পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে গরুর গোশতের উৎপাদন মোট চাহিদার তুলনায় বেশি হলেও বিদেশ থেকে হিমায়িত গোশত আমদানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে এই গোশত আমদানি হচ্ছে। এতে দেশের পশু সম্পদ খাতটি হুমকির মুখে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যেখানে পশু সম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে গরুর গোশতের চাহিদা ৭২.৯৭ লাখ টন, সেখানে উৎপাদিত হচ্ছে ৭৫.১৪ লাখ টন। দেখা যাচ্ছে, গোশতের চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, কেন ও কি কারণে ভারত থেকে হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি এবং দেশের খামারিদের হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ নিয়ে দেশের খামারিরা তীব্র প্রতিবাদ করলেও আমদানি বন্ধ হচ্ছে না। তারা মনে করছেন, এভাবে যদি গরুর গোশত আমদানি অব্যাহত থাকে, তবে এ খাতটি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। খামারিরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। দেশ বিদেশি গরুর গোশতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। অথচ গত কয়েক বছরে খামারিদের নিরলস পরিশ্রমে এ খাতটি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আগে যেখানে কোরবানির জন্য ভারতীয় গরুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো, এখন সেখানে দেশেই কোরবানির চাহিদার চেয়ে বেশি গরু উৎপাদিত হচ্ছে। দেশীয় গরুতেই কোরবানি হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ভারত থেকে হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি করার অর্থ যে, দেশের পশু সম্পদ খাতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে ভারত নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করা। তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
এই কয়েক বছর আগেও কোরবানি এবং বছরের অন্যান্য সময়ে ভারতীয় গরুর উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হতো। বৈধ-অবৈধ উভয় পথেই দেশে বানের পানির মতো ভারতীয় গরু প্রবেশ করত। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, দেশের উদ্যোক্তা খামারিরা অনেকটা নিজস্ব উদ্যোগে নিরলস পরিশ্রম করে গরু ও ছাগলের লালন-পালন করে প্রভূত উন্নতি লাভ করে। খুব অল্প সময়েই তারা এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক অবদান রাখা শুরু করে। দেশের গোশত ও দুধের চাহিদা মিটিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। এটি অর্থনীতির অন্যতম একটি খাতে পরিণত হয়। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে ভারত থেকে বছরে গরু এসেছে ২১ লাখের মতো, সেখানে গত অর্থবছরে তা ৬ লাখে নেমে আসে। এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, দেশের পশু খামার অভাবনীয় উন্নতি লাভ করেছে। এ অবস্থায় ভারত থেকে জীবন্ত গরুর পাশাপাশি হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি করা হচ্ছে। তাও আবার অন্য দেশের আমদানির চেয়ে অনেক কম শুল্কে আমদানি করা হচ্ছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দেশের খামার বিপ্লবের কারণে ভারতীয় গরুর চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন জীবন্ত গরুর পরিবর্তে হিমায়িত গোশত আমদানির বিকল্প পথ চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ ভারতকে যেভাবেই হোক তার এই পশুখাতে সুবিধা দিতেই হবে। যারা এই গোশত আমদানি করছেন, তারা কি জানেন না, দেশ এখন পশু সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এসব গরুর গোশত তাজা পাওয়া যায়, হিমায়িত করার প্রয়োজন পড়ে না? তাছাড়া ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ। গরুর স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তা প্রসেস করা হয় না। ফলে সেখান থেকে যে গোশত তারা আমদানি করছেন, তা কি মরা গরুর, নাকি মহিষের গোশতÑএ সন্দেহ থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এসব গরু হালাল পথে জবাই করা হয় কিনা, এ নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, পোল্ট্রি ফিড আমদানির নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ ও হারাম শুকরের বিষ্ঠা আমদানি করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভারত থেকে আমদানিকৃত গোশত গরুর নাকি অন্য কোনো জাতের তার নিশ্চয়তা কি? সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে গরু উৎপাদনে দেশ স্বাবলম্বী হয়েছে, সেখানে কেন এই আমদানি? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের ফাইভ স্টার হোটেলসহ অভিজাত হোটেলগুলোতে বিশেষায়িতভাবে সীমিত পরিসরে গরুর গোশত আমদানি করা হলেও তা গণহারে আমদানির বিষয়টি দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি খাতকে ধ্বংস করে দেবে। তারা মনে করছেন, যেভাবে ধান-চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও ভারত থেকে চাল আমদানির পায়তারা করা হয়েছে, একইভাবে এখন পশু সম্পদ খাতটিকেও ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। অর্থাৎ ভারতকে সব ধরনের ব্যবসার সুবিধা দেয়ার জন্য যত রকমের পন্থা আছে, তার সবই করা হচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে আমাদের কোনো খাতই বিকশিত হবে না। ভারতের উপরই নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।
আমরা মনে করি, দেশের খামার শিল্প রক্ষায় এবং একটি স্বাবলম্বী খাতকে টিকিয়ে রাখতে গরুর গোশত আমদানী বন্ধ করতে হবে। শুধু তাই নয়, দেশে উৎপাদিত গরুর গোশত চাহিদা মিটিয়ে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকে তা বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের পশু খামার যেভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে এবং এ খাতে যেভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ জড়িয়ে আছে, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাবলম্বী হওয়া রক্ষার্থে এবং সর্বোপরি অর্থনীতির স্বার্থে এ খাতের দিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। খামারিদের উৎসাহিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। পশু খাদ্যের সহজলভ্যতা, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, উন্নত প্রজাতির গরু উৎপাদনে ভ্রæণ আমদানি সহজ করার মতো সুবিধাদি দিতে হবে। পাশাপাশি কোনো অবস্থাতেই যাতে কেউ গরুর গোশত আমদানি করতে না পারে, এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।