পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান সম্বলিত দ্বীন। এর মাঝে ত্রুটি বা কমতির কোওনা স্থান নেই। এই দ্বীন স্বভাবজাত আবশ্যকীয় বিষয়াদির গুরুত্ব অনুভব করে এবং কতিপয় নিয়ম-নীতির মাধ্যমে ঐ সকল চাহিদা পূরণের জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এ জন্য যেখানে আনন্দ প্রকাশ করা সমীচীন সেখানে অবশ্যই আনন্দ প্রকাশ করবে। আনন্দ প্রকাশ করা মানুষের জন্মগত চাহিদা ও সহজাত স্বভাব। আর ইসলামের দাবি হচ্ছে এই যে, মুমিন-মুসলমানগণ সব সময় উন্নত মানসিকতা, নবীন উদ্যম ও নির্মল আনন্দের সাথে সজীব থাকুক। এ জন্য যায়িজ তরীকায় আনন্দ স্ফূর্তি না করা এবং এটাকে দ্বীনের পরিপন্থী মনে করা দ্বীনের সঠিক উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত থাকারই শামিল। মুমিন মুসলমানগণ কখন আনন্দ ও উৎফুল্ল প্রকাশ করেন, যখন কোনো দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক হয়, যখন কোনো প্রিয় ব্যক্তি এলেম ও ফযলে বুলন্দ মর্যাদার অধিকারী হয়, যখন তাকে ধন-সম্পদ বা অন্য কোনো নেয়ামত দ্বারা পুরস্কৃত করা হয়, যখন দীর্ঘ সফর শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসে, যখন কোনো প্রিয়জন সফর থেকে আসে, যখন কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অতিথি হিসেবে আসে, যখন কোনো বিয়ে-শাদী অনুষ্ঠিত হয়। যখন কোনো শিশু সন্তান জন্ম নেয়, যখন কোনো প্রিয়জনের সুস্থতা ও কুশলের সংবাদ আসে, যখন মুসলমানদের কোনো বিজয়ের সংবাদ আসে, এভাবে যত কিছুই হোক না কেন এমতাবস্থায় আনন্দ ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করা মুমিন-মুসলমানের সহজাত স্বভাবের হক বা অধিকার। এক্ষেত্রে ইসলাম শুধু আনন্দ-স্ফূর্তিকে অনুমোদনই করেনি, বরং একে সঠিক দ্বীনদারী বলে স্বীকৃতি দেয়। হযরত কায়াব বিন মালিক (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন আমার তাওবাহ কবুল করলেন, এবং আমি সুসংবাদপ্রাপ্ত হলাম তখন আমি তাড়াতাড়ি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর খেদমতে হাজির হলাম। তাকে সালাম করলাম। সে সময় তার চেহারা আনন্দে টগমগ করছিল। যখন তিনি কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন তখন তার চেহারা চাঁদের টুকরার মতো উজ্জ্বল মনে হতো। আমরা তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য ও চমক দেখে বুঝতে পারতাম যে, এখন তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। (রিয়াদুস সালেহীন)।
আনন্দঘন মুহূর্তে মুমিন মুসলমানের উচিত মন-প্রাণ খুলে আনন্দ প্রকাশ করা এবং মনটাকে কিছুটা মুক্ত রাখার চেষ্ট করা। রাসূলুল্লাহ (সা:) মদীনায় আগমন করার পর ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরে উৎসব পালন করার নির্দেশ দিয়ে বললেন : এ দিনগুলো পানাহা, পারস্পরিক আনন্দ উপভোগ এবং আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য নির্ধারিত। (শরহে মায়ানিউল আযার)।
আর আনন্দ উৎসব পালনে ইসলামের আবেদন, হেদায়াত ও রীতিনীতির প্রতি অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। আনন্দ ও উৎসাহের আতিশয্যে এমন কোনো উত্তেজনাকর কাজ করবেন না, যা ইসলামী রীতিনীতি ও সভ্যতার পরিপন্থী হয়। উত্তম কাজ দ্বারা আনন্দ প্রকাশ করাই শ্রেয়। আনন্দ-স্ফূর্তিতে এতটা মত্ত হয়ে যাওয়া সমীচীন নয়, যাতে আল্লাহর স্মরণ থেকে অমনোযোগী হতে হয়। আনন্দদানকারী আল্লাহ পাকের বেশি বেশি স্মরণ করার মধ্য দিয়েই মুমিন মুসলমানগণ আনন্দ উৎসব পালন করে থাকে। তার দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে, শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। আর নিজের আমল কথাবার্তা ও চাল-চলন দ্বারা আল্লাহর ফযল, করম, বড়ত্ব, মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অধিকতর প্রকাশ করে।
বস্তুত মুমিন মুসলমানের স্বীয় আনন্দ উৎসবে অন্যকেও শরিক করে নেয়া উচিত। এমনিভাবে অন্যের আনন্দ পর্বে অংশগ্রহণ করে পরিবেশকে আরো উপভোগ্য এবং প্রাণবন্ত করে তোলার চেষ্টা করা দরকার। খুশির সময়ে পরস্পর পরস্পরকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানানো প্রীতি ও সৌহার্দ্যকে বহুলাংশে বর্ধিত করে তোলে।
মোটকথা, রাসূলে পাক (সা:)-এর এই ধরাধামে আগমনের দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) রূপে শ্রেষ্ঠ ফযল ও শ্রেষ্ঠ রহমতের ঝর্ণা ধারাসম প্রতি বছরই আগমন করে থাকে। সুতরাং এই দিনে মুমিন মুসলমানগণ অধিক হারে দরুদ, সালাম, কুরআন তিলাওয়াত ও রাসূলে পাক (সা:)-এর প্রশান্তিমূলক আমলের মাধ্যমে আনন্দিত হতে পারেন। আল্লাহ আমাদের এই দিনে অধিক নেক আমল করার তাওফিক এনায়েত করুন! আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।