মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রায় ৪০০ বছরের আগের পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ নিয়ে আধুনিক যুগেও নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাও আবার একটি টুইটের জের ধরে। ‘আমার ছায়া যেখানে পড়ে মৃত্যু সেখানে আঘাত হানে,’ লিখেছেন বলিউডের অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। বলিউডের নতুন চলচ্চিত্র পানিপাতে আফগান নেতা আহমদ শাহ আবদালির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শুক্রবার চলচ্চিত্রটির মুক্তি পায়।
ঐতিহাসিক পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মারাঠা সাম্রাজ্যের সাথে দূররানি সাম্রাজ্যের যুদ্ধে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল যে, চলচ্চিত্রটির মুক্তির পর এটি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে ছবিটি বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। আসল ঐতিহাসিক ঘটনা বিকৃত করে তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে। সেখানে মুসলমানদের বীরত্ব ছোট করে দেখানো হয়েছে। এ কারণে সিনেমাটি বলিউডের আফগান ভক্তদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
‘পানিপাত’ চলচ্চিত্রে মূলত ১৭ শতকে ভারতের একজন সম্রাট এবং আফগান নেতা আবদালির নেতৃত্বে পরিচালিত সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধকে চিত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু এই চলচ্চিত্র নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়াটা যেন নিশ্চিতই ছিল। কারণ, যাই হোক না কেন আফগানদের কাছে আবদালি তাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতীয় নায়ক। কিন্তু ভারতীয়দের কাছে আবদালি একজন আক্রমণকারী যিনি দিল্লির উত্তরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পানিপথের যুদ্ধে হাজার হাজার মারাঠা যোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন।
চলচ্চিত্রটি তৈরির ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে এক ধরণের উদ্বেগ ছিল। ২০১৭ সালে মুম্বাইয়ে অবস্থিত আফগান কনস্যুলেট এ নিয়ে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হাজির হয়েছিল। ‘আহমদ শাহ আবদালির জন্য আফগান জনগণের হৃদয়ে এবং মনে বিশেষ স্থান রয়েছে,’ বলেন নাসিম শারিফি, যিনি মুম্বাইয়ে আফগানিস্তানের কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘যখন চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল তখন আমরা এর নির্মাতাকে অনুরোধ করেছিলাম যে মূল ঘটনাকে যাতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমাদের একাধিক চেষ্টার পরও নির্মাতার কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি।’
কিন্তু এর পর হাজির হলেন সঞ্জয় দত্ত তার অভিনীত চরিত্রের একটি ছবিসহ যাকে আফগানিস্তানের জনগণ তাদের জনক বলে শ্রদ্ধা করে ডাকেন আহমদ শাহ বাবা বলে। আর এর প্রায় সাথে সাথেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘তাকে দেখতে ভয়ংকর দেখায়। সে সুরমা পড়েছে। কিন্তু আবদালি এমনটা ছিলেন না। সে যেভাবে যে ধরণের কাপড় পড়েছে, যেভাবে সে কথা বলে, সেটা আফগানিস্তানের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তাকে আরব মনে হয়,’ বিবিসিকে একথা বলেন এলাহা ওয়ালিজাদেহ নামে একজন আফগান ব্লগার।
এর আগে ২০১৮ সালে ‘পদ্মাবত’ আসে যেখানে আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রে অভিনয় করেন রানভির কাপুর। আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন একজন তুর্ক-আফগান শাসক যিনি ১২ শতকে দিল্লি শাসন করেছিলেন। চলচ্চিত্রটিতে খিলজিকে যে ধরণের নিষ্ঠুর ও দুষ্ট চরিত্রের বলে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অনেক মুসলমান ও আফগানকে ক্ষুব্ধ করে।
একইভাবে, ২০১৯ সালের একটি নাটক যেখানে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২১ শিখ সেনা এবং ১০ হাজার আফগান সেনার মধ্যে যুদ্ধের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেখানেও আফগানদেরকে আক্রমণকারী এবং জোর করে ভূমি দখলকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রবণতার বিরুদ্ধেও সমালোচনা হয়েছে।
টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যারা এ ধরণের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদেরকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। ‘সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষ এ ধরণের ভুল উপস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারছে। আফগান তরুণরা এ ধরণের ট্রেন্ড খেয়াল করছে এবং এ নিয়ে তারা আলোচনাও করছে,’ ওয়ালিজাদেহ বলেন।
আগে যেখানে কোন চলচ্চিত্রে আফগানদের উল্লেখ থাকলে মানুষ সেটাকে আগ্রহ নিয়ে দেখতো এখন সেটাকে সতর্কভাবে দেখে এবং যাচাই করে। যদিও ভুল উপস্থাপনা এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা, তবুও বলিউডের সাথে আফগানদের সম্পর্কের দিক থেকে দেখতে গেলে তারা আসলে আরো ভাল কিছু প্রত্যাশা করে।
অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন, আফগান চরিত্রগুলোকে এ ধরণের চিত্রায়ন, আফগান দর্শকদের মধ্যে সচেতনতা ছাড়াও আরো অন্য ধারণাও তৈরি করতে পারে। তারা মনে করতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির সাথে তাল মেলাতেই মুসলিম চরিত্রগুলোকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে বেশি বেশি চলচ্চিত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলিউডের নির্বাহীরা।
হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়ার বিনোদন সম্পাদক অঙ্কুর পাঠক বলেন, জাতি-গঠনমূলক চলচ্চিত্র তৈরি করতে বলিউডকে বিজেপির পক্ষ থেকে উৎসাহিত করাই হোক না কেন, ভারতকে ইতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করে চলচ্চিত্র তৈরির একটি অদৃশ্য প্রণোদনা রয়েছে- আর ভারতের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে এটা বোঝানো হয় যে, এটা মোদির পরিকল্পনার ভারত, এটা বিজেপির পরিকল্পনার ভারত, যা কিনা হিন্দুবান্ধব।’ তিনি বলেন, ‘এটা খুবই বিপদজনক। যে কোন সম্প্রদায়কেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলে তা ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব বিষয় থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত।’ সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।