নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টেস্টে যেমন তেমন, ওয়ানডে ক্রিকেটে কথাটির প্রচলন খুব একটা নেই বললেই চলে। তবে মঙ্গলবার রাতে যে ম্যাচটির সাক্ষী হলো ক্রিকেট বিশ্ব তাতে এমন উপমা দেয়াই যায়! শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে ওয়ানডের ক্রিকেটের দ্বিতীয় শক্তিধর ভারতের বিপক্ষে যেভাবে ড্র করলো আফগানিস্তান, সেটিকে জয়ের সমান বলাই যায়।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ শেহজাদের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫২ রান করে আফগানিস্তান। জবাবে দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও আম্বাতি রাইডুর শতরানের জুটির পরও সব উইকেট হারিয়ে ২৫২ রানে থেমে যায় ভারতের ইনিংস।
নাটকের চেয়েও নাটকীয়তা বুঝি একেই বলে। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ১ রান। ক্রিজে রবীন্দ্র জাদেজার মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। বোলার রশিদ খান। তিনিই কি না ওভারের পঞ্চম বলটিতে পুল করতে গিয়ে ঠিকমত টাইমিং করতে পারলেন না। ক্যাচ উঠে গেলো মিডউইকেটে। নজিবুল্লাহ জাদরান ক্যাচটি তালুবন্দী করে নিলেন। ম্যাচ শেষ। কেউ জিতলো না, কেউ হারলোও না।
৫টি পরিবর্তন এনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশ সাজিয়েছিল ভারত। আফগানদের যে মোটেও গোনায় ধরেনি ভারতীয়রা, তা তাদের এই দল সাজানো দেখেই বোঝা যায়। আফগানরাও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচটা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৭ রান। হাতে উইকেট মাত্র একটি। রশিদ খানের দ্বিতীয় বলকে বাউন্ডারি বানিয়ে লক্ষ্যটা সোজা করে ফেললো ভারত। পরের বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে দিলেন মোহাম্মদ খলিলকে। তিনিও একটি সিঙ্গেল নিয়ে নিলেন। আবারও স্ট্রাইকে জাদেজা। এবার তো জয় নিশ্চিত। আর ঠেকানোর সাধ্য কার? কিন্তু রশিদের গুগলিতে বিভ্রান্ত ঠিকই হলেন জাদেজা। ক্যাচটা তুলে দিলেন। জিততে পারলো না ভারত। আফগানরা জিততে না পারলেও বুঝিয়ে দিলো, সত্যিই তারা হেলা-ফেলার পাত্র নয়।
২৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও আম্বাতি রাইডু গড়েন ১১০ রানের জুটি। তবে এ জুটি ভাঙার পর গড়ে ওঠেনি বড় কোন জুটি। তাই বেশ সংগ্রাম করতে হয় ভারতকে। শেষ দিকে জাদেজার ব্যাট জ্বলে না উঠলে হারই দেখতে হতো দলটিকে।
৬৬ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন রাহুল। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ওপেনার। আরেক ওপেনার রাইডুর ব্যাট থেকে আসে ৫৭ রান। ৪৯ বলে সমান ৪টি করে চার ও ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া তিন নম্বরে নেমে দীনেশ কার্তিক করেন ৪৪ রান। আফগানিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন রশিদ খান, আফতাব আলম ও মোহাম্মদ নবি।
শেষ মুহূর্তে দারুণ নাটকীয়তা জমিয়ে তোলে আফগানরা। বিশেষ করে তাদের দুর্দান্ত ফিল্ডিং স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কুলদ্বীপ যাদব এবং সিদ্ধার্থ কাউল একই ওভারে দুর্দান্ত দুটি থ্রোতে রানআউট হয়ে গেলে ম্যাচ পুরোপুরি হেলে পড়ে আফগানদের দিকে। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা টিকে থেকেও ম্যাচ শেষ করতে পারলেন না। আফগানদের বীরোচিত মনোভাবের কাছে হেরে গেলেন। জিততে না পার তো ভারতের জন্য পরাজয়ই!
বিরাট কোহলি টুর্নামেন্টেই নেই। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব ছিল রোহিত শর্মার কাঁধে। গতকাল আফগানস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বহীন ম্যাচে রোহিতও ছিলেন বিশ্রামে। এজন্য ৬৯৬ দিন পর ফের দলের দায়ীত্ব এসে পড়ে পুরোনো দলপতি মাহেদ্র সিং ধোনির উপর। আর এই ম্যাচ দিয়েই অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ সংখ্যার ডাবল সেঞ্চুরিও (২০০) করলেন ধোনি।
দিনটাকে রাঙিয়ে রাখার আরো একটা উপলক্ষ্য ছিল ধোনির সামনে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দশ হাজার রান থেকে ৯৫ রান দুরে ছিলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। কিন্তু এই রিপোর্ট লেখার সময় জানার উপায় ছিল না ধোনির ব্যাট থেকে কত রান এসেছে। প্রথম ইনিংস তখন সবে শেষ হয়েছে। টস জিতে ব্যাটে নামা আফগানিস্তান ভারতের সামনে ছুড়ে দিয়েছে ২৫৩ রানের লক্ষ্য।
শুধু রোহিত নয়, ফাইনালের কথা মাথায় রেখে এই ম্যাচে বিশ্রাম দেয়া হয় আরেক ওপেনার শেখর ধাওয়ান, দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরাহ এবং স্পিনার যোগেন্দ্র চাহালকেও। এই সুযোগে ভারতীয় দলে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে দিপক চাহারের। অভিষেকে একটি উইকেট পেলেও ৪ ওভারে ৩৭ রান দেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা অবশ্য ভুলে যেতে চাইবেন এই মিডিয়াম পেসার।
সুপার ফোর পর্বে আগের দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কাছে হেরে আগেই বিদায় নিশ্চিত হয় আফগানিস্তানের। এজন্য নির্ভার হয়েই খেলেছেন দুই ওপেনার মোহাম্মাদ শেহজাদ ও জাভেদ আহমাদি। আহমাদি ধীর ব্যাটিং করলেও ক্রিজে ঝড় তোলেন শেহজাদ। তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১৩তম ওভারে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটির পর দুই স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ জাদবের আলাদা জোড়া আঘাতে। হঠাৎ করেই স্কোরবোর্ড ১ উইকেটে ৮১ থেকে ৪ উইকেটে ৮১ রানে পরিণত হয়।
স্রোতের বীপরিতে এক প্রান্ত আগলে লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে নিয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান শেহজাদ। তবে আবু ধাবির উত্তাপ আর বেশিদূর এগুতে দেয়নি এই মারমুখী ব্যাটসম্যনাকে। ১১ চার ও ৭ ছক্কায় ১২৪ রানেই থামে তার ১১৬ বলের লড়াকু ইনিংসটি। এরপর মোহাম্মদ নবির ৫৬ বলে ৬৪ এবং নাজিবুল্লাহ জদরান (২০) ও রশিদ খানের ছোট কিন্তু কার্যকরী অবদানে ৮ উইকেটে ২৫২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় আফগানরা।
২০১৪ সাল থেকে এশিয়া কাপে কোন ম্যাচে হারেনি ভারত। সেই দলটির বিপক্ষে মিনোজ আফগানিস্তানের এমন ড্র বাকিদের জন্যও যে অনুকরণীয়!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।