পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরবে জাতিসংঘ। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রিভেনশন অব জেনোসাইড বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা ডিয়েঙ্গ একথা বলেন। তিনি বলেন, যদিও কিছু কিছু দেশ এর বিরোধিতা করবে, তবু আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করবো। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এদেশে যে গণহত্যা শুরু করে তা স্মরণ করে বলেন, পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সমভ্রমহারা এসব মা-বোনকে পুনর্বাসিত করেন। প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলাপ করেন। অ্যাডামা ডিয়েঙ্গ এ সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের বর্বরতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সহযোহিতার কথা পুনরুল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, গণহত্যা চালানো সেইসব নৃশংতাকারীকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এসময় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ জোরদারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান একা করতে পারবে না। তাই এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ আরো বাড়াতে হবে।
অ্যাডামা ডিয়েঙ্গ বলেন, জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনে পুনর্বাসিত হোক এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ ও বৃহত্তর সমাজ গড়ে উঠুক। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল প্রায় ১০ লাখেরও অধিক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়শী প্রসংসা করে বলেন, আপনি রোহিঙ্গাদের জন্য আপনার দ্বার অবারিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা সংখ্যায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকেও ছাড়িয়ে গেছে। যে কারণে স্থানীয় জনগণকে খুবই ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ভাষানচর নামে একটি দ্বীপের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি বলেন, দেশে দু’একটি এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকার শক্ত হাতে এসব মোকাবেলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনগণের সাথে মত বিনিময় করছেন যাতে করে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের মত এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে ওঠে।
প্রেস সচিব জানান, অ্যাডামা ডিয়েঙ্গ এ সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনজন নারী নেতৃত্বের নাম উল্লেখ করেন। এরা হচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জার্মানীর চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন।
প্রেস সচিব বলেন, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভূয়শী প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘আপনি নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক।’ জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) এর মতই সফলভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সক্ষম হবে।
অ্যাডামা ডিয়েঙ্গ এ সময় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাকে ‘শান্তির মানব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আর আপনি তার (বঙ্গবন্ধুর) স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্মই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে।’
তিনি বলেন, তিনি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র দেশ ঘুরে বেড়িয়ে নানাক্ষেত্রে নারীর অগ্রসরতার চিত্র প্রত্যক্ষ করেছেন। এর কারণ হিসেবে নারী শিক্ষার প্রতি সরকারের গুরুত্ব প্রদানও একটি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হত্যাকান্ডের ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল উভয়েই ঘটনার পর পরই নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। ওই ঘটনায় প্রায় ৫০ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়।
সেইভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা এবং তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।