেলে তারা অত্যাধুনিক ড্রোন-রোবটও তৈরি করতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে জিনজিরাকেন্দ্রিক খুদে কারখানাগুলোয় বছরে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। জিনজিরাকে অনুসরণ করে দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিল্পকারখানা। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিল্পায়নের এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।