পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সম্মানিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মানহানির মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও হেনস্তার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। এমন সব ব্যক্তিদের প্রতিপক্ষের মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে যারা বয়েসে প্রবীণ এবং অতীতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এরা মূলত সরকারের কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত। এবার রংপুরের আদালতে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার শিকার হলেন কারারুদ্ধ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রবীন আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আইনগত সুযোগ ব্যবহার করে সরকারপক্ষ বা বিরোধীরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা করতেই পারেন। সে সব মামলার মেরিট বা আইনগত বিবেচনা করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখীন করার প্রসিডিউর ঠিক করা আদালত ও কৌঁসুশলীদের এখতিয়ার। এ ক্ষেত্রে আদালতে চলমান চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়ায় সরকারপক্ষ শুধু বাড়তি নয়, রীতিমত একতরফা সুবিধা আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। একজনের কথিত মানহানির অভিযোগে বিভিন্ন জন দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা দেয়ার পর আদালত সমন বা ওয়ারেন্ট জারি করছে। অভিযুক্ত সেখানে হাজিরা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেনীর উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী যেন এতেও সন্তুষ্ট নন, তারা আদালত আটক ও পুলিশি হয়রানিতে বিপর্যস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর প্রকাশ্য হামলার নজির স্থাপন করে চলেছে। হাজিরা দেয়ার দিনক্ষণ জানা থাকায় তারা আদালত পাড়ায় জড়ো হয়ে বেপরোয়া সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। আদালতের বাইরে নয়, খোদ আদালত প্রাঙ্গনে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। স্থানীয় পুলিশ ও রাস্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আদালত প্রাঙ্গনের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর অভিযুক্ত ও জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা বা অপারগতার কারণে নতুন ঘটনার জন্ম হচ্ছে। অতীতের কয়েক দশকেও আদালত প্রাঙ্গনে বিশিষ্ট নাগরিকদের এমন হামলার শিকার হওয়ার নজির নেই। অথচ গত তিনমাসে দেশের অন্তত দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আদালত প্রাঙ্গণে সরকারী দলের ক্যাডারদের হাতে হামলার শিকার হলেন। আইনের শাসনের দাবী এবং মামলার প্রকৃতি অনুসারে জামিনযোগ্য মামলায় নিম্ম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাধারণভাবেই জামিন দিতে বাধ্য। তবে নিম্ন আদালতের উপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারক নিয়োগের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিচারাদালতের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক হয়রানির মামলায় অপ্রত্যাশিত রায় জারি হওয়ার পর বিরোধি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ফরমায়েশি রায় বলে রায় প্রত্যাখ্যানের ঘোষণাও দেখা যাচ্ছে। যদিও রায় প্রত্যাখ্যাানের আইনগত ও কার্যকর কোনো ভিত্তি নেই। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একাধিক মামলার রায়ের পর বিরোধি দলের পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গত জুলাই মাসের শেষ দিকে কুষ্টিয়ার আদালতে একটি মানহানির মামলায় জামিন নিতে গিয়েছিলেন সাবেক জোট সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টা, আমার দেশ সম্পাদক ও কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতার করা মানহানির মামলায় জামিন নিতে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার আদালতে গিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান। মামলায় জামিন পাওয়ার আগেই সেখানে জড়ো হওয়া শত শত ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী এক ধরনের ত্রাসের সৃষ্টি করে। তারা পুরো আদালত প্রাঙ্গণকে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর পুলিশের নিরাপত্তার আশ্বাসে ও পুলিশ প্রহরায় গাড়িতে উঠার পর নির্মম হামলার শিকার হন মাহমুমুদুর রহমান। আদালত প্রাঙ্গনে হামলার শিকার হওয়ার পর মাহমুদুর রহমানের রক্তাক্ত ছবি দেশি-বিদেশি মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রায় বিপরীতমুখী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। বাকশাল প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী ও মইনুল হোসেন সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপরও এমএজি ওসমানী আওয়ামী লীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি পদপ্যার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। তবে পরবর্তিতে ওসমানী নিজেই বাংলাদেশ জনতা পার্টি(বিজেপি-ওসমানী) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চিকিৎসায় উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য লন্ডনে অবস্থানরত ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী দেশমাতৃকার প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সবকিছু ছেড়ে দেশে চলে আসেন এবং হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ওসমানীর নির্দেশনায় একমাত্র ফিল্ড হসপিটাল গঠন ও পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। বলতে গেলে এরপর আর ঘরে ফিরে যাননি তিনি। ডাক্তারি পেশাকে গতানুগতিক ধারায় অর্থ উপার্জন ও সম্পদ গড়ার কাজে ব্যবহার করেননি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য সেবাকে দেশের দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার মহন ব্রত নিয়ে কাজ করছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আশির দশকে বাংলাদেশে যে সাহসী ওষুধ নীতি প্রণয়ন ও গৃহিত হয়েছিল তার নেপথ্যে কাজ করেছেন ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গ্রামীন জনপদের দরিদ্র মানুষের জন্য অতি স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপদ খাদ্যসহ পরিষেবা ও কর্মসংস্থানমূলক নানাবিধ উদ্যোগের সফল উদ্যোক্তা, নির্ভীক ও অদম্য মুক্তিযোদ্ধা এখন ৭৮ বছর বয়েসে কিডনীসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও পরিশ্রমী, তারুণ্যদীপ্ত কর্মময় জীবন যাপন করে চলেছেন। জীবন সায়াহেৃ এসে তিনিও ডক্টর কামাল হোসেনের মত দেশে বৈষম্যহীন সমাজ, অর্থনীতি, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতিষ্ঠা দেখতে চান। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধরীর মত ব্যক্তিরা দেশ ও জাতির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। সিনিয়র সিটিজেন ও বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে তাদের জন্য রাষ্ট্রের কাছে বিশেষ সম্মান ও নিরাপত্তা দাবী করে দেশের সাধারণ মানুষ। অথচ এরা সবাই এখন সরকারী বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা নাজেহাল ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। একাত্তর টিভির টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি অপ্রাসঙ্গিকভাবে মইনুল হোসেনকে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের সভায় উপস্থিত থাকেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কিছুটা রাগান্বিত হন এবং প্রতিক্রিয়ায় ‘আমি আপনাকে চরিত্রহীন বলে মনে করতে চাই’ বাক্যটি উচ্চারণ করেন। তবে পরবর্তিতে তিনি এ ব্যাপারে দু:খপ্রকাশ করেন এবং পেশাগত অসততা অর্থে চরিত্রহীন শব্দটি উচ্চারণ করেছেন বলে ব্যাখ্যা দেন। নিজের সন্তানের বয়েসী সাংবাদিক মাসুদাভাট্টির কাছে অশীতিপর একজন বিশিষ্ট নাগরিকের দু:খ প্রকাশের পরও তার বিরুদ্ধে মাসুদা ভাট্টি মানহানীর মামলা করেছেন। সে মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর ভিন্ন এক নারী রংপুরে তার বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করলে ত্বরিৎ গতিতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। রংপুরের সে মামলায় জামিন নিতে গেলে একদিকে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন অন্যদিকে মইনুল হোসেনকে লক্ষ্য করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ, জুতা ও ঝাড়– মিছিলসহ শারিরিকভাবে আঘাত করার এক পর্যায়ে আদালতে হাজিরা দিতে আসা বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের শ্লোগান ও প্রতিবাদি ভ’মিকার পর দুই পক্ষের সংঘর্ষে আদালত প্রাঙ্গণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
নিরাপত্তাহীনতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি বর্তমানে দেশের অন্যতম সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যে কোন দেশে সরকারের দলীয় এজেন্ডায় বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের ফলে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন লঙ্ঘিত হতে পারে। দেশের আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও গণমাধ্যম আইনগত সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা হারালে সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়তে বাধ্য। নির্বাচনে সমান সুযোগ সুবিধা ও জনমতের সঠিত প্রতিফলন নিশ্চিত করতে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক দলগত নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হওয়া জরুরী। দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তাও এসব প্রতিষ্ঠানের উপর ক্ষমতাকেন্দ্রীক অপব্যবহারের নজির থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং মইনুল হোসেনদের চাওয়া-পাওয়ার তেমন কিছু নেই। তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও ভ’মিকায় শুধুমাত্র দ্বিধাবিভক্ত জাতির মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলেছেন। দেশের নির্বাচন ও শাসনব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে চান। কোন সামাজিক-রাজনৈতিক বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান নয়, সরকার ও বিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মধ্য দিয়েই তাদের এই প্রয়াস সফল হওয়া সম্ভব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে সাড়া দেয়ার মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও তার সদিচ্ছার প্রাথমিক প্রতিফলন দেখিয়েছেন । প্রথম দফা সংলাপে মূল সমস্যা সমাধানের কোন পথ না খুললেও সংলাপের রাস্তা খোলা থাকায় মানুষ এখনো আশাবাদী। সরকার সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিলেও জাতীয় ঐক্য ও সংলাপের মূল কুশীলবদের বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মামলা দিয়ে নাজেহাল করার ধারাবাহিক প্রবণতা এখনো চলছেই। একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে প্রধান বিরোধীদলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা যেমন জরুরী, তেমনি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ জাতীয় ঐক্যের কুশীলবদের উপর হামলা-মামলা ও নিরাপত্তাহীনতার ভীতি বন্ধ করতে হবে। ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাছচুরিসহ একাধিক মামলা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বহিরাগতদের হামলা ও দখলচেষ্টা, আদালত প্রাঙ্গনে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের উপর হামলা এবং জামিনযোগ্য মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুরের ঘটনাবলী দেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবী, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠার দাবীর যৌক্তিকতাই প্রমানীত করছে। সরকার যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ করছে তখন আদালত প্রাঙ্গণে ঐক্যপ্রক্রিয়ার অন্যতম নেতা ও প্রবীন আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সরকারের দলীয় ক্যাডারদের হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা ভিন্ন বার্তা বহন করছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আদালতে দাঁড়িয়ে নিজে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি হামলাকারীদের বিচার দাবী করেছেন। আদালত প্রাঙ্গণ একটি পবিত্র ও সুরিক্ষত এলাকা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব উপেক্ষা করে যারা এ অঙ্গনকে বার বার উচ্ছৃঙ্খল পেশিশক্তির দ্বারা কলঙ্কিত করছেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগনের আস্থা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থেই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
যখন আদালতে প্রমানীত দুর্নীতিবাজ, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত খুনী ও দাগী আসামীরাও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে এবং আদালতে সরকারী কুশলীদের আনুকুল্যে জামিন ও খালাস পেয়ে যাচ্ছে, সেখানে দেশে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নোত রাখতে এবং প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সারা জীবন কাজ করা জাতির সাহসী ও পরীক্ষিত সৈনিকদেরকে সমাজে ও আদালত প্রাঙ্গণে আক্রান্ত, লাঞ্ছিত ও হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। ৭ খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীরাও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ ওয়ার্ডে আরাম আয়েশে দিন যাপন কলেও মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আটক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম অত:পর রাস্তার পাশে গুলিবিদ্ধ লাস পড়ে থাকা। বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের নামে বিচারবিহিন হত্যাকান্ডের ঘটনা দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করেছে। রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার পাশাপাশি এক শ্রেনীর পুলিশ কর্মকর্তা এক পক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে আরেক পক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। সারাদেশে এমন অসংখ্য ঘটনার অভিযোগ আছে। খোদ রাজধানীর পল্টন থানার ওসির বিরুদ্ধেও এমন সাজানো মামলায় আসামী বানিয়ে গ্রেফতার করতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযান পরিচালনার চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সুরেশ সরিষার তেল কোম্পানীর কর্ণধার সুধীরসাহার মেয়ের জামাই সৈকত পালের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৩৩০ টাকা চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করে চাঁদপুরের জনৈক আজিজুর। পারিবারিক দ্বন্দের কারণে শিল্পপতি সুধীর সাহাই এই চুরির মামলাসহ সৈকতের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৮টি মামলা করিয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। পল্টন থানার ওসি সুধীর সাহার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে যে কোন প্রকারে সৈকতকে গ্রেফতার করতে আদালত প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযান চালান। এ ঘটনার সাথে জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হলেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ঘটনার মূল হোঁতা পল্টন থানার ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও গত ৭ দিনেও তেমন কিছু দেখা যায়নি। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধ পেশাগত অসদতার জন্য প্রতিমাসে হাজার হাজার অভিযোগ উঠে। বছরে ১০-১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিও হয়। তবে পুলিশের গুরুতর অপরাধে লঘু দন্ডের কারণে অপরাধ কমে না। সাধারণ মানুষের উপর পুলিশি হয়রানিও বন্ধ হয়না। দেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর কোন বিশেষ পক্ষ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চাইলে তাদেরকে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। দেশের গণতন্ত্র মনষ্ক মানুষ কখনো এসব অনাচার মেনে নেয়না। ড. কামাল হোসেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মত ব্যক্তিরা জাতির বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যা ও মানহানির মামলা দিয়ে হয়রানির মধ্য দিয়ে জাতির বিবেককে অবরুদ্ধ করা ও ভয় দেখানোর সামিল বলে মনে করেন দেশের নাগরিক সমাজ। দেশে গণতন্ত্র থাকলে শাসক শ্রেণীকে জনগণের মুখাপেক্ষি হতে হয়। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ও সীমিত গণতন্ত্রে তার প্রয়োজন পড়ে না। এই ক্রান্তিকালে জাতির ইতিহাসের গৌরবময় ভ’মিকা পালনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানি ও মিথ্যা মামলায় লাঞ্ছনার শিকারে পরিনত করার ঘটনাগুলো পুরো জাতির জন্য লজ্জা ও অপমানের। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জাতি এ থেকে পরিত্রাণ চায়।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।