তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
চট্টগ্রাম- এই নামটির সাথে ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’, ‘বন্দরনগরী’ কিংবা ‘শিল্পনগরী’ অবলীলায় সংযুক্ত। চট্টগ্রামেই দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। অধিকাংশ শিল্প-প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ভারী এবং মৌলিক শিল্প, কল-কারখানা চট্টগ্রামেই অবস্থিত। জাতীয় রাজস্ব আয়ের সিংহভাগের যোগান আসে চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রাম সমগ্র দেশে রক্ত সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করে। ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে সর্বগ্রাসী চোরাচালান এবং আরো বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামের শিল্প সেক্টর মার খায়। রুগ্নশিল্পে পরিণত হয় অনেক শিল্প-কারখানা। অনেকগুলোরই দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। শ্রম অঙ্গণে বেকারত্বের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। অধিকাংশ বনেদী শিল্পপতি ঝুঁকে পড়েন অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিশেষত ট্রেডিং ব্যবসায়ের দিকে। অনেকে নিজেদের ঠিকানা ঢাকায় গুটিয়ে নিয়ে চলে যান। ইউনিলিভার, রেকিট বেনকিজার, বার্জার-এর মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও তাদের অনুসরণ করে। এর ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা জাগে।
এরপরে গত দেড়-দুই দশক যাবত আগের সেই চালচিত্রের গুণগত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নিত্যনতুন, আধুনিক প্রযুক্তি বা প্রজন্মের শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠছে। শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প এবং প্রকল্পবহরের আওতায় গড়ে উঠছে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা। দেশি ও বিদেশি ব্যাপক অঙ্কের বিনিয়োগের সুবাদে চট্টগ্রামে শিল্পায়ন বেগবান হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের প্রধানতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। ভারীশিল্প থেকে শুরু করে রফতানিমুখী শিল্প, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের হরেক ধরনের শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পায়নে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ। প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় একশ’। এর ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল ঘিরে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে উঠছে, যা অদূর ভবিষ্যতে দেশে সবল অর্থনীতির সোপান গড়ে তুলতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ব্যাপকহারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সৃজন এবং সেইসাথে শিল্পায়ন এগিয়ে চলেছে। উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই-সীতাকুণ্ড থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম মহানগরী ও শহরতলী এলাকা, দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ অবধি অবকাঠামো বিনির্মাণ, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হচ্ছে। বলতে গেলে নীরব বিপ্লবে পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। শুধুই শিল্পায়ন নয়; বন্দর-সুবিধার উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজও চলছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বার্ষিক ৩২ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার ও ১২ কোটি মেট্রিক টন পণ্যসামগ্রীর আমদানি-রফতানি প্রবাহ সামাল দিতে গিয়েই হিমশিম অবস্থা। আমদানি-রফতানির চাপ ও চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে একদিকে বন্দর-সুবিধা বাড়ানোসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। আরেকদিকে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। যেমন- সিমেন্ট, স্টিল ও লোহাজাত শিল্প, গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল, জ্বালানি খাত, আবাসন ও নির্মাণ শিল্পখাত, শিপিং ও পরিবহন খাত, রফতানিমুখী বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর
এ মুহূর্তে বাস্তব রূপায়নের দিকে এগুচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। এটি দেশের একশ’টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে সর্ববৃহৎ। মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে গড়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। আরও ১৮ হাজার একর জমি নিয়ে এই অর্থনৈতিক জোন সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এই শিল্পনগরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যাবতীয় যুগোপযোগী অবকাঠামো সুবিধা এবং শিল্প, কল-কারখানা। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এ পর্যন্ত দুইশ’রও বেশি দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। ১৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এসব কারখানা চলতি বছরে উৎপাদনে যাওয়ার টার্গেট রয়েছে। আরও বিনিয়োগ-শিল্পায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি ও বহুজাতিক অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট হয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে। শিল্পনগরের সাথে সমুদ্রবন্দর-সুবিধা এবং মীরসরাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। অবশ্য বিনিয়োগকারীরা ধীরগতি কাটিয়ে অবকাঠামো সুবিধার উন্নয়ন আরো দ্রুতায়িত করার তাগিদ দিচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহনশীল, পরিবেশবান্ধব দেশের প্রথম ‘ইকো বা গ্রিন শিল্পাঞ্চল’ হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রকল্প সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী।
দেশি-বিদেশি শিল্প জায়ান্টরা বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে এগিয়ে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, বিআর পাওয়ার, নিপ্পন, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, মডার্ন সিনটেক্স, চীনের জিনইউয়ান কেমিক্যালস, জিয়াংজু ইয়াবাং ডায়েস্ট কোম্পানি, জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকিউ ইলেকট্রিক, সায়মান, টিকে গ্রুপ, ওয়ালটন, সামিট, বসুন্ধরা, জিপিএইচ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এন মোহাম্মদ গ্রুপ ইত্যাদি।
এই শিল্পনগরে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৭ লাখ, প্রকল্প সম্পন্ন হলে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে একক ও যৌথ উদ্যোগে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, পাটজাত শিল্প, চামড়া শিল্প, রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও মেলামাইন, স্পোর্টস সামগ্রী, খেলনা, সাইকেল, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ওষুধ, মেডিকেল সামগ্রী, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, হাইব্রিড গাড়ি, মোটরযান ও অটোমোবাইল, আইটি, বিভিন্ন সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের উপযোগী শিল্প-কারখানা স্থাপন করছে।
উন্নয়নের গেটওয়ে মহেশখালী মাতারবাড়ী
অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ চলছে কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়ী থেকে শুরু করে শেষ প্রান্তসীমায় টেকনাফ পর্যন্ত। সমগ্র কক্সবাজার বিশেষত মাতারবাড়ী এলাকাটি পরিণত হতে চলেছে ‘উন্নয়নের গেটওয়ে’ কিংবা বাংলাদেশের ‘সিঙ্গাপুর’। সমুদ্রবন্দর-সুবিধা, জ¦ালানি হাব, অর্থনৈতিক অঞ্চল, যোগাযোগ, পর্যটন ও বিনোদন, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরসহ শিল্প-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এই লক্ষ্যে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৬৮টি মেগাপ্রকল্প ও বিভিন্ন প্রকল্পবহর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এসব প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি হতে যাচ্ছে বছরের শেষের দিকে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে উৎপাদন শুরুর টার্গেট ধরা হয়েছে ধাপে ধাপে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল। সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগাপ্রকল্পের অন্যতম মহেশখালী-মাতারবাড়ী। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারবাসী ছাড়াও সুফল পাবে সারাদেশ। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণ, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া ও টেকনাফে বিশেষায়িত পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র ও মেরিন পার্ক প্রতিষ্ঠিত হলে কক্সবাজার দক্ষিণ এশিয়ায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।
২০১০ সাল থেকে জাপানের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ)’ উদ্যোগের আওতায় কক্সবাজারে বিশেষত মহেশখালীতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলেছে। শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগকারী এবং আগ্রহ প্রকাশকারী দেশগুলো হচ্ছে- জাপান, চীন, জার্মানী, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, থাইল্যান্ড। তাছাড়া দেশ-বিদেশের শিল্প-জায়ান্টরা মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে বিনিয়োগে আগ্রহ ব্যক্ত করছেন।
চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: বিদ্যুৎ বিভাগের ২৩টি, জ্বালানি বিভাগের ৬টি, ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প দু’টি, এলপিজি প্রকল্প দু’টি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৯টি, সড়ক ও সেতু বিভাগের ৮টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ৭টি শিল্পজোন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৯টি প্রকল্প, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দু’টি, আইটি সিটি, স্যাটেলাইট টাউন প্রকল্প ছাড়াও অনেকগুলো নিয়মিত ও সহায়ক প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে জাপানি সহায়তায় ১২টি ইউনিটে বিদ্যুৎপ্রকল্প এবং মাতারবাড়ী বহুমুখী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা।
গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। দেশীয় সংস্থা ও কোম্পানির মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), পেট্রোবাংলা, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পর্যটন কর্পোরেশন, টিকে গ্রুপ, মীর আখতার ইত্যাদি। বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠি বিনিয়োগ-শিল্পায়নে আগ্রহী।
মহেশখালীর বিভিন্ন অংশে গৃহীত মেগাপ্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ও ডাবল পাইপ লাইনসহ জ্বালানি তেলের ডিপো, ৭টি অর্থনৈতিক জোন, বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন সমুদ্রবন্দর, ট্যুরিজম পার্কসহ বিশেষায়িত পর্যটন কেন্দ্র, ৬ লেইন ও চার লেইন সড়ক, রেলপথ, বায়ু বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় সুপার ডাইকযুক্ত (বেড়িবাঁধ কাম মেরিন সড়ক) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এটি কক্সবাজারের মূল মেরিন ড্রাইভওয়ের সাথে যুক্ত হচ্ছে। প্রতিটি প্রকল্পে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করা হচ্ছে। বেজা বলেছে, প্রকল্পের নেহাৎ প্রয়োজনে পাহাড় কাটা ও গাছ কাটার বিপরীতে দ্বিগুণ বৃক্ষরোপণ করা হবে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় বন বিভাগ দ্বীপে লাগসই বৃক্ষ রোপণ শুরু করেছে। মেগাপ্রকল্প ও অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মহেশখালীতে ১৯ হাজার ৭১৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। লিজ, বন্দোবস্তির জমি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার একর। প্রকল্পবহরের সুবাদে এলাকায় জমির গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে জমির মূলও বাড়ছে। তবে প্রকল্পবহরের স্বার্থে বাপ-দাদার ভিটেমাটি-হারা স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে কমবেশি ক্ষোভ-অসন্তোষ রয়েছে, মূলত তাদের স্বার্থরক্ষা ও ভবিষ্যত নিয়ে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে হয়রানি, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ বিস্তর।
মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পের জন্য আমদানি কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়ানোর জন্য জেটি বার্থিং সুবিধা নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে সেখানে সমুদ্রবন্দর-সুবিধার দ্বার উদঘাটন করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা। বর্তমানে মাতারবাড়ীতে বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরমধ্যে জাইকার ঋণ সহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
মেগাপ্রকল্পে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিচ্ছে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর এ মেগাপ্রকল্পের কারিগরি কাজ তদারক করছে। আশা করা হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পুরোদমে চালু হবে ২০২৪-২৫ সালে। তবে এর আগেই মাতারবাড়ী বিদ্যুৎপ্রকল্প ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে জাহাজ আসা-যাওয়া ও ভিড়া শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সুখবর হচ্ছে, প্রাথমিক অবস্থাতেই এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জাহাজ ভিড়েছে নিরাপদে। বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিক মহল ইতোমধ্যে উচ্চাশা ব্যক্ত করেছেন, ‘মাতারবাড়ী হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার’।
লেখক: দৈনিক ইনকিলাবের উপ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।