পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যশোরের চৌগাছায় এনজিওর কিস্তি (ক্ষুদ্র ঋণ) এর টাকা দিতে না পেরে করছে আত্মহত্যা, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেনের স্ত্রী লিপিয়ারা বেগম (৩১) এনজিওর কিস্তির টাকা দিতে না পারাই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। লিপি কয়েকটি এনজিওর কিস্তি খেলাপি ছিল। কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এনজিও কর্মীরা লিপিকে নানা ভাবে কটুকথা ও অপদস্ত করে আসছিল। তিনি উপায়ান্তর পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। উজেলার যাত্রাপুর গ্রামের ইছাহক আলী দফাদার (৪৫) এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বন্ধু কল্যাণ সমিতি নামে একটি এনজিওর কিস্তির টাকা দিতে না পারাই উপজেলার দুলালপুর গ্রামের হিরোক নামে এক যুবককে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন এনজিওর লোকজন। এমনিভাবে এনজিওগুলোর ঋণের ফাঁদে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২৯ গ্রামেই এ সকল এনজিও’র কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া গ্রামে গ্রামে রয়েছে মহাজনী দাদন ব্যবসা। মহাজনদের সুদের টাকা নির্দিষ্ট হারে আদায় করার জন্য লোকবলও নিয়োগ করা রয়েছে। এসব দাদন ব্যবসায়ীরা মাসিক শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে সুদের টাকা লিখিত অথবা মৌখিকভাবে দিয়ে থাকেন। সুদের সুদ অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধিহারে লভ্যাংশ আদায় করে থাকেন। ফলে একশ্রেণী হচ্ছে বিত্তশালী অন্যরা হচ্ছে নিঃস্ব। এনজিওর কিস্তি ও দাদনের সুদের টাকা দিতে না পেরে পরিবার পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেকে। দরিদ্রপীড়িত এসব মানুষ এনজিওগুলোর ঋণের চড়া সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, বসতিভিটা, জমি, হালের বলদ, টিনের ঘর, হাড়ি-পাতিল পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। তার পরও সেই দুর্ভেদ্য ফাঁদ থেকে বের হতে পারছেনা ভুক্তভোগি হতদরিদ্ররা।
চৌগাছাতে ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, জাগরণী চক্র, শক্তি ফাউন্ডেশন, সৃজনী বাংলাদেশ, আরআরএফ, আরআরসি, শিশুনিলয়, বাঁচতে শেখা, ব্যুরো বাংলাদেশ, বিআরডিপি, গ্রামীণ ব্যাংক, আদ্ব-দ্বীন, সবুজ বাংলা, বন্ধু কল্যাণ ফাউন্ডেশন, উত্তরণ, বনফুলসহ প্রায় অর্ধশতটি এনজিও তাদের ঋণকার্যক্রম চালিয়ে আসছে। অনুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের ষষ্টির ছেলে সুমন, কুলি গ্রামের প্রসেনজিৎ, ধুলিয়ানী গ্রামের ইদ্রিস আলী, বড়খানপুর গ্রামের সবেদ আলী, যাত্রাপুর গ্রামের সাধন, টেঙ্গুরপুর গ্রামের তসলিম আলীর ছেলে হাশেম আলী, পৌর শহরের শৈলেন মিস্ত্রীসহ অনেকে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে তরিকুর ইসলাম পৌর কলেজের অধ্যক্ষ মুনজুরুল আলম লিটু জানান, গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ রোগব্যাধির চিকিৎসা, মেয়ের বিয়ে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, বিদেশ প্রেরণসহ বিভিন্ন আপদে-বিপদে এনজিও ও মহাজনদের নিকট থেকে চড়া সুদের ঋণ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকরা কৃষি মৌসুমকে সামনে রেখে সার, শ্রমিক খরচ, সেচ খরচ, জমি লিজ নিতে গ্রাম্য সুদে মহাজনদের দারস্থ হন।
চৌগাছা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম জানান অনেক চাকুরিজীবি ও ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে চেক বন্ধক রেখে শতকরা ১৫ থেকে ২০ টাকা সাপ্তাহিক, মাসিক সুদের লাভের টাকা পরিশোধ করার শর্তে মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে থাকে। এমনও অভিযোগ আছে ঋণগ্রহীতা কোনো ব্যক্তি মারা গেলে এনজিও কিস্তি কিংবা মহাজনের সুদের টাকা না নিয়ে কর্মীরা ফিরেন না। সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাদের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। চৌগাছা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি-অধ্যাপক অর্থনীতিবীদ কামাল হোসেন বলেন এনজিও ও মহাজনদের সুদের টাকা বিনিয়োগের কোন নীতিমালা নেই। তাই তারা ইচ্ছা মত সুদ গ্রহণ করে চলেছে। ফলে এনজিও ও মহাজনী ঋণে গ্রামীণ অর্থনীতির পারিবারিক ব্যবস্থার উপর কঠিন ভাবে আঘাত হেনেছে।
উপজেলার চাঁদপাড়া, হাজিপুর, বড়খাঁনপুর, টেঙ্গুরপুর, আন্দারকোটা, আন্দুলিয়া, বল্লভপুর, মাকাপুর, সুখপুকুরিয়া, রামকৃষ্ণপুর, পৌর এলাকার বিশ্বাসপাড়া, ইছাপুর, ঋষিপাড়া, বেলেমাঠ, মাঠপাড়া সুদখোর গ্রাম নামে পরিচিত। মাত্রাতিরিক্ত সুদের প্রচলন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যাথা নেই।
এ ব্যাপারে বন্ধু কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চৌগাছা শাখার ম্যানেজার এনামুল হক বলেন আমরা আহত ব্যাক্তিকে চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেছি। তিনি বর্তমানে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। আমি কিছু দিন আগে দেখতে তার বাড়ীতেও গিয়ে ছিলাম। থানায় বসে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।