শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ফেব্রুয়ারি মাস সমাগত,আমাদের ভাষার মাস।মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং বইমেলা আমাদের দ্বারে কড়া নাড়ছে।সারাবছর বই নিয়ে মাতামাতি না থাকলেও ভাষার এই মাসটিকে ঘিরে বাঙালি জাতি বই নিয়ে কমবেশি মেতে ওঠেন উৎসবে। বাংলা একাডেমির ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র পাশাপাশি দেশের নানাপ্রান্তে বইমেলার চমৎকার সব আয়োজন চোখে পড়ে। প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী এসব মেলায় এসে আনন্দ খোজেন। অনেকে বইও কেনেন। কবি সাহিত্যিক লেখকের নতুন নতুন বই প্রকাশিত হয় বিচিত্র বিষয়ে। প্রকাশকেরা ব্যস্ত থাকেন নতুন বই প্রকাশে। হাজারো বইয়ের ভীড়ে কালজয়ী কিছু বইও আমরা হাতে পেয়ে থাকি এসময়টায়। লেখক পাঠকের মেলবন্ধন চলে মাসজুড়ে। আয়োজন চলে নানা বক্তৃতা ও কথামালার।শহিদ মিনার জুড়ে আয়োজন চলে আবৃত্তি, গান, নাটকসহ নানা অনুষ্ঠানের।বাঙালি এসময় নিজেকে, নিজের অস্তিত্বকে আবিষ্কার করে নতুনভাবে। নতুন প্রজন্ম তার ইতিহাসকে খুঁজে পায়। মাসটি বিদেয় নেয়ার সাথে সাথে এর মুল আবেদন কমতে থাকে আবারও।কিছু মানুষ আবার এ মাসটিকে উপজীব্য করে বইয়ের জগতের একজন নান্দনিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে প্রয়াস পান।বইকে ভালোবেসে ছড়িয়ে দেন বইয়ের আলো চারিদিকে।
পৃথিবীর নানা দেশের মানুষ এখনও বই পড়েন। গাড়িতে, বাসে, ট্রেনে, প্লেনে, জাহাজে চলমান অবস্থায়ও বই পড়েন। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে বই উপহার দেন। দুরে কোথাও ভ্রমণে গেলে তাদের সাথে থাকে অন্তত একটি বই।আমাদের দেশের অনেকের ভেতর এমন অভ্যাসটি এখনও বিদ্যমান।দৃশ্যটি বড়ই সুখকর। নতুনতর অনেককিছুর ভীড়ে তাইতো বইপড়া কখনও শেষ হবার নয়।অথচ, আমাদের দেশের অধিকাংশ বইয়ের লাইব্রেরি দিনদিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।অবহেলায় থাক থাক বইগুলো নীরবে পড়ে থাকছে অযত্ম অবহেলায়।বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় লাইব্রেরি থাকলেও তার অধিকাংশই এখন ধুলোবালি ও উইপোকা’র দখলে। সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকার অপচয় হচ্ছে মাত্র। লাইব্রেরিয়ান আছেন, অথচ তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেননা।কমিটিগুলো সক্রিয় নন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিমুখো করা হচ্ছেনা।অনেকাংশে শিক্ষকেরাও বইয়ের লাইব্রেরিতে যাননা,বই পড়ার আগ্রহ দেখাননা, বই পড়েননা।যা অতীব দুঃখজনক ও জাতির জন্য লজ্জাকর। লাইব্রেরিয়ান অন্যকাজে ব্যস্ত থাকছেন। বিভিন্ন লাইব্রেরির বই লুট হয়ে যাচ্ছে।অনেক জায়গায় লাইব্রেরির পধৎবঃধশবৎ বেতন-ভাতা ঠিকমত না পেয়ে স্বল্পদামে বইগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনাদরে অবহেলায় আসবাবগুলো জরাজীর্ণ। এমন নানা উদাহরণ আমাদের সামনে উপস্থিত রয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানেনইনা, তাদের প্রতিষ্ঠানে একটি বইয়ের লাইব্রেরি রয়েছে। শহর বাজারের বইয়ের লাইব্রেরিগুলো গাইড বই দিয়ে ঠাসা।সেখানে সাহিত্যমুল্য রয়েছে এমন কোনও বই পাওয়া যায়না।একসময় কিছু সাহিত্যের বইপুস্তক পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা একপ্রকার উঠে গেছেই বলা চলে।
পড়াশুনার জন্য নানা প্রযুক্তি তৈরি হলেও বইয়ের বিকল্প এখনও বই›ই।কাগজের পাতার যে সোদা মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ, তা পাঠককে নিবিষ্ট করে রাখে প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে,শব্দে শব্দে।কাগজের পাতায় পাতায় একধরনের মায়া খেলা করে,ভালোবাসায় আবিষ্ট করে রাখে।তাইতো,আমরা এখনও কমবেশি বই পড়ি।সারাবছর আমরা যদি সেই আগের মতো বইকে, পাঠ্যাভাসকে জনপ্রিয় করতে চাই,তাহলে আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।জাতীয়ভাবে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।এ এক ধারাবাহিক নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।বইকে কেন্দ্র করে জাতীয় জাগরণ ঘটাতে হবে।সামাজিকভাবে আমরা সাধারণ মানুষ নানাভাবে বইকে,পাঠ্যাভাসকে জনপ্রিয় করতে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিতে পারি খুব সহজেই। এজন্য দরকার দেশের নেতৃস্থানীয় মানুষের সদিচ্ছা, শিক্ষক সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল আচরণ।কর্তৃপক্ষের নিরলস তদারকিতে সচল হয়ে উঠতে পারে এমনতর মহান কর্মযজ্ঞ। শুধুমাত্র একটি দিবস দায়সারাভাবে পালন করলেই চলবেনা শুধু। একে গুরুত্ব দিতে হবে, অবহেলা করা যাবেনা কোনোভাবেই।সরকারি লাইব্রেরিগুলোয় অবহেলার চিহ্নগুলো মুছে দিতে হবে।
বইকে জনপ্রিয় করতে আমরা সারাবছর শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে পারি।উপহার হিসাবে বইকে বেছে নিতে পারি।নানা উপলক্ষে বইকে উপহার হিসেবে বেছে নিয়ে একটি জ্ঞানবান্ধব জনসমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারি। পাড়া মহলার লাইব্রেরিগুলোকে সময় দিয়ে পাঠাগার আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারি।নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে ‘বইবন্ধু’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি পরম ভালোবাসায়। বাড়িতে- বাসায়, অফিস-আদালতে, দোকান-প্রতিষ্ঠানে বইয়ের সংগ্রহ গড়ে তুলতে পারি।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতামুলক বিষয়ের পুরষ্কার হিসেবে বইকে বেছে নিতে পারি,বাধ্যতামুলকভাবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিংবা সমাজের সর্বত্র বইয়ের ব্যবহারকে জনপ্রিয় করতে এজন্য রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
আমরা যারা বইমেলায় যাই, তারা যেনো শুধু বইমেলায় আড্ডা না দেই, অন্তত একজন মানুষ একটি করে হলেও যেনো বই কিনি।মেলায় আগত অতিথিরা শুধুমাত্র বক্তৃতা দিয়েই যেনো চলে না যাই,একটি করে হলেও যেনো বই কিনি। বই পড়ার অভ্যাশটি আবার ফিরিয়ে আনি। জানি,কাজটি কঠিন,কিন্তু সম্ভবপর,অসম্ভব নয় একটুও।আরও জানি,মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত,ভীষণ ব্যস্ত।বইপড়াকে অনেকেই এখন ‘ষড়ংং ঢ়ৎড়লবপঃ’ মনে করেন।টাকা-পয়সার দিকেই মানুষের এখন ঝোঁক বেশি।ভোগবাদী সমাজব্যবস্হা মানুষকে সেদিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চুড়ান্তবিচারে বিষয়টি বোধহয় সঠিক নয়। আপনার প্রিয় সন্তানটি বই পাঠে অভ্যস্ত হলে আপনারই লাভ, সমাজেরই লাভ, রাষ্ট্রেরই লাভ, মনুষ্যত্বেরই জয়। নইলে সন্তানটি আখেরে টাকা রহপড়সব করলেও, আপনার জন্য সে একদিন দুঃসহ বোঝা হয়েও উঠতে পারে,সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।যার নমুনা ইতোমধ্যেই সর্বত্র ক্রিয়াশীল। বইপড়া মানুষগুলো সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে, বিবেকবান মানুষ হিসেবে নৈতিকতা নির্ভর মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।