Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওপেনিংয়ে নেমেই মিঠুনের শতক

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশের টেস্ট দলে ব্যাটিংয়ের ওপেনিং নিয়ে সমস্যাটা দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি পাকিস্তান সিরিজে সেটি চোখে পড়েছে মোটা দাগে। চোটের কারণে তামিম ইকবাল দলে নেই। সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসানরা ধারাবাহিক নন। নাঈম শেখকেও পরীক্ষা করে ভালো ফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে টেস্টের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তৈরিতে নেমে পড়েছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। নতুনদের ছেড়ে এবার তার চোখ পুরনো, অভিজ্ঞদের দিকেই। গত জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে বাদ পড়া মোহাম্মদ মিঠুনকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। এ ব্যাপারে এবারের বিসিএলে মিঠুনের দল ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের কোচ জাফরুল এহসানের সঙ্গেও কথা বলেছেন ডমিঙ্গো। তার কথা মেনেই কি-না তাকে খেলালেন ওপেনিংয়ে, প্রথমবারের মতো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইনিংসের সূচনা করতে নেমে মিঠুনও করলেন শতক!
বিসিএল শুরুর আগে মিঠুনের প্রস্তুতিও ছিল টেস্ট উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানসুলভ। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ১৪৫ বলে শতক স্পর্শ করেন মিঠুন। ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অর্ধশতক পূর্ণ হয়ে যায় দিনের শুরুতেই। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের ১৩তম শতক স্পর্শ করতেও বেশি সময় নেননি তিনি। মিঠুনের ওপেনিং সঙ্গী মিজানুর রহমানও খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। ১৬৩ বল খেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের ১২তম শতক পূর্ণ করেন তিনি। দুজনই থেমেছেন দেড়শ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে। জুটি ভাঙে মিজানুর বিদায় নিলে। তবে তার আগে ২৪৩ বলের মোকাবেলায় ২১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৬২ রান করেন ঘরোয়া ক্রিকেটের এই নিয়মিত পারফর্মার।
মিজানুরের বিদায়ের খানিক পর বিদায় নিতে হয় আসরের প্রথম শতক হাঁকানো মিঠুনকেও। আউট হওয়ার আগে দেড়শর মাইলফলক ছুঁয়ে মিঠুন দিচ্ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির ইঙ্গিত। কিন্তু ২৫৭ বলে ২১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৭৬ রান করে থামেন তিনি। তবে তার আগে প্রথম উইকেটে দু’জনে মিলে গড়েন ৩২৭ রানের জুটি! তাদের বিদায়ের পর দিন দেখেশুনে পার করেছেন সৌম্য সরকার ও সালমান হোসেন ইমন। ইমন ৫৪ বলে ৪০ ও সৌম্য ৬৫ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত রয়েছেন। ১০৩ ওভার ব্যাট করে ২ উইকেট হারিয়ে উত্তরাঞ্চলের সংগ্রহ ৪৩০ রান। দলটির লিড ২১১ রান।
এদিন মাঠে বসে মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ম্যাচটি দেখেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। মিঠুনের ব্যাটিং দেখে সন্তুষ্টই ঝরল তার কণ্ঠে, ‘মিঠুন, মিজান দুজনই আজ (গতকাল) ভালো ব্যাটিং করেছে। উইকেটে ঘাস আছে অনেক। কিন্তু ওরা (বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বোলাররা) এলোমেলো বোলিং করেছে অনেক। সেটার সুবিধা নিয়েছে। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে ভালো করেছে দেখে ভালো লাগছে। কোচ চেয়েছিল সে যেন ইনিংস উদ্বোধন করে। তবে একটাই তো ইনিংস। আরও দেখতে হবে।’
গত জুলাই মাসের জিম্বাবুয়ে সফরে সর্বশেষ বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা গেছে মিঠুনকে। সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তিন ইনিংসেই ভালো কিছু করার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। দলের বিপদে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন প্রতি ম্যাচেই। কিন্তু সেটি কাজে লাগিয়ে দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি। এরপর বাংলাদেশ দল ওয়ানডে খেলেনি। টানা টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট খেলে আসছে, যে দুই সংস্করণে মিঠুনের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও তাঁকে রাখা হয়নি। তবে মিঠুনের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে যখন তাঁকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ওদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব ভালো খেলছিলেন না এই ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগে এর আগে ছয় ম্যাচে ১২ ইনিংস খেলেছেন, কিন্তু অর্ধশতকের দেখাও কখনো পাননি। মিঠুনের দল খুলনা বিভাগও ভুগেছে বাজে ভাবে। দীর্ঘদিন পর জাতীয় লিগে প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরে অবনবম হয়েছে দলটির। মনে হচ্ছিল মিঠুন বুঝি হারিয়েই যাবেন। কিন্তু বিসিএল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসটা ভালোভাবেই দিলেন তিনি। সেটাও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। জাতীয় দলে ওপেনিং ব্যাটসম্যান খুঁজে পেতেই যে হিমশিম খেতে হচ্ছে দলের ব্যবস্থাপনায় জড়িত কোচ-নির্বাচকদের!
এদিকে, প্রথম রাউন্ডের অপর ম্যাচে ইসলামি ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে লিডের দেখা পেয়েছে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল। রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ২৮ রানে এগিয়ে আছে দলটি। পূর্বাঞ্চলের ২৬০ রানের জবাবে বিনা উইকেটে ৩ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছিল দক্ষিণাঞ্চল। দ্বিতীয় দিন শুরুতেই দলটি হারিয়ে ফেলে তিনটি উইকেট। মাত্র ৪২ রানের মধ্যে ৩ ব্যাটার সাজঘরে ফিরলে দক্ষিণাঞ্চল চাপে পড়ে যায়। তবে জাকির হাসানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার এনামুল হক বিজয়। বিজয় হাঁটছিলেন শতকের পথে, তবে মাত্র ১২ রানের আক্ষেপ নিয়ে তাকে ফিরতে হয় সাজঘরে। বিদায়ের আগে ৮৮ রান করেন ১৫৬ বলের মোকাবেলায়। এরপর এক প্রান্ত আগলে রাখেন জাকির। দিনশেষে ৬ উইকেটে ২৮৮ রান জড়ো করেছে দল, জাকির পাচ্ছেন শতকের আভাস। ১৭১ বলে ৯১ রান করে অপরাজিত আছেন তিনি। ২৮ রান করে অপরাজিত রয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। এছাড়া অধিনায়ক ফরহাদ রেজা ৩৮ রান করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিঠুনের শতক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ