Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইরানের এলিট ফোর্স রেভল্যুশনারি গার্ডের শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার ভোরে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় তিনিসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। সোলাইমানিকে হত্যার এই নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, আরো অনেক আগেই সোলাইমানিকে হত্যা করা উচিত ছিল। সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তার মৃত্যুতে ইরান তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে। ইরানে এ হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। সোলাইমানির হত্যা ঘটনায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির দুইবারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়েছেন। এতে আমাদের সেনা ও দূতাবাসের কর্মীদের সুরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বড় ধরনের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলাম। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সোলাইমানির হত্যাকান্ডে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অশান্ত এবং যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে। এ আশঙ্কায়, চীন সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, সোলাইমানিকে হত্যা করায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যাবে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাসও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্য তার মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীকে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এসব প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, একটি ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের যে খড়গ ঝুলছে, তা থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে তিনি কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। নিজেকে ইমপিচমেন্ট থেকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেই তার এই কৌশল। ‘সোলাইমানিকে আরো আগেই হত্যা করা উচিত ছিল’, তার এই মন্তব্য থেকেই বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। কারণ সোলাইমানি মূলত যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সমর্থিত ইরাকে শিয়া শাসকদের পক্ষেই কাজ করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকেই হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, সোলাইমানি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া মিলিশিয়াদের সংগঠিত করা থেকে শুরু করে তাদের সবধরনের সহযোগিতা করে আসছিলেন। তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে একটি শিয়া সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা, যাতে যুক্তরাষ্ট্রেরও সমর্থনের মধ্যে রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্টশিপ রক্ষার জন্য সোলাইমানিকে হত্যা করে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এ ঝুঁকি যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে তেল ও স্বর্ণের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ বাঁধলে যে বিশ্ব অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে, তা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। বলা যায়, ট্রাম্প এক বিপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক বিপদ ডেকে এনেছেন। যদিও তিনি সর্বশেষ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, যুদ্ধ বাঁধাতে নয়, যুদ্ধ ঠেকাতে সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। আসন্ন যুদ্ধ বাঁধার আশঙ্কা টের পেয়ে যে ট্রাম্প তার সুর পাল্টেছেন তা তার এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়। ইরান যদি তার প্রতিজ্ঞা মোতাবেক পাল্টা প্রতিশোধ নেয় তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে। বিগত বিশ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিগ্রহে জড়িত থেকে দেশটি ইতোমধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খুইয়েছে এবং প্রায় পাঁচ হাজার সৈন্য হারিয়েছে। আফগানিস্তানেও অর্থ ও লোকবল হারিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে যুদ্ধে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোটেও লাভ হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তার দেশের জনগণের চাপ বরাবরই রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার পক্ষে। ইতোমধ্যে বিপুল ব্যয় কমানোর জন্য কিছু সৈন্য ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। তারপরও বিশ্বে নিজের প্রভাব ধরে রাখার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে সৈন্য মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায়, ট্রাম্প তার নির্বাচনী ইস্যু ও নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে বিপজ্জনক পন্থা অবলম্বন করেছেন। এমনই পন্থা অবলম্বন করেছেন, যার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চির বৈরী সম্পর্ক এবং বারবার যুদ্ধের মুখ থেকে ফিরে এসেছে। এটা অনেকটা মৌচাকে ঢিল ছোঁড়ার মতো হয়ে গেছে।
ইরান তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাকে খামেনির পরই ক্ষমতাধর বিবেচনা করা হয়, তার হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে, এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সোলাইমানি হত্যার মধ্য দিয়ে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির ব্যাপ্তি এতটাই যে, মধ্যপ্রাচ্যে তার নীতি বাস্তবায়ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আমরা দেখেছি, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্ব›েদ্বর জের ধরে ইরান গত বছরের জুনে হরমুজ প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজরদারি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এছাড়া বিভিন্ন হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করে আসছে। বিগত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের এক ধরনের ছায়াযুদ্ধ চলছে। সোলাইমানির হত্যার পর তা আর ছায়া থাকছে না, যে কোনো মুহূর্তে প্রকাশ্যরূপ লাভ করতে পারে। আর তা হলে ইরানের জন্যও তা মঙ্গলকর হবে না। আমরা সোলাইমানি হত্যার যেমন তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, তেমনি এ ঘটনা কেন্দ্র করে ভয়ংকর যুদ্ধের সূচনা হোক, তা চাই না। তেমন কিছু হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে মুসলমান বিশ্ব। এমনিতেই মুসলমানদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। যুদ্ধ বাঁধলে এ বিভক্তি আরও সম্প্রসারিত হবে। আমরা আশা করব, যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়াতে এবং উত্তেজনা নিরসনে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ মুসলমান বিশ্ব এবং অন্যান্য দেশ এগিয়ে আসবে।



 

Show all comments
  • Shahabuddin Biswas ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    ইরানী যুদ্ধা জাতী।প্রতিশোধতো তারা নিবেই তবে তা পাগলের মত না,ঠান্ডা মাথায়।আমেরিকানরা সে সঙ্কায় বহু রাত নির্ঘুম কাটাবে এটা সিউর।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Moinuddin ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    আমরা অনেকে রাজনীতিটা বুজিনা রাজনৈতিক মারপেচ জানিনা, তবে মধ্যপাচচে থাকাতে এ এলাকা সমন্দে অনেক কিছু শুনি বা দেখি এ অন্ঝলে দু-দেশের কতৃত্ব চলে তাহলো সাউ দিআরব আর ইরানের, আর আমেরিকা শুধু রেপারির দায়িত্ব পালন করে আসল খেলা খেলে অন্যেরা
    Total Reply(0) Reply
  • Mujib Khan ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    ইরান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মতো তাড়াহুড়া নেই । মনে হচ্ছে যথাযথ সময়ে ডান্ডা মাথায় ইরান এর জবাব দিবে । তবে মার্কিন নাগরিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপদ ডেকে আনল যুক্তরাষ্ট্র!
    Total Reply(0) Reply
  • Rahman Mukul Rahman Mukul ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    কাসেম সোলাইমানি এই সময়ের শ্রেষ্ঠ সমরবিদের একজন ,, এই বিষয়ে তার শত্রুরাও দ্বিমত হবেনা।। কিন্তু মার্কিনীরা তাকে হত্যা করেছে কাপুরুষোচিত ভাবে।।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্যের পথে ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    এনিয়ে কোনো চিন্তা নেই। ইরানের এত সাহস নাই যে আমেরিকার সাথে মোকাবিলা করবে। ইরান আর মালয়েশিয়া শুধু ফাঁকা ফাঁকি সর্বস্ব দেশ। বুলি ছাড়া গুলি ছোড়ার সাহস এদের নাই। তাই এটা নিয়ে এতো মাতামাতির কোনো দরকার নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Denim Sardar ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    যুদ্ধের টেনশন আর ভাল্লাগে না ! তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লাগুক... যুদ্ধ করে আমরা কয়েকশো কোটি মরে যাই...পৃথিবীর বাকি মানুষ শান্তিতে থাকুক l
    Total Reply(0) Reply
  • Qazi Badhon ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    আমেরিকা তার স্বার্থ ছারা আর কিছুই দেখে না । আর এই মধ্যে প্রাচ্যের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আমেরিকা খেলছে । সময়ের প্রয়োজনে কাউকে কাছে টানছে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করছে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান


আরও
আরও পড়ুন