Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইনকিলাব-এর ৩৩তম বর্ষে পদার্পণ

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শোকর আলহামদুলিল্লাহ। নানা প্রতিকূলতা ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব আজ ৪ জুন ৩২ বছর পূর্ণ করে ৩৩ বছরে পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে আমরা মহান আল্লাহতায়ালা’র দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত মুহম্মদ (স.)-এর প্রতি পেশ করছি দরুদ ও সালাম। ৩২ বছর আগে দেশ ও জনগণের পক্ষে কথা বলার বলিষ্ঠ অঙ্গীকার নিয়ে বিশেষ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান সংস্কারক, দার্শনিক ও রাজনীতিক হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। এ উপলক্ষে তাঁকে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি। ইনকিলাব তার জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। এদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতিকে ধারণ করে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে আসছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং যে কোনো আগ্রাসী শক্তির বিপক্ষে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আপসহীন ভূমিকা পালন করে চলছে। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে ইনকিলাব সব সময়ই অবিচল। গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশে এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করায় অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং এ ব্যাপারে দৃঢ় মনোভাব পোষণ করে আসছে।
ইনকিলাবের ৩২ বছরের পথচলা কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। হুমকি-ধমকি, বাধা-বিপত্তি হামলা-মামলা ও ঘরে-বাহিরে ষড়যন্ত্রসহ নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে ইনকিলাবকে। এমনকি একাধিকবার এর প্রকাশনা বন্ধেরও মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও ইনকিলাব তার আদর্শ ও নীতি থেকে একচুল বিচ্যুত হয়নি। দেশ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইসলামী মূল্যবোধের ধারক ও বাহক হওয়ার কারণে দেশের মানুষ সব সময় ইনকিলাবের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা ইনকিলাবের মূল শক্তি। দেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও পন্ডিত ইনকিলাবের সঙ্গে যুক্ত আছেন শুরু থেকে। তারা একই সঙ্গে তার শক্তি ও প্রেরণা। দেশের সার্বভৌমত্ব, জনগণের স্বার্থ ও গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে ইনকিলাব যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে এবং করে চলেছে। সুদীর্ঘ ৩২ বছরের পথপরিক্রমায় দেশে ও বিদেশে নানা ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, ইনকিলাব তা সুতীক্ষভাবে প্রত্যক্ষ করেছে এবং জনগণের সামনে নির্মোহভাবে তুলে ধরেছে। দেশের রাজনীতির পালাবদল, বিবর্তন ও পরিবর্তনে জনগণের পক্ষে ইনকিলাব রাডারের ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান রাজনীতির ধারায়ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বলা যায়, দেশ এক ধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনীতিতে যে পরিবর্তন পরিদৃষ্ট হয়ে উঠেছে, তা দেশের মানুষের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। ক্ষমতাসীনরা তাদের শাসন নিরঙ্কুশ করার প্রক্রিয়ায় রত। রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য দৃশ্যমান। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-সংগ্রাম অকথ্য দমন-পীড়নে স্তিমিত হয়ে পড়েছে। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্য অনর্জিত রয়ে গেছে। ফলে রাজনীতি হয়ে পড়েছে অনেকটা ভারসাম্যহীন ও একপাক্ষিক। সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষাপট কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়। যে রাজনীতিতে চেক এন্ড ব্যালান্স অনুপস্থিত, তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইনকিলাব সব সময়ই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে এবং তা এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করে আসছে। যারাই দেশের মানুষ, দেশের স্বার্থ এবং গণতন্ত্রের ধারা এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তাদের পক্ষে ইনকিলাব দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের কোনো আবেগকে প্রশ্রয় দেয়নি। কোন দল ক্ষমতায় এবং কোন দল ক্ষমতার বাইরে, এটা বিবেচনায় না নিয়ে ইনকিলাব তার নিরপেক্ষ ভূমিকা সব সময়ই স্পষ্ট রেখেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপকে ইনকিলাব যেমন স্বাগত জানিয়েছে, তেমনি দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী এবং এ-সংক্রান্ত দুর্নীতির গঠনমূলক সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেনি। ইনকিলাবের কাছে দেশের মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ অগ্রগণ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে ইনকিলাব ধারণ করে, তবে রাজনৈতিক ইসলামকে সমর্থন করে না। এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে থেকে তরুণ প্রজন্ম ও যুবসমাজকে গড়ে তুলতে এবং সে অনুযায়ী দিক নির্দেশনা দিতে ইনকিলাব নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং করে যাবে। নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের মধ্যে থেকেই তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক হয়ে উঠতে ইনকিলাব নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন এবং তা প্রতিরোধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে ইনকিলাব অঙ্গীকারাবদ্ধ। কারো সাথে শত্রুতা নয়, পারস্পরিক সমমর্যাদাপূর্ণ বন্ধুত্বের পররাষ্ট্রনীতিকে ইনকিলাব দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ পররাষ্ট্রনীতির প্রায়ই ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি প্রভাবশালী দেশের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়। তা যেমন অগ্রহণযোগ্য তেমনি নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে দেশের বেশিরভাগ প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নীরবতা পালন করলেও ইনকিলাব বরাবরই এই বৈষম্যমূলক ও আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদ কঠোরভাবে করেছে এবং করে চলেছে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতন বন্ধ এবং বাণিজ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সরকার কিছুই করতে পারেনি। অথচ ভারতের কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখা হয়নি। এই বিষম নীতি ও সম্পর্কের বিষয়ে ইনকিলাব জনগণকে লাগাতার সজাগ ও অবহিত করে যাচ্ছে। জাতীয় স্বার্থ ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ইনকিলাব আপসহীন। তার ইস্পাতকঠিন এ অবস্থান অটুট ও অবিচল থাকবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কোনো আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে ইনকিলাব তার সূচনালগ্ন থেকেই সোচ্চার। মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলমান অধ্যুষিত সমৃদ্ধ দেশে পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রাসী নীতি এবং হামলা চালিয়ে লাখ লাখ মুসলমান হত্যা, বসতবাটি ধ্বংস করা থেকে শুরু করে উদ্বাস্তুতে পরিণত করার বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার ইনকিলাব। মুসলমান নিধন ও ইসলামকে অপবাদ দেয়ার পশ্চিমা বিশ্বের হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে ইনকিলাবের প্রতিবাদী অবস্থান সব সময়ই অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।
ইনকিলাব বরাবরই বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনার কথা বলে আসছে এবং এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে আসছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত রেখে নিজস্ব জাতীয়তাবোধের মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা তুলে ধরাই ইনকিলাবের মিশন। দেশ ও জনগণের পক্ষে এবং তার মুখপাত্র হিসেবেই ইনকিলাবের এই মিশন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন পেয়েছি এবং তাদের এই অকুণ্ঠ সমর্থনই আমাদের প্রেরণা। ইনকিলাবের ৩২ বছরের চলার পথটি কখনোই মসৃণ ছিল না। বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। ইনকিলাব তার লক্ষ্যে অবিচল থেকে প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে আজকের দিনে এসে পৌঁছেছে। ইনকিলাব দেশের মানুষের আশা, আকাক্সক্ষা এবং স্বপ্নের সারথী হয়ে থাকবে। ইনকিলাব তার নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে কখনো আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, ইসলামী মূল্যবোধ, মুসলমান ও মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সংরক্ষণের সপক্ষে যেমন কাজ করবে, তেমনি সন্ত্রাস, অনিয়ম, দুর্নীতি, বৈষম্য ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। আজকের দিনে আমরা পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা এবং মোবারকবাদ জানাই। ইনকিলাবের চলার পথে আমরা সর্বস্তরের মানুষের সহায়তা পাব এবং মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন, এ প্রত্যাশা করি। আল্লাহ ইনকিলাবকে কবুল করে নিন। আমীন।



 

Show all comments
  • মাহবুব ৫ জুন, ২০১৮, ১২:১৪ এএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন দীর্ঘদিন যাবৎ দৈনিক ইনকিলাবের পাঠক হিসাবে প্রথম যাঁকে মনে পড়ছে---তিনি হলেন মরহুম মাওলানা এম.এ মান্নান (রহঃ)কে। দ্বিতীয়ত --সূফীবাদ দর্শন ।তৃতীয়ত--আন্তর্জাতিক বস্তুনিষ্ট সংবাদ ।যদিও এজন্য মুক্ত চিন্তার বন্ধুরা, দৈনিক ইনকিলাবকে প্রতিক্রিয়াশীল গ্রুপের পত্রিকা মনে করেন।কিন্তু তারাঁ জানেন না যে,আমরা তাঁদের মানস উৎপত্তির ভিত্তি সম্পর্কে ইনকিলাব ফিচার প্রকাশ করেছে।আশা করি ভবিষ্যতে ইনকিলাব ,চিন্তার ভিন্নতা,বৈপরীত্য কিভাবে বৈচিত্র্যময় উপাদান দ্বারা উৎপত্তি ঘটে এবং দৃঢ়তার সৃষ্টি হয়,তার কার্য-কারণ নিয়ে ইসলাম ও বিজ্ঞান সমন্বয়ক গবেষনাধর্মী ফিচারের আধিক্য কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইনকিলাব

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন