Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লঞ্চে তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৯, ৮:০১ পিএম

প্রিয়জনের সান্নিধ্যে উৎসবে মাততে রাজধানী থেকে মানুষ ছুটছেন শেকড়ের টানে গ্রামে।
বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশনের মতো সদরঘাটেও মঙ্গলবার রয়েছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের প্রচ- ভিড়। তবে সকাল থেকেই ঈদযাত্রায় বাধ সেধেছে বৃষ্টি। গরমে বৃষ্টি প্রার্থিত হলেও তা দুর্ভোগে ফেলেছে ঘরমুখো মানুষকে।
মঙ্গলবার সেহরির পর থেকেই সদরঘাটে মানুষের ঢল নামে। তবে বেলা বাড়ার পর ভিড় কিছুটা কমে আসে। এরপর বিকেলে আবার যাত্রীদের ভিড় চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সদরঘাটে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা।
তারা জানান, যাত্রী পূর্ণ হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ৬৫টি মতো লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে। আজ দেড় শতাধিক লঞ্চ সদরঘাট থেকে প্রায় ৫ লাখ যাত্রীকে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেবে বলেও মনে করছেন তারা।
অনেকে সেহরির পরই ছোটেন সদরঘাটের দিকে। সকাল হতে হতে যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় সদরঘাটের পথঘাট। টার্মিনাল ও পন্টুনে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে হিমশকি খাচ্ছিলেন বন্দরের কর্মীরা। দুর্ঘটনা এড়াতে টার্মিনাল থেকে পন্টুনে যাওয়ার পথ সকালে কয়েক দফা বন্ধ করে দেয়া হয়। পন্টুনের যাত্রীরা লঞ্চে অবস্থান নিলে আবার গেট খুলে দেয়া হয়।
সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি নামলে দুর্ভোগের পড়েন যাত্রীরা। লঞ্চ ঘাটে না থাকায় অনেক যাত্রীকে পন্টুনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার কারণে কিছু সময় বন্ধও থাকে লঞ্চ চলাচল।

বৃষ্টির পর পথের জলকাদা মাড়িয়ে তারপর লঞ্চে উঠেছেন যাত্রীরা। সকালে ঘাটে থাকা লঞ্চগুলোতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। কেবিনের সামনে হাঁটার রাস্তাও ফাঁকা ছিল না। যাত্রী পূর্ণ হতেই ঘাট ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাদেও ছিল শত শত যাত্রী। এর উপর আছে অতিরিক্ত ভাড়া। তারপরও ঘরমুখো মানুষের মুখে হাসি। প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এ পথে কোনো দুর্ভোগই তাদের হাসি কেড়ে নিতে পারেনি।
মানুষের প্রচ- চাপের কারণে কোনো আইন-কানুনের ধার ধারছেন না লঞ্চ মালিকরা, মানছেন না যাত্রীরাও। লোকজন অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন লঞ্চে। সবার একই উদ্দেশ্য- বাড়ি যেতে হবে।
হুড়োহুড়ির মধ্যে সকালের দিকে আছমা বেগম (৬০) নামে একজন যাত্রী পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক উদ্ধার করায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ওই বৃদ্ধার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উসমানগঞ্জে।
কালাইয়া রুটে চলাচলকারী ঈগল-৪, চরফ্যাশন রুটের ফারহান-৫, হাতিয়া রুটের ফরহান-৩, বোরহান উদ্দিন রুটের জামাল-৯, ঘোষের হাট রুটের শাহরুখ-২, চরফ্যাশন রুটের তাসরিফ-৩, ভোলা রুটের কর্ণফুলী-১০ ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীতে ভরে গেছে প্রতিটি লঞ্চ। এরপরও না ছাড়ার কারণে তাসরিফ-৩ লঞ্চের যাত্রীরা চিৎকার-চেচামেচি করছিলেন। তারা বারবারই পন্টুনে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন লঞ্চ ছেড়ে দিতে বলার জন্য। পরে দুপুর ১২টার দিকে লঞ্চটি ঘাট ত্যাগ করে।

ঈগল-৪ লঞ্চের যাত্রী আলতাফ হাওলাদার যাবেন বাউফলের নিমদীতে। তিনি বলেন, মীরহাজিরবাগ থেকে রাত থাকতেই রওনা করে সদরঘাট এসেছি। সামান্য জায়গা পেয়েছি। লঞ্চের কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই। কেবিনের সামনে চলাচলের রাস্তায়ও বসে আছেন মানুষ। গ্রামে বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান থাকেন। তাই কষ্ট হলেও যাইতে খারাপ লাগছে না।
জামাল-৯ লঞ্চের নিচতলায় এক ফালি চলার পথের পাশে ব্যাগ-বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ভাই ঈদের সময় বাড়ি যাওয়া কষ্টের। এই যে পথ দেখছেন একটু পরে তাও থাকবে না। তখন এখানে বসে পড়ব।
জানা গেছে, প্রায় সব রুটের লঞ্চেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভোলার যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সময় ডেকে আমরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় গেলেও এখন ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন ডেকের ভাড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। একজনের (সিঙ্গেল) কেবিন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ১১০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। দুই জনের (ডাবল) কেবিন এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।
যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঈদ এলে লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে অন্যান্য সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে থাকেন।
ঢাকা নদীবন্দরের উপ-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মিজানুর রহমান বলেন, সকালে যাত্রীদের প্রচ- চাপ ছিল। আমরা সেই চাপ সামাল দিতে পেরেছি। অনেকে তো সেহরি নিয়ে এসে লঞ্চে বসে খেয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল সদরঘাট থেকে ১৭০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। আজও এমন সংখ্যক লঞ্চ যাত্রী নিয়ে সদরঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ৬৫টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে চলে গেছে। ভরলেই লঞ্চগুলো আমরা ছেড়ে দিতে বলছি। আশা করছি আজও পাঁচ লাখের মতো যাত্রী বাড়ি ফিরবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ যাত্রা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ