Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসবাদ রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৮ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

ইসলাম বা খৃষ্ট ধর্মে তো নয়ই, বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে কোনো ধর্মই সন্ত্রাস বা মানুষ হত্যার অনুমোদন দেয় না। এখানে ধর্মীয় কট্টরপন্থাকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিক কুশীলবদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাই মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে জুম্মা নামাজে বন্দুক হামলায় অর্ধশতাধিক নিরীহ মুসলমানের মৃত্যু এবং গত রোববার শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বেশ কয়েকটি হোটেল এবং গির্জায় একযোগে আত্মঘাতি বোমা হামলায় শত শত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় মুসলমান উগ্রবাদী স্থানীয় তৌহিদ জামাত এবং আইএস’র নাম উঠে আসছে। ক্রাইস্টচার্চের বন্দুক হামলার ঘটনায় একজন অস্ট্রেলীয় খৃষ্টান বর্ণবাদী ধরা পড়লেও আইএস বা মুসলমান জঙ্গিদের নামে যে সব হামলা হয়েছে তার সবই অস্বচ্ছ ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। মূলত: পশ্চিমাদের ইসলামোফোবিক এজেন্ডা বাস্তবায়নই যেন এসব হামলার মূল লক্ষ্য। কলম্বোতে আত্মঘাতী হামলার পর এই ঘটনার রহস্য উৎঘাটনের চেয়ে মুসলমানদের উপর দায় চাপিয়ে বিশেষ একটি গোষ্ঠিকে ইসলাম বিদ্বেষী পরিবেশ সৃষ্টিতেই বেশী সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। তবে শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ সন্ত্রাসবাদের সাথে শান্তির ধর্ম ইসলাম ও মুসলমানদের জড়িয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরীর ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন দেখা যাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের বৌদ্ধ, খৃস্টান, শিখ ও মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এককাতারে শামিল হয়ে এসব হামলার সাথে ইসলামের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। তারা একযোগেই দাবী করেছেন, আইএস আমেরিকা ও ইসরাইলের সৃষ্টি। তাদের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রায় দু বছর আগে একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের প্রবীন রাজনীতিবিদ, কংগ্রেস নেতা ও মধ্য প্রদেশের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী দিগি¦জয় সিং অভিযোগ করেছেন, তেলেঙ্গানা রাজ্যের পুলিশ আইএসআইএস’র নামে একটি ভ’য়া ওয়েবসাইট খুলে মুসলমান তরুনদেরকে উগ্রবাদী করে তুলছে। তার এই বক্তব্যের টুইট বার্তা নিয়ে তেলেঙ্গানা পুলিশ এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ ধরনের বক্তব্যের সারবত্তা যাই হোক, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আল-কায়েদা, আইএস’র মত উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠন গড়ে উঠার পেছনে একদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের যোগসুত্র রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওহাবি, সালাফি ও তাকফিরি মতবাদের উপর ভিত্তি করেই বেশ কিছু জঙ্গিবাদী সংগঠন গড়ে উঠার অভিযোগ রয়েছে। তবে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধের মত পরিবেশ সৃষ্টিতে এসব সংগঠনকে কাজে লাগাতে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ, জায়নবাদ তথা মার্কিনী ও ইসরাইলী গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের ভ’মিকা এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট।
ধর্মীয় উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদী মতবাদ যেখানে যেভাবেই সৃষ্টি হোক, এর দায় চাপছে মুলত শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের উপর। এ কারণে মুসলমান দেশগুলোকে বাড়তি ও অতিরিক্ত সতর্কতা আরোপ করতে হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি একদিনে ৩৭ জন সউদি নাগরিককে শিরোচ্ছেদ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করেছে সউদি প্রশাসন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সউদি প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানই বলে দেয় সউদি আরবসহ বিশ্বের কোনো মুসলমান রাষ্ট্রই ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং আইএস- আল কায়েদার মত জঙ্গি গ্রæপকে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলাম শান্তি, সহাবস্থান, ধর্মীয় উদারতা, মধ্যপন্থাকে গুরুত্ব দেয়। এখানে ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও রক্তপাতের কোনো অনুমোদন নেই। যারা ইসলামের নামে কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসের কথা বলেন, তাদের সাথে প্রকৃত ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। একইভাবে খৃষ্টান ধর্মেও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। যারা বর্ণবাদ ও জাতিবিদ্বেষের আশ্রয় নিচ্ছে তারা খৃস্টানদের প্রতিনিধিত্ব করে না। মার্কিনীদের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে গত দেড় যুগেও সন্ত্রাস কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধাস্ত্র নির্মাতা ও বিক্রেতারাই সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছে। আর সবচেঢে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো। আত্মঘাতি হামলা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে শান্তি ও নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান হারে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনা দেশবাসিকে সতর্ক থাকার আহŸান জাণিয়েছেন। তবে জঙ্গিবাদ দমনের নামে কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমান নাগরিককে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে এবং ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির প্ররোচনা ও বদ মতলব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাস


আরও
আরও পড়ুন