পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ দেওয়ার কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের এই চাপ আরও বাড়াতে হবে যাতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে কী করা উচিৎ- তা মিয়ানমার বুঝতে পারে। রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব সমস্যা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে এসব কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে দুই দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার আগে গতকাল তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের বিষয়াদি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রশ্নে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব ব্যাংকের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতি জোর দিয়েছেন বৈঠকে বলেছেন গুতেরেস ও কিম।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম-এর এই ঢাকা সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহী ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের একসঙ্গে বাংলাদেশ সফর নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ এবং ব্যতিক্রম বটে। জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে কোনো দেশে একসঙ্গে সফর করার নজির বিশ্বে খুব কমই রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে থাকায় সিঙ্গেল কান্ট্রি সফরে একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই কর্মকর্তা এসেছেন। ৭ বছর পর জাতিসংঘের কোনো মহাসচিব ঢাকা সফর করছেন। আর গুতেরেস মহাসচিব হওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। এটা একসঙ্গে পরিচিতিমূলক এবং রাজনৈতিক সফর জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, গুতেরেসের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ কীভাবে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার হতে পারে। সে আলোচনায় বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষত ‘নির্বাচনটি’ সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের প্রত্যাশা, পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ও সহায়তার বিষয়েও কথা হতে পারেন।
সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে গত বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে আসা চার লাখের মতো রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। এখন ১১ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সা¤প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুতরেসের বৈঠক প্রসঙ্গে ইহসানুল করিম বলেন, মিয়ানমারের আরাকান থেকে ১৯৭৭ সালে প্রথম রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসার কথা এবং পরে ১৯৮২ ও ১৯৯১ সালের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে তাদের প্রবেশের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ‘তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার যে চুক্তি করেছে, তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।’
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কয়েক মাস থেকে বলে আসছে- বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে মিয়ানমারকে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করেছে ইউএনএইচসিআর। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্যসহ সকল সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; সেগুলো বৈঠকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, টেকনাফে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় স্থানীয় জনগণের অসুবিধা হচ্ছে। উন্নত বাসস্থান সুবিধা দিতে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেন গুতেরেস। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যেন উগ্রপন্থায় জড়িয়ে না পড়ে; এটাই তাদের মূল উদ্বেগের বিষয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা অব্যাহত রাখায় আন্তোনিও গুতেরেসের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ মহাসচিব রাজধানীর ধানমÐিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সন্ধ্যায় হোটেল র্যাডিসনে জাতিসংঘ বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই হোটেলে তিনি জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন।
ঢাকা সফররত বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম উন্নয়ন ও মানবিক ইস্যুতে একসাথে কাজ করার কথা বলেছেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বিশ্ব ব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ৪৮ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ এবার বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংকের ঋণ পাচ্ছে জানিয়ে জিম ইয়ং কিম বলেন, এতেই প্রমাণ হয় যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সাক্ষাতকালে বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ডে তিনি বাংলাদেশকে কনসেশন রেটে ঋণ দেওয়ার কথা বলবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে আস্তোনিও গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিম দুজনই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশের কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়ার একটি ছবি সাক্ষাৎকালে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
এদিকে আজ বিমানে কক্সবাজার যাবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তার সঙ্গে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি। কক্সবাজারের হোটেল সায়েমানে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। জাতিসংঘ মহাসচিব উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং নারীবান্ধব শিবিরে যাবেন। এরপর তিনি ঢাকায় পৌঁছাবেন সন্ধ্যায় র্যাডিসন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করবেন। রাতেই ঢাকা ছাড়বেন গুতেরেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।