Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংগ্রামী জীবনের প্রতীক মায়া অ্যাঞ্জলো

শাহরিয়ার সোহেল অনূদিত | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

মায়া অ্যাঞ্জলো আমেরিকার মিসৌরির লাইসে ৪ এপ্রিল ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মারা যান আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনায় ২ মে ২০১৪ সালে। ৮৬ বছরের এক বর্ণাঢ্য জীবন তিনি কাটিয়েছেন। তিনি শুধু কবিই নন, নৃত্যশিল্পী, চিত্র পরিচালক, নাট্যকার, লেখক, অভিনেত্রী, অধ্যাপক প্রভৃতি। মূলত ইংরেজি ভাষাতেই তিনি কাজ করেছেন। লেখালেখি করেছেন ১৯৬৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। তার নিজের জীবনী লেখা গ্রন্থই সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি গানও গাইতে পারতেন। আফ্রিকান-আমেরিকান এ লেখক কয়েক ডজন পুরস্কার ও ৫০টির বেশি সম্মানিত ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

মায়া অ্যাঞ্জলো যৌবনে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেন। তিনি নাইট ক্লাবে নেচেছেন, বিভিন্ন স্থানে অভিনয় করেছেন। আমেরিকার একাধিক প্রেসিডেন্ট তার কবিতার ভক্ত ছিলেন। তিনি তাদের কবিতা শুনিয়েছেন। ‘খাঁচার পাখি কেন গান গায়’ লিখেই তিনি বেশ আলোচিত হন। জীবনী লিখেছেন, তবে ভিন্ন মাত্রা ও ব্যঞ্জনায়। জীবনের উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়ার গান রয়েছে তার লেখায়। তিনি কালো বর্ণের মানুষদের সংস্কৃতিকে যথারীতিভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
শৈশবেই তার দাদীর কাছে চলে আসেন। বেশ কয়েকজন ভাই-বোন নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেন প্রয়োজনের তাগিদেই। জীবনের বৈচিত্র্যময় স্বাদ তিনি পেয়েছেন। আশ্চর্যজনক এ পৃথিবীতে নিজেকে আবিষ্কার করাই সবচেয়ে বড় রহস্য। চার বছর পর তার বাবা তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তার বয়স যখন মাত্র আট, তখন তিনি তার মায়ের বন্ধুর দ্বারা নির্যাতিত ও ধর্ষিত হন। বিচারে লোকটি অপরাধী সাব্যস্ত হয়। কিন্তু সে মোটে একদিন জেল খাটে। তার মুক্ত হবার চার দিন পর সে নিহত হয়। ধারণা করা হয় মায়ার চাচা এই হত্যাকাÐ ঘটান। এরপর থেকে মায়া মৌনতা অবলম্বন করেন। তিনি মনে করেন তার কণ্ঠস্বর ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। তিনি যদি কথা বলেন তবে আরও কেউ মারা যেতে পারে। বহু দিন নির্বাকের মতো সময় কাটিয়েছেন।
দ্য অরগানাইজেশন অব আফ্রো-আমেরিকান ইউনিটি গড়ার লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালে তিনি আমেরিকায় ফিরে আসেন। এখানে তিনি গানের জগত গড়ে তোলেন এবং লেখক হিসেবে সুপরিচিত হবার জন্য লস এ্যাঞ্জেলসে যান। এখানে লেখালেখি ছাড়াও অভিনয় করেন। ১৯৬৭ সালে নিউইয়র্কে আসেন। এখানে তার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু গড়ে ওঠে। তারা মায়াকে লেখালেখি করার জন্য উৎসাহ যোগান। ১৯৬৮ সাল কবির জন্য অনেক ব্যথা-বেদনার হলেও আমেরিকা কবির গতি ও সৃজনশীলতাকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত কবির আত্মজীবনী আই নও হুয়াই দ্য কেজড বার্ড সিং তাকে আন্তর্জাতিক লেখক হিসেবে সারা পৃথিবীতে স্বীকৃতি ও প্রশংসা এনে দেয়।
মায়া পরবর্তীতে বিভিন্ন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন। বিয়ে করেন। আরও লেখেন বিভিন্ন কলাম, ছোট গল্প, টিভির অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট, ডকুমেন্ট, আত্মজীবনী, কবিতা প্রভৃতি। এছাড়া বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে লেকচার দিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে মায়া তার বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাÐের জন্য বিশ্বের বহু স্থান থেকে পুরস্কৃত হন।

মায়া বৈচিত্র্যময় নারী
আশ্চর্য রমণীর বৈচিত্র্যময় প্রভাবে
প্রকাশ পায় আমার গোপনীয়তা
আমি সুন্দরী নই
মডেলদের মতো শারীরিক সৌন্দর্যও নেই
কিন্তু যখন আমি তাদের বলতে শুরু করলাম
তারা ভাবলÑ আমি মিথ্যা বলছি
আমি বলেছিÑ
আমার বাহুর সমৃদ্ধতা
আমার নিতম্বের প্রসারতা
আমার পা ফেলার ভঙিমা
আমার লাবণ্যময় বাঁকানো ঠোঁট
আমি একজন নারী
বেশ বৈচিত্র্যময়
বৈচিত্র্যময় নারী

ঠিক তেমনই

আমি ঘরের ভেতর নীরবে হাঁটি
পুরুষকে সন্তুষ্ট করার মতোই শীতল
সহযোগীরা দাঁড়িয়ে অথবা
হাঁটু গেড়ে বসে
আমাকে ঘিরে ধরে
মধু সমৃদ্ধ মৌচাকের পাশে
গুঞ্জনরত মৌমাছির মতো
আমি বলেছিÑ
আমার চোখের আগুন
আমার দাঁতের ঝিলিক
আমার কোমরের দোলানি
আমার পদযুগলের আনন্দ
আমি একজন নারী
বেশ বৈচিত্র্যময়
বৈচিত্র্যময় নারী
ঠিক তেমনই

আমাকে দেখে পুরুষেরা
আশ্চর্যাম্বিত হয়
তারা যথেষ্ট চেষ্টা করে
কিন্তু আমার অবগুণ্ঠিত
রহস্যময়তাকে স্পর্শ করতে পারে না
আমি যখন তাদের দেখাতে চেষ্টা করি
তারা বলেÑতারা কিছুই দেখতে পায় না
আমি বলেছিÑ
এসব আমার চালাকিও হতে পারে
আমার হাসির সূর্যচ্ছটা
আমার বুকে আরোহণ
আমার কৌশলের অংশও হতে পারে
আমি একজন নারী
বেশ বৈচিত্র্যময়
বৈচিত্র্যময় নারী
ঠিক তেমনই

হয়তো এখন তুমি বুঝবে
কেন আমি শ্রদ্ধায় নত হই না
আমি চিৎকার করি না অথবা
অধীরও হই না
অথবা উচ্চস্বরে কথাও বলি না
যখন তুমি আমাকে যেতে দেখ
তুমি নিজেকে গর্বিত ভাবো
আমি বলেছিÑ
আমার গোড়ালির শব্দ এটি
আমার চুলের বক্রতা
আমার হাতের তালু
আমার প্রয়োজনীয় অন্য সব
কেমন নিরর্থক!
কারণ আমি একজন নারী
বেশ বৈচিত্র্যময়
বৈচিত্র্যময় নারী
ঠিক তেমনই...

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবন

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন