পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের মানুষ কতটা সুখী আর কতটা অসুখী তার পরিমাপ সরকার বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে করতে দেখা যায়নি। তবে মাঝে মাঝে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বিশ্বের সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করতে দেখা যায়। সে তালিকায় বাংলাদেশেরও ঠাঁই হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের মানুষ কতটা সুখী তার একটা চিত্র পাওয়া যায়। তবে তা যে একেবারে অকাট্য সত্য তা বলা যায় না। কারণ কে কতটা সুখী তা জরিপ করে বোঝানো মুশকিল। সুখের বিষয়টি আপেক্ষিক। তবে একটি দেশের উন্নতির আকাক্সক্ষা ও উন্নতির ধারা থেকে কিছুটা হলেও সুখের ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে সুখের মূল উৎস হিসেবে ধরা হয় অর্থকে। যে দেশ আর্থিকভাবে যত বেশি উন্নত বা অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, সে দেশের মানুষকে তত বেশি সুখী হিসেবে ধরা হয়। ধারণাটা এমন যে, অল্পতে তুষ্ট থাকলে হবে না, নিজের এবং দেশের উন্নতিই সুখের মূল। সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে বলা হয়, আয়-উন্নতি করতে হবে। নিজের ভাগ্য বদলাতে হবে। এটা পুঁজিবাদী সুখের তত্ত¡। পুঁজিবাদে সুখী হওয়ার একমাত্র সংজ্ঞাই হচ্ছে, যেভাবে পারো অর্থ রোজগার করো, সুখী হও। মানুষও এ সংজ্ঞা মেনে এখন অর্থের পেছনে ছুটছে। উন্নতির প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছে। যারা পারছে, এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, অনেকে ছিটকে পড়ছে। যারা পারছে না, তাদের দুঃখের সীমা থাকছে না। ভাববাদীরা অনেক সময় বলেন, অর্থ থাকলেই সুখী হওয়া যায় না। তবে তাদের এ কথাকে পুঁজিবাদে অক্ষমের সান্ত¦না হিসেবে গণ্য করা হয়। বাস্তববাদীরা ভাববাদীদের এ কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, অর্থ থাকলে সুখের সন্ধানে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যাওয়া যায়। পুঁজিবাদের এ যুগে অধিকাংশ মানুষের কাছে সুখের একমাত্র সংজ্ঞা এটাই এবং সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
দুই.
বছর দুয়েক আগে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ডেনমার্ক, আর সবচেয়ে অসুখী দেশ বুরুন্ডি। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১০। সংস্থাটি তিন বছর ধরে ১৫৬টি দেশে জরিপ চালিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতিটি দেশের এক হাজার নাগরিকের কাছে প্রতিবছর তাদের জীবন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এবং শূন্য থেকে দশের মধ্যে একটি পয়েন্ট তালিকায় নম্বর দেয়ার জন্য বলা হয়। সুখের এ মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, দাতব্য সেবা এবং দুর্নীতিহীনতা। দশ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪.৬৪৩ পয়েন্ট। জরিপে দেখানো হয়েছে, যেসব দেশে বৈষম্য বা ভেদাভেদ কম, সে দেশের মানুষ বেশি আনন্দে থাকে। বিশেষ করে যেসব দেশে সামাজিক সহায়তা বেশি, বিপদে সমাজ বা রাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া যায়, সেসব দেশের নাগরিকরাই বেশি সুখী। তবে এ কথাও সত্য, জরিপ বা পরিসংখ্যানে সবসময় সত্যিকারের চিত্র প্রতিফলিত হয় না। এটা একটি ধারণামাত্র। সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য এক ধরনের পরিমাপক। বাংলাদেশ চিরকালই একটি দুঃখী দেশ, এটা সবারই জানা। এদেশের মানুষকে শত শত বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন সইতে হয়েছে। এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে অনেক সংগ্রাম ও রক্ত দিতে হয়েছে। অবশেষে নিজের দেশে সুখে-শান্তিতে বসবাসের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। তারপরও মানুষ সুখের সন্ধান পায়নি। সুখের সন্ধান যে পায়নি, তা জাতিসংঘের জরিপে ১১০ নম্বর হওয়া থেকেই বোঝা যায়। তার চেয়েও বড় বিষয়, এখনও আমাদের শাসক গোষ্ঠীর বক্তৃতা-বিবৃতিতে বাংলাদেশকে একটি সুখী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কথা অহরহ বলা হচ্ছে। এ থেকে এটাই বোঝা যায়, জনগণ দুঃখের মধ্যেই আছে। তাদের সুখের জন্য যে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন-তা সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে। তা না হলে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০ নম্বরে হবে কেন? সহায়-সম্পদে না হোক, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে রেহাই পেয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার মধ্যেই তো সুখী হওয়ার কথা। তাছাড়া এ কথাও বলা হয়, আমাদের দেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট হয়। মোটা কাপড় পরতে আর মোটা চালের ভাত খেতে পারলে তাদের আর কিছু লাগে না। তাদের এ চাহিদার বিপরীতে তো আমাদের সম্পদ অনেক ছিল। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছের কথা আমরা সবাই জানি। মুরুব্বিদেরও গল্প করতে শুনেছি। ফলে যার গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ থাকে, তার তো অসুখী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তারপরও কেন বাংলাদেশ সুখী মানুষের দেশের তালিকায় একশ’র পরে? এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন না হলেও এটা সবাই স্বীকার করবেন, বিভিন্ন সময়ে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের জনগণকে সুখে রাখতে বা সুখী করতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এই দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে উল্টা তারা জনগণের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে এবং এখনও এ ধারা চলছে। সাধারণ মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখেছে এবং দেখছে শাসক গোষ্ঠী কীভাবে নিজেদের সুখী করার সব বন্দোবস্ত করায় ব্যস্ত এবং তাদের সান্ত¦না দেয়ার জন্য বলছে, আমরা আপনাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছি। এটা এক ধরনের প্রপঞ্চ ছাড়া আর কিছুই নয়। জনগণেরও কিছু করার নেই। তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেরাই নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করার নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে নিজেদের সুখী করার চেষ্টা করছে। ফসলের বাম্পার উৎপাদন করছে। বিদেশ গিয়ে আধুনিক দাসবৃত্তি অবলম্বন করে বিলিয়ন বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। মানুষের এই উদ্যমী ভূমিকার কারণেই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে। এ নিয়ে শাসক গোষ্ঠীরও গর্বের সীমা থাকে না। জনগণের এ ভেবে দুঃখ হতে পারে, কার ফসল কার ঘরে যায়। বাম্পার ফসল ফলাই আমরা, কৃতিত্ব নেয় শাসক গোষ্ঠী। বিদেশে কামলা দিয়ে টাকা পাঠাই আমরা, আনন্দ করে সরকার। বিষয়টি তাদের কাছে এমন: ‘কেউ মরে বিল সেচে, কেউ খায় কৈ’। তাদের আরও দুঃখ হতে পারে যখন তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। ফসল উৎপাদনের খরচ দিয়েও ফসল কেনে না। এ দুঃখে কৃষকদের রাস্তায় ফসল ফেলে প্রতিবাদ করতে আমরা দেখেছি। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে! আবার যাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়, সেই অর্থও আবার চোরে চুরি করে নিয়ে যায়। সরকার রক্ষা করতে পারে না। জনগণের উৎপাদিত ও উপার্জিত সম্পদই যখন চুরি হয়ে যায়, তখন তাদের কি সুখী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে?
তিন.
বাংলাদেশের মানুষ কতটা সুখী আর কতটা অসুখী, তা তারা হলফ করে বলতে পারে না। তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলার মতো কোনো প্ল্যাটফর্মও নেই। তাদের সুখের কথা বলে দিচ্ছে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের দেশে এসে হাজার খানেক মানুষের মতামত নিয়েই সুখ-দুঃখের কথা বলে দিচ্ছে। এখন হাজার খানেক মানুষের সুখ-দুঃখের উপর ভিত্তি করে ষোল কোটি মানুষের সুখ-দুঃখের বিচার করা কতটা যৌক্তিক, তা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন। হতে পারে কিছু মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে এ জরিপ করা হয়। তবে তা যে সঠিক হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই সময়ে যদি বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখের হিসাব করা হয়, তবে অনেকেই একমত হবেন, তারা ভাল নেই। এই ভাল না থাকার মূল কারণ হচ্ছে, সুশাসন না থাকা। দেশে যে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, তা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন দিকে তাকালেই এটা বোঝা যায়। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে পরিলক্ষিত হবে, দেশে এক ধরনের ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি বিরাজ করছে। ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের কথাই সঠিক এবং তা মানতে হবে, এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এমন একটা কালচার দৃশ্যমান। ক্ষমতাসীনদের এই নিরঙ্কুশ আধিপত্যের প্রতিবাদ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও লুট হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ নিয়েই বলা হচ্ছে, আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে যারা মূল হোতা তারা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে ৯৬ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেল আর ৩৩ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ল, কেউ কেউ অত্মহত্যা করলেও-এর কোনো প্রতিকার হয়নি। এ নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেরারা হাতিয়ে নিলেও একটি টাকাও উদ্ধার করা যায়নি। দেশের মানুষ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে, তাদের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। যে দেশে জনগণের অর্থ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা হয়, সে দেশের মানুষ কিভাবে সুখে থাকে? এর উপর জনগণকে যতভাবে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলা যায়, তার প্রক্রিয় তো রয়েছেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। তারা এক পা আগালে দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনযাপন হয়ে পড়েছে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে উঠানামার মতো। তবে ক্ষমতার কাছাকাছি ও প্রভাবশালী মহলের কিছু লোক যে মহাসুখে আছে, তাতে সন্দেহ নেই। তারা এ দেশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করলেও এ দেশকে সুখের আবাস মনে করে না। তাদের সব সুখ হয়ে আছে বিদেশ। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকায় তারা বসতভিটা বানিয়েছে। অনেকের সুইস ব্যাংকে অঢেল টাকা জমা আছে। তাদের আচরণ অনেকটা ইংরেজদের মতো। ইংরেজরা যেমন ব্রিটেনের বাসিন্দা হয়ে এ দেশ দুইশ’ বছর শাসন করেছে এবং সম্পদ নিয়ে গেছে, তেমনি আমাদের দেশেরও কিছু লোক এ কাজ করে চলেছে। লুটপাটের কথা বাদ দেয়া যাক। আমরা যদি মানুষের নিরাপত্তার দিকে তাকাই, তাহলে মানুষের চেহারায় আতঙ্কই দেখব। অপহরণ, খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস এতটাই বেড়েছে যে, কে কখন অপহরণ বা খুনের শিকার হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এখনতো রাস্তাঘাটে অহরহ মানুষের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনায় খুনের শিকার ব্যক্তির পরিবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য কর্তৃক বাসা থেকে বা অন্য কোথাও থেকে মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। এখনও এ অভিযোগ উঠছে। যাদের দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের কেউ কেউ যদি আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠে, তাহলে মানুষ সুখে আছে এ কথা কি বলা যায়? এর পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ তো রয়েছেই। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, নীতি-নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে যে, নিজের বাবা-মা এমনকি সন্তানকে পর্যন্ত খুন করতে দ্বিধা করছে না। পুরো সমাজব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রের পরিচালকরা যদি সঠিক পথে না থাকে বা সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে না পারে, তবে অনিবার্যভাবে তার প্রভাব সমাজ ও পরিবারে পড়ে। আমরা যদি রাজনীতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানে যারা বিচরণ করেন, তারা সুখে আছেন, এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা বাদ দেয়া যাক। তাদের দুঃখের সীমা নেই। তবে সরকারে যারা আছেন এবং যেভাবে আছেন, তারা কি সুখে আছেন? শান-শওকত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তির মধ্যে থেকেও কি শঙ্কার মধ্যে নেই? বিশেষ করে যে দল জনসাধারণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে, তাদের শঙ্কা তো স্বৈরাচার সরকারের চেয়েও বেশি থাকার কথা। কারণ ক্ষমতাচ্যুত হলে এর জবাব জনগণকে অবধারিতভাবে দিতে হবে। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, যে দেশ জোরজবরদস্তির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়, সে দেশের মানুষ কোনোভাবেই সুখে থাকতে পারে না।
চার.
আমরা প্রায়ই সরকারের সর্বোচ্চ পার্যায় থেকে বলতে শুনি, ‘বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই’। সচেতন মহল থেকে এর বিপরীতে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও বাংলার দুঃখী মানুষ সুখী হতে পারল না কেন? সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যমলা সমৃদ্ধ সোনার বাংলার দুঃখ ঘুচলো না কেন? সমস্যা কোথায়? ঘুরে-ফিরে এসব প্রশ্নের উত্তর ঐ এক জায়াগায়ই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে সোনার বাংলা যারা চালিয়েছেন, তারা দক্ষ চালক ছিলেন না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, সে দেশ পরিচালনার জন্য দক্ষ চালক খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশ ও দেশের মানুষকে সুখী করার জন্য সর্বপ্রথম যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, তা আজও প্রতিষ্ঠা কারা যায়নি। এখনও এ নিয়ে আলোচকরা বিস্তর আলোচনা করছেন। তাদের কথাবার্তা-আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। সুশাসন আর প্রতিষ্ঠা হয় না। কেবল দুঃশাসনই গ্রাস করে চলেছে। এর ফলে মানুষের প্রাণহানি, অপহরণ, নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের পয়সা লুটপাট করার সংস্কৃতি চালু হওয়া এবং কিভাবে তাদের জীবনে টান ধরানো যায়, তার প্রবণতা বিদ্যমান। অন্যদিকে জনগণের সামনে উন্নয়নের ‘প্ল্যাকার্ড’ তুলে ধরে আশ্বস্থ ও সান্ত¦না দেয়ার অবিরাম চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘ সুখী দেশের যে তালিকা প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশ যে অবস্থানে থাকে, তা না দেখলেও কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের মানুষ সুখে নেই। সুখ তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।