নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আফগানিস্তানের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের ক্ষত এখনো টাটকা। এরই মাঝে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মেয়েরা গড়েছে অনন্য এক কীর্তি। নারী টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সেই কুয়ালালামপুরে যেখানে ২১ বছর আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবযাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। গতকাল কিনরারা একাডেমি ওভালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ৩ উইকেটে হারিয়ে এই ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোন শিরোপা।
ঠিকই পড়ছেন। ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুললেও এতদিনেও দেশকে কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা উপহার দিতে পারেননি মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা। সেই অতৃপ্তি ঘোঁচালের রোমানা-সালমারা। তাদের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শিরোপার দেখা পেল বাংলাদেশ।
আন্ডারডগ হিসেবে আসর শুরু করেছিল সালমা খাতুনের দল। প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হার। সেই দলটিই পরবর্তিতে টুর্নামেন্টের ছয় বারের রানার্স আপ পাকিস্তান ও ছয় বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে জায়গা করে নয়ে। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল ভারতকে তো রেকর্ড গড়ে হারায় বাংলাদেশ। ফাইনালেও আধিপত্য ধরে রেখে প্রথমবারের মত এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশ। বুঝিয়ে দেয় আগের ম্যাচে ভারতে হারানো নিছক কাকতলীয় ছিল না।
জয়ের মুহূর্তটা ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। শেষ ৩ বলে দরকার ২ রান। এমন সময় কাউরের বলে কৃষ্ণমূর্তিকে ক্যাচ দেন সানজিদা, পরের বলে রান আউট রুমানা। ড্রেসিং রুম ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে এসে দাঁড়ানো ফাহিমা-আয়েশারা মূহূর্তেই যেন স্তব্ধ হয়ে যান। তাহলে কি আবারো তীরে এসে তরী ডোবাবে বাংলাদেশ। গত এশিয়া কাপে ভারতের কাছে ১ রানে হারের স্মৃতিটা তখন তাদের চোখেমুখে। একই শঙ্কা মিরপুরের ব্যামাগারে। প্র্যাকটিস শেষে টিভি টিভি সেটের সামনে লিটন, তামিম, মাশরাফি,মুশফিকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে সেই শঙ্কা। সব শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশকে বিষ্ময় উপহার দেন জাহানারা আলম। চাপ ধরে রেখে ডিপ মিড উইকেটে বল ঠেলে দিয়েই পড়িমরি করে নিয়ে নেন দুই রান। মাঠে তো বটেই মিরপুরেও জয়ের মুহূর্তে উল্লাসে মেতে ওঠে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এমন একটা ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেছেন তামিম। এমন অর্জনে মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তাসকিন, মাহমুদউল্লাহ, তামিম, মুশফিক, সৌম্য, সাব্বিররা।
শেষ ২ রানে ২ উইকেট না হারালে জয়ের ব্যবধানটা আরো বড় হত। সেক্ষেত্রে সহজে বোঝা যেত কতটা একতরফাভাবে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউরের ৫৬ রানের পর ও পোনাম যাদবের (৪/৯) বিধ্বংসী বোলিংও জেতাতে পারেনি ভারতকে।
টস জিতে দুটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশেকে আশা দেখান খাদিজা তুল কুবরা ও রুমানা আহমেদ। প্রথম ১০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৩২। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে তারা ১১২ রানের পুঁজি গড়ে। জবাবে শামিমা সুলতানা (১৬) ও আয়েশা রহমানের (১৭) ব্যাটে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। ওপেনিং জুটিতে ৭ ওভারে তারা তোলে ৩৫ রান। টানা দুই বলে দুজনকেই ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেনার যাদব। খানিক বাদে ফারজানা হককেও উইকেটের পিছনে তানিয়া ভাটিয়ার দারুণ ক্যাচে পরিণত করলে ১২ ওভারে ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কঠিন এই সময়টা শক্ত হাতে সামাল দেন নিগার সুলতানা। গোস্বামিকে টানা তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেন জয়ের লক্ষ্যেই খেলছে বাংলাদেশ। পরের ওভারে অবশ্য কাউ কর্নারে ক্যাচ বানিয়ে তাকেও ফেনার যাদব। ২৮ বলে তখন বাংলাদেশের দরকার ৩০। এমন সময় বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করে যান রুমানা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। দ্বিতীয় বলে হাঁকান বাউন্ডারি। এরপরই ৩ বলে ২ রানে ২ উইকেট হারানোর সেই রোমাঞ্চ। বোলিংয়ের পর ব্যাটেও অবদান রাখায় ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন রুমানা আহমেদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।