পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হযরত ঈসা (আ:)-এর জন্মস্থান যিয়ারত ও হুযুর (সা:) জন্মদিনে রোজা রেখে স্বয়ং খুশী প্রকাশ করেছিলেন :
হযরত আনাস বিন মালেক (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, হুযুর নবী আকরাম (সা:) স্বীয় মি’রাজ ভ্রমণ বয়ান করতে গিয়ে বলেছেন যে, জিব্রাঈল (আ:) ‘বাইতুল লাহাম’ নামস্থানে আমাকে বললেন, আপনি বোরাক হতে অবতরণ করুন এবং নামাজ পাঠ করুন? আমি অবতরণ করে নামাজ আদায় করলাম। তখন জিব্রাঈল (আ:) বললেন, আপনি কি জানেন যে, আপনি কোথায় নামাজ আদায় করেছেন? আপনি বাইতুল্লাহাম-এ নামাজ আদায় করেছেন। যেখানে হযরত ঈসা (আ:)-এর জন্ম হয়েছিল। এই হাদীস মোবারক হতে জানা গেল যে, জুমার দিনের ফযিলত ও সম্মান যেভাবে হযরত আদাম (আ:)-এর সৃষ্টির কারণে অর্জিত হয়েছে, যা মূলত : তাজিমে জমানী সময় ও কাল ভিত্তিক তাজিম। অনুরূপভাবে বাইতুল্লাহামে হযরত ঈসা (আ:)-এর জন্মস্থান হওয়াতে তাজিমে মাকানী অর্থাৎ স্থানগত মর্যাদা হাসিল হয়েছে। এ কারণেই হুযুর নবী আকরাম (সা:) কে সেখানে নামাজ আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।
এই হাদীস শরীফের দ্বারা নবীর জন্মস্থানের গুরুত্ব ও তাজিম প্রমাণিত হয়। এ জন্য আশেকানে রাসূল মাওলাদুন নবী (সা:)- কে (সে স্থান যেখানে হুযুর নবী আকরাম (সা:)-এর সৌভাগ্যপূর্ণ জন্ম হয়েছে) তাজিম করে এবং যিয়ারত করে। মক্কাবাসীদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে এই আচরণ চলে আসছিল যে তারা সেই স্থান হতে জসনে মিল্লাদুন নবী (সা:) এর জুলুস বের করে আসছিল। তদুপরী যদি নবীর জন্ম উপলক্ষে কোন স্থানকে বরকতময় এবং স্মৃতিচিহ্ন ও স্মরণীয় করে দেয়, যা সরাসরি হাদীসে নববীর দ্বারা প্রমাণিত ও স্বীকৃত, তাহলে সে দিনটি এবং মুহূর্তটি যখন হুযুর নবী আকরাম (সা:)-এর জন্ম হয়েছে, তা ওয়াজিবুত তা’জিম, স্মরণীয় এবং ঈদের দিন কেন হবে না? [(ক) সুনাসে নাসায়ী : কিতাবুস সালাত, বাবু ফারদিস সালাত, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ২২২, বর্ণনা সংখ্যা-৪৫০। (খ) তিরবানী : মুসনাদুস সামীন, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯৪, বর্ণনা সংখ্যা-৩৪১। তবে নিম্নবর্ণিত কিতাবসমূহে উপরোক্ত হাদীসটি হযরত শাদ্দাদ বিন আওস (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে। (গ) বাযযার : আল বাহরুজ জাখখার (আল মুসনাদ) খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-৪১০, বর্ণনা সংখ্যা-৩৪৮৪। (ঘ) তিররানী : আল মু’জামুল কবীর : খন্ড-৭, পৃষ্ঠা ২৮৩, বর্ণনা সংখ্যা-৭১৪২। (ঙ) হাইছামী : মাজমাউজ জাওয়াইদ ওয়া মাম্বাউল ফাওয়াইদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৩। (চ) আসকালানী : ফাতহুল বারী, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৮৩, বর্ণনা সংখ্যা-৭১৪২। (ঙ) হাইছামী : মাজমাউজ জাওয়াইদ ওয়া মাম্বাউল ফাওয়াইদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৩। (চ) আসকালানী : ফাতহুল বারী, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-১৯৯] মীলাদ অনুষ্ঠানের শরীয়তভিত্তিক উল্লেখিত প্রমাণ্য দলিলগুলোর সাথে সাথে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে, হুযুর নবী আকরাম (সা:) স্বয়ং জন্মদিন সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোন হেদায়েত বা তালকীন করেছেন কিনা? এর উত্তর হ্যাঁ বাচক। হুযুর নবী আকরাম (সা:) স্বয়ং সাহাবায়ে কেরামকে স্বীয় জন্মদিনে আল্লাহপাকের শোকর আদায় করার তালকীন করেছেন এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি স্বয়ং স্বীয় জন্মদিনে রোজা রেখে আল্লাহপাকের দরবারে শোকর গুজারী ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। হুযুর নবী আকরাম (সা:)-এর এই মুবারক আমল নিম্নে বর্ণিত রেওয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয়। ইমাম মুসলিম (২০৬-২৬১ হি:) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু কাতাদাহ আনসারী (রা:) হতে বর্ণিত আছে : হুযুর নবী আকরাম (সা:)-কে সোমবার দিন রোজা রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন : এইদিনে আমার জন্ম হয়েছে, এইদিনে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে এবং এই দিনে আমার উপর কোরআন নাজিল করা হয়েছে। [(ক) সহীহ মুসলিম : কিতাবুস সিয়াম, বাবু এস্তেহবাবে সিয়ামে সালাসাতি আইয়্যামীন মিন কুল্লি সাহরিন, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৮১৯, বর্ণনা সংখ্যা-১১৬২। (খ) বায়হাকী : আস্্ সুনানুল কুবরা, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৮৬, বর্ণনা সংখ্যা-৩৮১৮২। আর নিম্নবর্ণিত কিতাবসমূহে এইদিন আমকে নবুওত দ্বারা বিভূষিত করা হয়েছে, শব্দাবলী আছে। (গ) নাসায়ী : আস্্ সুনানুল কুবরা, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪৬, বর্ণনা সংখ্যা- ২৭৭৭। (ঘ) আহমাদ বিন হাম্বল : আল্্ মুস্নাদ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৯৬ ও ২৯৭, বর্ণনা সংখ্যা-২২৫৯০ ও ২২৫৯৪। (ঙ) আবদুর রাজ্জাক : আল মুসান্নাফ, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৯৬, বর্ণনা সংখ্যা-৭৮৬৫। (চ) আবু ইয়ালী : আল মুসনাদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৩৪, বর্ণনা সংখ্যা-১৪৪। (ছ) বায়হাকী : আস্্ সুনানুল কুবরা, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩০০, বর্ণনা সংখ্যা-৮২৫৯।] সোমবার দিনের প্রথম বৈশিষ্ট্য এই যে, এটা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর জন্মদিন। এ কারণেই এই দিনটি শরীয়ত মাফিক বিশেষ গুরুত্ব ফযিলত এবং বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হুযুর নবী আকরাম (সা:) নিজে রোজা রেখে এইদিনে শোকর গুজারী করেছেন। তাঁর এই আমল উম্মতের জন্য আনন্দ প্রকাশের সুন্নাতের মর্যাদা রাখে। আজও হারামাইন শরীফাইনে নির্দিষ্টভাবে এবং সারা বিশ্বে সাধারণভাবে নবী প্রেমিক ও তাসাউফপন্থী লোকেরা সোমবার দিন রোজা রাখার উপর নিয়ম মাফিক আমল করে আসছেন। ইসলামে জন্মদিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যে সকল লোক বলে যে, ইসলামে জন্মদিনের কোন চিন্তা ও গুরত্ব নেই, তারা এলমে শরীয়ত সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নয় (অথবা ইসলামবিদ্বেষী)। হুযুর নবী আকরাম (সা:) ফরমান : ইহা সে দিন, যে দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। (যাকা ইয়াওমুন ওয়ালাদ্তু ফীহি) তা ইসলামে জন্মদিনের মর্যাদার দিকনির্দেশনা প্রদান করে। কোরআনুল কারীমে আম্বিয়া (আ:)-এর জন্মদিনের বিবরণ রয়েছে। এর বিস্তারিত বর্ণনা পূর্ববর্তী অধ্যায়সমূহে করা হয়েছে। যার দ্বারা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহপাকের নিকট স্বীয় পয়গাম্বরদের জন্মদিনের মর্যাদা ও সম্মান কতখানি এবং কত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই দৃষ্টিভঙ্গিতে লক্ষ্য করা হয়, তাহলে মীলাদে মোস্তফা (সা:)-এর দিনটি যে সবচেয়ে উচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। মীলাদে মোস্তফা (সা:)-এর দিনটি উদযাপনের বিভিন্ন তরীকা ও পদ্ধতি রয়েছে যা কোরআন ও সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-উপরোল্লিখিত হাদীসের দ্বারা ইবাদতের একটি প্রকার রোজা রাখা প্রমাণিত। কিন্তুু এর সাথে সাথে আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সন্তুুষ্টি অর্জনের জন্য সদকাহ ও খয়রাত করা, খাদ্য বিতরণ করা, শোকর আদায় করা এবং আনন্দ প্রকাশ করাও মীলাদ উদযাপনের বিভিন্ন সুরত ও প্রকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।