পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মাসের পর মাস বন্ধ ছিল ব্যবসা। করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধের বেড়াজালে ব্যবসা গুটিয়েছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কেউ আবার ধার-কর্য করে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে নেমেছেন। এর মাঝে আবার আকাশে কালো মেঘের মতো জমছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের শঙ্কা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের শঙ্কা এমন অবস্থায় নতুন বিধিনিষেধ বা নির্দেশনার প্রভাবে ভেঙে পড়তে পারে তাঁদের জীবিকার পথ।
ঢাকার গাউসিয়া মার্কেটের সামনে ফুটপাতে অর্ধযুগ ধরে কাপড় বিক্রি করেন মহিউদ্দীন সুমন। গত দেড় বছরের মতো দু:সময় কখনো আসেনি তাঁর জীবনে। মাসের পর মাস ব্যবসা বন্ধ থাকায় সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন। পরে ধার-কর্য করতে হয়েছে। লকডাউন তুলে নেয়ার পর নতুন করে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালু করেছেন।
সুমন বলেন, আগের মতো ব্যবসা নেই। ধারই এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। সরকারের সাহায্য সব বড় ব্যবসায়ীদের জন্য। বড়লোকেদের জন্য।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, গত দুই বছরে ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। মাঝারি সারির ব্যবসায়ীরা নিম্ন সারিতে নেমেছেন। আর নিম্ন বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়েছেন। কেউ ধার-কর্য নিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করলেও সরকারি সহযোগিতা পেয়েছে সামান্য।
এদিকে নানা রকম বিধি নিষেধের বেড়াজালে আরো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এই প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। একদিকে নেই ব্যবসার কোনো স্থায়ী অর্থসংস্থান, নেই স্থায়ী জায়গা। অন্যদিকে, নিত্যনতুন নির্দেশনা এখন খড়গ হয়ে নামছে তাদের ওপর। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি প্রস্তাবনা আসে; একটি হলো এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুচরা সিগারেট বিক্রি করতে পারবে না। অন্যদিকে, তামাকপণ্য বিক্রি করতে এই প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের নিতে হবে আলাদা বা দ্বৈত লাইসেন্স। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর বিধি নিষেধ প্রয়োগ করে তামাক ব্যবহারকারীদের কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। কিন্তু এর তীব্র প্রভাব পড়বে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর। সরকার যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন সহজ করে দিতে চাইছেন, সেখানে এ ধরণের প্রস্তাবনা সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্রদের মধ্যে অনেকে ট্রেড লাইসেন্স করে না। আমরা গত বছর আমাদের নেতা সালমান সাহেবের মাধ্যমে ক্ষুদ্র অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিনা আইডি কার্ডে বিনা জামানতে ৫০ হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিল ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো লোন কাউকে অনুমোদন দেয়া যাবে না। সে ক্ষুদ্র বা অতি ক্ষুদ্র হোক। আমরা তাদের উপকার করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।’ তিনি বলেন, এখন আবার তামাকের জন্য যদি পৃথক ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়, একজন ব্যবসায়ী কয়টা লাইসেন্স করবে। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর হয়তো ১৫/২০ হাজার টাকা পুঁজি। সে এক এক পণ্যের জন্য এক এক লাইসেন্স করবে, তার ওপর অনেক বোঝা হয়ে যাবে। জনগণের জন্যই সরকার কাজ করে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের জন্যই কাজ করে। জনগণের বিষয়টাও দেখতে হবে, তাদের ক্যাপাসিটি কতটুকু আছে। করোনার চাপ কিছুটা কমলে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মুভমেন্ট শুরু করলে, আমরা তার সাথে বসব, তিনি আমাদের কথা বিবেচনা করবেন আশা করি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১৫ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা, অতি ক্ষুদ্র পুঁজি ও আয়ের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, লাইসেন্সসহ, বিভিন্ন আইনের বোঝা সরিয়ে নেয়া গেলে, এই ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। আর্থিক সঙ্গতি নিশ্চিত করা গেলে এক সময় এই ব্যবসায়ীরাই হয়তো অন্তর্ভুক্ত হবেন ফরমাল সেক্টরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।