পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একদিকে ইরানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সর্ম্পকের টানপোড়েন, উত্তেজনা, দ্বন্দ-সংঘাত নতুন আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে, অন্যদিকে অব্যাহত উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্যেও অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকায় নতুন নতুন ইহুতি বসতি ও স্থাপনা গড়ে তোলার গতি বাড়াচ্ছে। এটাই ইহুদি জায়নবাদি সম্প্রসারণবাদ বা এক্সপানশনিজম। ইঙ্গ-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ মদদে গত ৭০ বছর ধরে এটা চলছে। আন্তর্জাতিক আইন, বিশ্বসম্প্রদায়ের মতামত ও সিদ্ধান্ত, আইনের শাসন, সাম্য-মৈত্রী ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার মূল্যবোধ এখানে যেন অচল। দশকের পর দশক ধরে চলা ইসরাইলী দখলদারিত্ব ও সম্প্রসারণবাদী তৎপরতায় মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের নির্লজ্জ পক্ষপাতের কারণে বিশ্বসম্প্রদায় কখনো নিরব, কখনো অসহায়। আজকের বিশ্বব্যবস্থায় যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও ভঙ্গুরতা দেখা দিয়েছে তার পেছনে কাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি জায়নবাদের সম্প্রসারণবাদি পরিকল্পনা ও পশ্চিমা মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্সের স্বার্থ। রক্তপাত, দখলদারিত্ব ও কোটি কোটি মানুষের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা হরণের মধ্য দিয়ে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো এ স্বার্থ রক্ষা করছে। মধ্যপ্রাচ্যে এ অপতৎপরতার পেছনে কতটা সা¤্রাজ্যবাদের রাজনৈতিকÑঅর্থনৈতিক স্বার্থ আর কতটা ইসরাইলের ইহুদি জায়নবাদী স্বার্থ জড়িত তার অনুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইরান-ইরাক ও প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ থেকে শুরু করে সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধ পর্যন্ত গত তিন দশকে মধ্যপ্রাচ্যে যে সব যুদ্ধ-সংঘাতের জন্ম দেয়া হয়েছে তাতে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য সামরিক,অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বিজয় কিংবা স্বার্থ অর্জিত হয়নি। অবশ্য এসব ডামাডোলের মধ্যে ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক-রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ রিকনসিলিয়েশনের প্রত্যাশা ক্রমেই দূরে সরে গেছে। পক্ষান্তরে ইহুদি সম্প্রসারণবাদি তৎপরতা এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। ইসরাইলের আগ্রাসী সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রায় প্রতিদিনই ফিলিস্তিনী যুবক-তরুন শিশু ও নার দের রক্ত ঝরছে। শিক্ষা-দীক্ষা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এক সময়ের সবচেয়ে অগ্রসর আরব মুসলমানরা পশ্চিমা উপনিবেশবাদের শৃঙ্খলে পড়ে গত দুই শতাব্দীতে সবকিছু হারিয়েছে। ঔপনিবেশোত্তর আরব বিশ্ব তেলসম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ার পরও শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারেনি। এমনকি উসমানীয় খেলাফতের পতনের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রেও পশ্চিমারা বার বার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের সব প্রয়াস প্রচেষ্টাকে নীলনকশার মধ্য দিয়ে ভন্ডুল করে দিয়েছে। পঞ্চাশের দশকে ইরানের মোসাদ্দেক হোসেন ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের প্রথম জনগণের ভোটে নির্বাচিত শাসক। তিনি জনগণের দ্বারা নিবার্চিত হয়ে জনগণের সম্পদকে জনগণের স্বার্থে কাজে লাগানোর পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল সম্পদের উপর বৃটিশ কোম্পানীর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ খর্ব করে তেলক্ষেত্রগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণ করেন। এটাই ছিল তার মূল অপরাধ। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সিআইএ এবং বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স গ্রæপগুলোর পরিকল্পনায় ইরানে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থলে শাহের শাসনকে পুনরায় পাকাপোক্ত করা হয়। পাহলভি রাজবংশের শেষ শাসকরা বৃটেন-আমেরিকা এবং ইসরাইলের পুতুল হিসেবে কাজ করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে জায়নিষ্টদের সম্প্রসারণবাদী তৎপরতা এবং ইরানের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের মর্যাদাকে সমুন্নোত রাখার বদলে রেজা শাহের পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের পদলেহি ভূমিকার আমূল পরিবতর্নের জন্য ইসলামি বিপ্লবকেই চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল ইমাম খামেনি ও তার অনুসারীরা। কারণ তারা ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের হাজার বছরের ধারাবাহিক ইতিহাস ঐতিহ্য এবং মহাযুদ্ধ পরবর্তি পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার এজেন্ডা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যের জনসংখ্যা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন বা বাকি দুনিয়ার সাথে সমান্তরাল বা হুমকি নয়। তাহলে গত এক শতাব্দী ধরে বিশ্বের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রভ’মি হয়ে উঠল কেন? এর জবাব খুঁজতে আমাদেরকে হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হয়। সেখানে অবধারিতভাবেই আব্রাহামিক রিলিজিয়নের সূতিকাগার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য তথা জেরুজালেম-ফিলিস্তিন ও আরব উপদ্বীপের ইতিহাস এসে পড়ে। হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার বিকাশ ও বিস্তারে জুদাইজম, ক্রীশ্চানিজম এবং ইসলাম ধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল মধ্যপ্রাচ্যের জেরুজালেম নগরী থেকে। এ কারণে গত দুই হাজার বছরে বিশ্বের রাজনৈতিকÑঅর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বির্বতনে জেরুজালেম নগরীকে বিভিন্ন সময়ে ঘটনার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হতে দেখা যায়। রোমানদের হাতে ইহুদিদের টেম্পলের পতনের আগে অ্যাসিরিয়া-ব্যাবিলনীয়া সভ্যতার শেষদিকে ইরাকেব স¤্রাট নেবুচাঁদনেজার (খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী) তার সা¤্রাজ্য থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করেছিলেন। এরপর এক হাজার বছর ধরে ইহুদিরা রোমান, পারস্য এবং খৃষ্টান যাজকতন্ত্রের দ্বারা বার বার মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা মূলত একটি যাযাবর জাতিতে পরিনত হয়েছিল। যেখানেই তারা স্থায়ী বসত গেঁড়েছে সেখানেই মূল জাতিসত্তা এবং শাসকদের জন্য নানা সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে হিটলারের জার্মানী। হিটলারের ফ্যাসিবাদি বর্বরতাকে কেউ সমর্থন না করলেও রাশিয়া, জামানী, বৃটেনসহ ইউরেশিয়া অঞ্চলে অবস্থানরত ইহুদিরা সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের বাস্তবতাকে মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। রাশিয়া-বৃটেন, ফ্রান্স, আমেরিকাসহ বৃহদ শক্তিগুলোর ঐক্যের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটপরিবর্তন না ঘটলে হিটলারের নাজিপার্টি জার্মানীসহ ইউরোপের ইহুদিদেরকে মাদাগাস্কারে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। ইউরোপীয় ইহুদিদের আফ্রিকার মাদাগাস্কার দ্বীপে পুনর্বাসিত করার প্রথম প্রস্তাবটি এসেছিল জার্মান দার্শনিক পল দ্য লের্গাদের লেখায়। ১৯৪০ সালে নাজি প্রশাসনের ইহুদি বিষয়ক ডেস্কের শীর্ষ কর্মকর্তা ফ্রান্ৎস রাদিমাচের মাদাগাস্কারে ইহুদিদের জন্য স্বায়ত্বশাসিত কলোনি গড়ে তোলার প্রস্তাব জার্মান হেড কমান্ডের কাছে পেশ করার পর ইহুদি নেতারা তা সাদরেই গ্রহণ করেছিল বলে জানা যায়। অবশ্য এর ২৩ বছর আগে প্রধম মহাযুদ্ধের সময় বৃটিশ ইহুদিদের সমর্থন পেতে তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বালফোর তার বন্ধু ইহুদি কমিউনিটি নেতা আর্থার রথশিল্ডের কাছে লেখা একটি সংক্ষিপ্ত চিঠিতে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন আবাসভ’মি গড়ে তোলার একটি অবাস্তব প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেছিলেন। আরব মুসলমান বসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের ন্যুনতম সামাজিতক-রাজনৈতিক বাস্তবতা বিদ্যমান ছিল না। ১৯১৮ সালের বৃটিশ সেনশাসে ফিলিস্তিনে আরব মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৭ লাখের বেশি আর ইহুদির সংখ্যা ছিল ৫৬ হাজার। এ কারণেই হয়তো মাদাগাস্কার পরিকল্পনাকে অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছিল। তবে যুদ্ধের গতি প্রকৃতি হিটলারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এবং অক্ষশক্তির পতন নিশ্চিত হওয়ার পর মাদাগাস্কার দ্বীপে বৃটিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে হিটলারের মাদাগাস্কার পরিকল্পনা কার্যত বাতিল হয়ে যায়। লাখ লাখ ইহুদির হলোকষ্টের সম্মুখীন হওয়া এবং যুদ্ধের সামগ্রিক নৃশংসতা ও ভয়াবহতা এবং ফিলিস্তিনের উপর বৃটিশ ম্যান্ডেট নিয়ে নতুন চিন্তা-ভাবনার মধ্যে হলোকস্টের বিপরীতে পরবর্তি কয়েক বছরে ইঙ্গ-মার্কিন নীলনকশায় একটি নাকবা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। মহাযুদ্ধের সময় হিটলার লাখ লাখ ইহুদিকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন, আর যুদ্ধের পর শান্তির সময়ে পশ্চিমা মদতে বিনা উস্কানিতে ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়। ইহুদি মিলিশিয়া হাঘানা বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে লাখ লাখ আরব মুসলমানকে তাদের বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে শত শত ফিলিস্তিনি গ্রাম, জনপদ বুলডোজারে গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে ইহুদি বসতি গড়ে তোলে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশ কিছু ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে দরিদ্র আরবদের জায়গাজমি কিনে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এতে তাদের সাফল্য ছিল খুবই কম। আরব মুসলমানরা পশ্চিমা ইহুদিদের কাছে জমি বিক্রি করতে রাজি হয়নি। অবশেষে তারা বন্দুকের জোরে দখলদারিত্বের আশ্রয় গ্রহণ করে। এভাবেই চলছে ৭২ বছর। প্রধম মহাযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও জয়পরাজয়ের নেপথ্যে ইহুদি ব্যাঙ্কার, ধনকুবেরদের অর্থ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে জানা যায়। যুদ্ধ ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী ও লাখ লাখ মানুষের প্রাণঘাতি হয়ে উঠার চুড়ান্ত পরিণতি গ্রহণের আগেই রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সমঝোতা এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে যুদ্ধকে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক, প্রাণঘাতি করে তোলার নেপথ্যেও ইহুদিদের তৎপরতা কাজ করেছে। বিগত দুইটি মহাযুদ্ধের কোনোটিই মুসলমানদের কারণে বা মুসলমানদের দ্বারা সংঘটিত না হলেও দুই যুদ্ধে জাতিগতভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা। সারায়েভোর রেলস্টেশনে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজপুত আর্চডিউক ফ্রান্জ ফার্দিনান্দ ও তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছিল একজন সার্বীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মী গাব্রিলো প্রিন্সিপ। যুদ্ধে জার্মানী, জাপান, ইতালির সাথে উসমানীয় তুরস্কের রাজনৈতিক অবস্থানের বাইরে মুসলমানদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল না। তবে দুই মহাযুদ্ধের চুড়ান্ত পরিনতিতে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদিরা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে নতুন অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয় তার পশ্চাতে জায়নবাদি ইহুদিদের উচ্চাভিলাষি রাজনৈতিক নীল নকশা সক্রিয় ছিল। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার নামে যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় তার পেছনে দুইশ বছরের পুরনো ইহুদি ইলিউমিনাতি এজেন্ডা সক্রিয় আছে। দৃশ্যত কমিউনিজম এবং ইসলামি সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ইলিউমিনাতি পুঁজিবাদী এজেন্ডার মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে গণ্য হয়। ঊনবিংশ শতকে জায়নিস্ট ন্যাশনাল কংগ্রেস গঠনের মধ্য দিয়ে জায়নবাদি রাজনৈতিক এজেন্ডা গ্রহণের আগে ইহুদি প্রফেসর অ্যাডাম ওয়েলসাফ্ট ১৭৭৬ সালে ইলিউমিনাতি এজেন্ডা-২১ নামে যে রাজনৈতিক মহাপরিকল্পনার কথা লিখেছিলেন তার মূল প্রতিপাদ্য ছিল জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এডলফ হিটলার এই আদর্শকে গ্রহণ করেই নাজি পার্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি হিসেবে বিশ্বের উপর ইহুদিদের আধিপত্য নিশ্চিত করতে এহুদি এলিটরা বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০ কোটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপসহ পুরো বিশ্বের উপর পরোক্ষ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে ইলিউমিনাতি এজেন্ডা বাস্তবায়নের গোপণ প্রকল্প গ্রহণ করে। দেশ ও আঞ্চলিকভাবে বিভাজিত এই জনগোষ্ঠির রাজনৈতিক নেতা, শাসক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইলিউমিনাতি স্বার্র্থের পাপেট হিসেবে কাজ করবে। এটাই ছিল এজেন্ডা-২১ এর মূল লক্ষ্য। চলমান বিশ্বব্যবস্থায় ইলিউমিনাতিদের সেই এজেন্ডার বাস্তবায়নই দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়ের কথা তুলে ধরেছেন। এগুলো হচ্ছে-১. ক্রিয়েশন অব রেসিজম অফেন্স বা জাতিগত ও বর্ণবাদী সংঘাত বাড়িয়ে তোলা, ২. মানুষের মধ্যে সংশয়-সন্দেহ বাড়াতে অনবরত পরিবর্তনের জন্ম দেয়া, ৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বকে দুর্বল ও আস্থাহীন করে তোলা, ৪. শিশু-কিশোরদেরকে যৌণতা ও হোমোসেক্সুয়ালিটির প্রতি আসক্ত করে তোলা, ৫. জাতিগত আত্মপরিচয়ের বন্ধনকে ধ্বংস করতে ব্যাপক জনগোষ্ঠিকে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের পথে ঠেলে দেয়া, ৬. মাদকাসক্তি বৃদ্ধিতে ভ’মিকা পালন করা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া থেকে মানুষকে দূরে রাখতে পশ্চিমাদের চার্চে যাওয়ার অভ্যাস থেকে দূরে রাখা, ৭. অপরাধ বৃদ্ধির জন্য অনুকূল লিগ্যাল সিস্টেম চালুর পক্ষে কাজ করা, ৮. সরকারব্যবস্থা এবং সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টদের স্বার্থের উপর জনগণকে নির্ভরশীল করে তোলা, ৯. গণমাধ্যমের আধিক্য এবং এসবের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, ১০. পরিবার ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলা বা নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি সামাজিক এজেন্ডার মধ্য দিয়ে অশান্তি, অস্থিতিশীলতা, অবক্ষয়কে উস্কে দেয়ার পাশাপাশি জনসংখ্যা হ্রাস ও সামাজিক-রাজনৈতিক অগ্রগতিকে বাঁধাগ্রস্ত করার মধ্য দিয়ে তথাকথিত ইলিউমিনাতি এজেন্ডার বাস্তবায়ন চলছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে একটি জায়নিস্ট ডিক্লারেশনের কথা প্রকাশিত হয়, ‘প্রটোকল অব লার্নেড এল্ডার্স অব দি জিয়ন’ নামে পরিচিতি সেই ঘোষণায় জায়নিস্ট পন্ডিতরা যে সব পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরবর্তি শত বছর ধরে তারই প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে। প্রটোকল চার-এ বলা হয়েছে, শিশু মনস্তত্ব এবং মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাকে জায়নিস্ট মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রভাবিত করতে ছদ্মবেশি সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হবে। প্রথমে খৃষ্টধর্মকে টার্গেট করা হলেও পরবর্তিতে ইসলামসহ প্রতিটি ধর্মবিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাস ধ্বংসের পাশাপাশি সব সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষকে আস্থাহীন তোলার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। চার নম্বর প্রটোকলের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদের শিরোনাম দেয়া হয়েছে- ‘উই শ্যাল ডেস্ট্রয় গড’। সেখানে নন ইহুদি সবাইকে গয়িম বলে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরী করা হবে যখন সকলেই ধন সম্পদ আর ব্যবসা-বাণিজ্য, লাভের হিস্যা নিয়েই মশগুল থাকবে। প্রটোকল-৫ এর বিভিন্ন ধারায় বলা হয়েছে, সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে দেয়া হবে। দেশের সরকার এবং জনসাধারণ মিথ্যার দ্বারা পরিচালিত হবে। পুঁিজর পুঞ্জিভবন নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে একটি পুঁজিবাদী মনোপলি চালু করা হবে। সাত নম্বর প্রটোকলের ৩,৪,৫,৬ ধারায় ইউনিভার্সাল ওয়ারের কথা বলা হয়েছে, আর এ যুদ্ধে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনে সব গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই বিশ্বময় দেখা যাচ্ছে। আর এ সবই করা হবে জুইশ সুপার স্টেট গঠণের লক্ষ্যে। বিষয়টি এখন এতটাই স্পষ্ট এবং প্রকট যে, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করলে যে কোনো সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। জানুয়ারীর ২ তারিখে ইরানের আল কুদস বাহিনীর প্রধান কাসেম সুলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করার দায় গ্রহণ করে মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগন। তাৎক্ষনিকভাবেই ইরান এ হত্যার কঠোর প্রতিশোধ গ্রহণের ঘোষনা দেয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই ইরাকে অবস্থিত দুইটি মার্কিন সামরিক ঘাটিতে মিসাইল হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর আগে থেকেই ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন সিনেট ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ইম্পিচমেন্টের আর্টিকেলগুলো সাক্ষ্যপ্রমানে অকাট্যভাবে প্রমাণীত হতে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় ওয়াশিংটনে জায়নিস্টদের পুতুল প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য পতনের আগেই ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উড়ে গেছেন ওয়াশিংটনে। সেখানে ট্রাম্পের সাথে যে চুক্তি হয়েছে, এক কথায় তাকে তথাকথত ডিল অব দি সেঞ্চুরি বলে আখ্যায়িত করা যায়। এই চুক্তির আওতায় জেরজালেমের পুরো অংশসহ ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার অবশিষ্ট অংশের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ইসরাইলের দখলে নেয়ার কথা জানা যায়। উল্লেখ্য, গত ৫ দশকে গাজা ও পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ ভ‚মিতে এরই মধ্যে ইসরাইলী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিপূর্বে ফাঁস হয়ে যাওয়া এক রিপোর্টে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি নামের মার্কিন ইসরাইলী পরিকল্পনায় অর্থের বিনিময়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবী পরিত্যাগ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনি নেতারা তাৎক্ষনিকভাবেই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রভাববিস্তারকারী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সুলাইমানি হত্যার মধ্য দিয়ে মার্কিন ইসরাইলী সম্প্রসারণবাদী অন্তহীন যুদ্ধ নতুন ধাপে উন্নীত হল। ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্ট পাস হওয়ার আগেই কথিত ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি বিষয়ে চুড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আবারো এটাই প্রমাণীত হল, হোয়াইট হাউজে ক্ষমতার পালাবদলের চেয়ে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।