তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
রূহানী বার্তাবাহকের আগমন : বক্ষমান নিবন্ধটি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর ঐ সকল অবস্থাদি ও প্রত্যক্ষ দর্শনাদির সুবিস্তৃত বিবরণ সম্বলিত যা এমন এক জগতের সাথে সম্পৃক্ত যেখানে আমাদের উপাদান সমৃদ্ধ জগত ও উপাদানভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিকতার ছোঁয়াচ নেই। যেভাবে আমাদের এ উপাদানপূর্ণ পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট নিয়মতান্ত্রিকতার মাঝে পরিচালিত হচ্ছে; যেমন রাতের পরে দিন আত্মপ্রকাশ করে, শীতের পরে বসন্তে আগমণ করে এবং তারকাপুঞ্জ অস্তমিত হলে সূর্য বেরিয়ে আসে। গ্রীষ্মের অবসানে শীতের আগমন ঘটে, নির্দিষ্ট সময়ে ফুল ফুটে, নির্দিষ্ট সময়ে বৃক্ষে ফল ধরে, গ্রহ-নক্ষত্র একটা নির্দিষ্ট সময়ে উদয় হয় এবং অস্ত যায়। অনুরূপভাবে রূহানী জগতেরও একটা নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা ও বিধি-বিদান আছে। সেখানেও আসমান ও যমীন আছে এবং অন্ধকার ও আলোর বন্যা আছে, শীত ও বসন্তের সমারোহ আছে এবং ফল ও ফসলের মৌসুম সেখানেও আনা-গোনা করে। কবি প্রকৃতই বলেছেন, “বেলায়েতপূর্ণ জগতের আকাশ ও তন্মধ্যস্থ বস্তু নিচয় নিজস্ব পরিক্রমার মাঝে বিকশিত হয়।”
নবুওতের সহজাত ও আত্মিক চিহ্ন : যখন এই পৃথিবীতে গুনাহসমূহের অন্ধকার এবং বদ কার্যাবলীর জুলমাত চতুর্দিক আচ্ছাদিত করে তুলে, তখন প্রভাতের সমুজ্জ্বল আলোর বন্যার আগমন ঘটে এবং দিকভালে দেখা দেয় হেদায়েতের নির্মল সূর্য। পৃথিবীর এই সুশোভিত বাগানে যখন পাপ কাজের শীতকাল আবির্ভূত হয়, তখন দেখা দেয় ঋতু পরিক্রমার পালা বদল এবং নবুওতের বসন্ত দীপ্তিমান হয়ে উঠে।
যেভাবে জমিন, আসমান, সূর্য, ফল এবং ফুলের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা, সাধারণত: যার মাঝে পরিবর্তন সুচিত হয় না যেভাবেই দুনিয়ার হেদায়েত ও পথপ্রদর্শন, আজাব ও রহমত এবং নবুওত ও রেসালাতের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়মতান্ত্রিকতা ও সাংবিধানিক কার্যক্রম, যার মাঝেও পরিবর্তনের ছোঁয়া পাওয়া যায় না। আন্বিয়ায়ে কেরাম ও রাসূলগণ নিজ নিজ সময়ে আবির্ভুত হন এবং মানুষকে সত্য গ্রহণের আহবান জানান। মানুষ হয়ত তাদের সত্যতার সাক্ষ্যপ্রদান করে কিংবা তাদেরকে মিথ্য প্রতিপন্ন করতে সচেষ্ট হয়। পরিণামে অংশীবাদী ও বিরুদ্ধবাদীরা ধ্বংসের অতল তলে তলিয়ে যায় এবং বিশ্বাসী বান্দাহগণ সফলতা লাভ করে ধন্য হন। এই রূহানী জেহাদে আন্বিয়ায়ে কেরাম এবং রাসূলগণের নিকট হতে এমন সব কর্মকান্ড, প্রজ্ঞা ও মনীষা প্রকাশ পায় যা সাধারণ মানুষের কার্যপ্রণালী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান হতে বহু উচ্চে অবস্থিত। আর তাদের নিকট হতে এমন সব আশ্চর্যজনক কার্যাবলী বিকাশিত হয়, যা সহজাত প্রাকৃতিক স্বভাবের বিপরীত। খাতেমুন্নাবিয়্যীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর পবিত্র সত্তার আবির্ভাবের পূর্ত হতেই আম্বিয়াগণের আগমণের সিলসিলা জারী ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর আগমনের পর নবুওতে মুহাম্মাদীর উত্তরাধিকারিগণ অর্থাৎ মুজাদ্দেদীনে উম্মত এই ফরজকে আঞ্জাম দিয়ে চলেছেন। এই মুজাদ্দেদীনে মিল্লাত রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর পরিপূর্ণ অনুসারী হন। তাদের মাঝে নতুওতের পদমর্যাদা থাকে না। এ কারণে তাদেরকে অস্বীকার করলে কুফর লাজেম হয় না। এটাও সম্ভব যে, একই সময়ে বিভিন্ন দেশে অথবা একই দেশের বিভিন্ন অংশে অথবা বিভিন্ন জমায়াতে ভিন্ন ভিন্ন মুজাদ্দেদীনে মিল্লাহ আবির্ভুত হতে পারেন। তাদের পরিচয় লাভের সহজ উপায় হচ্ছে এই যে, তারা আকায়েদ, আমল-আখলাক এবং দাওয়াত ও নসীহতের কাজে রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর পরিপূর্ণ অনুসরণ করে থাকেন। তাদের কাজ হলে এই যে, যুগ ও কালের পরিক্রমার বাহির হতে যে সকল কার্যাবলী, রসম ও রেওয়াজ এবং অলীক চিন্তা-ভাবনা ধর্মীয় কাজের সাথে মিশে যায়, তখন তারা এগুলো দূরীভ‚ত করেন এবং ধর্মীয় কর্মানুষ্ঠানের মাঝে যেগুলো লুপ্ত প্রায় হয়ে যায় সেগুলোকে পুনর্বার জারী করেন।
রূহানী প্রতিনিধিগণ ঐশী প্রশাসক : যেমনি আমাদের প্রাণশক্তি, আমাদের রূহ এবং আমাদের দেহের প্রচ্ছন্ন শক্তি দেহ খাঁচার প্রশাসক, ঠিক তেমনি আমাদের সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ দেহ রাজ্যের প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যেক ইশারা অনুসারে চলাফেরা করে। অনুরূপভাবে নবুওতের বৃহৎ প্রাণশক্তি আল্লাহর নির্দেশক্রমে স্পষ্ট জগতের সব কিছুর উপর প্রশাসনিক কর্মকান্ড নির্বাহ করে। এমতাবস্থায় রূহানী দুনিয়ার নীতি ও আদর্শাবলি স্পষ্ট জগতের প্রাত্যহিক নিয়ম-শৃঙ্খলার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। এজন্য তারা চোখের পলকে ভুপৃষ্ঠ হতে ঊর্ধ্ব লোকে অবস্থিত আরশ পর্যন্ত সমুন্নত হতে পারেন। ফলে, তাদের আঘাতে সমুদ্রও স্থির হয়ে যায় এবং চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়ে যায় এবং তাদের হাত দ্বারা প্রদত্ত সামান্য শুষ্ক রুটি একটি জনপদকে পরিতৃপ্ত করতে পারে। তাদের অঙ্গুলি হতে প্রবাহিত হয় সুশীতল পানির নহর। তাদের পবিত্র ফুঁকের দ্বারা রুগ্ন ব্যক্তিআরোগ্য লাভ করে এবং মৃতের মাঝে প্রাণ সঞ্চার ঘটে। তাদের সামান্য এক মুষ্টি মাটির আঘাতে বিরাট সেনাবাহিনী পর্যুদস্ত হয়। পাহাড় ও সমতল, ভ‚মি ও সমুদ্র, জানদার ও বেজান প্রাণীসমূহ আল্লাহর নির্দেশে অবনত মস্তকে তাদের সামনে আনুগত্য প্রকাশ করে। কিন্তু এতকিছুর পরেও তারা হলেন আল্লাহপাকের বান্দাহ এবং মানুষ। তাদের নিকট হতে যে সকল অত্যাশ্চর্য শক্তির বিকাশ ঘটে থাকে, তার মাঝে তাদের নিজস্ব কোন দখল বা হাত নেই; বরং এ সকল হচ্ছে তাদের মহান প্রতিপালকের ক্রিয়াকলাপের বিকাশ। বস্তুত: মহান প্রতিপালকের ইচ্ছা এবং শক্তি পয়গাম্বরদের হাতের মাঝে ফুটে উঠে অথবা আল্লাহপাকের তরফ হতে তাদের জন্য এ সকল অত্যাশ্চর্য বিষয়াবলী প্রকাশ করা হয়।
আম্বিয়াগণের মৌলিক মু’জিযা : যদিও আম্বিয়ায়ে কেরামের মৌলিক মু’জিযাসমূহ ও আল্লাহপাকের তরফ হতে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী তাদের পবিত্র সত্তার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত থাকে দর্শনকারীদের জন্য। তাদের দৃষ্টিশক্তি বিকাশের মাঝে এবং শ্রবণকারীদের জন্য তাদের কথাবার্তার মাঝে এবং অনুধাবনকারীদের জন্য তাদের পয়গাম ও দাওয়াতের মাঝে অতি প্রকৃত শক্তির বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। তবুও কিন্তু যাদের অন্তদৃষ্টি নেই তারা এ সকল অত্যাশ্চর্য বিষয়াবলী দেখে পরিপূর্ণ শান্তি লাভ করতে পারে না; বরং তারা বস্তুনির্ভর অনুভূতির আওতাভুক্ত নির্দেশাবলী তলব করতে থাকে। পরিণামে তাদের সামনে তাই উপস্থাপন করা যায়।
কিন্তু আম্বিয়ায়ে কেরামের প্রথম সারির অনুসারিগণ সিদ্দিকগণ এবং সালেহীনগণ কখনও নিজ নিজ পয়গাম্বরদের নিকটে মু’জিযা তলব করেননি। হযরত হারূন এবং হযরত ইউশা শুধু কেবল হযরত মুসা (আ:)-এর মু’জিযা অবলোকন করে তাঁকে পয়গাম্বর বলে তসলিম করেননি। এমনকি হযরত ঈসা (আ:)-এর হাওরায়িগণ তার মু’জিযা দেখে আসমানী দৌলতের অংশ লাভের প্রত্যাশা করেননি। এমনিভাবে হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রা:) রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর উপর নি:শর্তভাবে ঈমান আনয়ন করেছিলেন। (তাঁদের কাছে মু’জিযা ও অলৌকিকত্ব প্রদর্শনের কোনও প্রয়োজনই অনুভূত হয়নি।)
কিন্তু তারা শুধু কেবল চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার কারণেই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করননি; বরং তারা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) গরিবদের সহায়তাকারী, ঋণগ্রস্তদের শান্তি ও আশ্রয়দানকারী এবং মুসাফিরদের আশ্রয়স্থল। (সহীহ বুখারী ওহীর প্রারম্ভ অধ্যায়)
অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর (রা:) হযরত ওমর (রা:), হযরত ওসমান (রা:), হযরত আলী (রা:) এবং প্রথম সারির সাহাবিগণের মাঝে কেউই রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর সত্যতা এবং সভ্যতার হাকীকতকে প্রকাশ্য আয়াত ও মু’জিযার আলোকে তালাশ করেননি, বরং তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পবিত্র সত্তা, সথ্যের প্রতি আহ্বান এবং এখলাসপূর্ণ পয়গামই ছিল পরিপূর্ণ মু’জিযা স্বরূপ। তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর পবিত্র সত্তাকে অবলোকন করেই ঈমানী দৌলত লাভে সক্ষম হয়েছিলেন।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।