পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকমীলে দীনের আয়াত নাজিলের দিনকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করার নিরিখে প্রমাণ প্রতিষ্ঠা :
হুযুর নবী আকরাম (সা:)-এর উপর নাজিলকৃত ‘সুরাতুল মায়িদাহ’-এর তাকমীলে দীন সংক্রান্ত এ আয়াতটি বহু বড় খোশখবরী এবং বেশারতের আয়নাস্বরূপ। যেদিন এই আয়াত নাজিল হয়েছে সে দিনটি ঈদুল জুমা, ও ঈদুল হজের খুশি বহন করে উদিত হয়েছে। তাই ঈমানদারদের জন্য এই দিকনির্দেশনাটি অনুধাবন করা কোনই মুশকিল নয় যে, যে মোবারক দিনে নবীয়ে আখেরুজ জমান হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা:)-এর শুভজন্ম হয়েছে, তা সকল ঈদের দিনের চেয়ে বড় ঈদের দিন, খুশি ও আনন্দের দিন। অধিকাংশ মুসলমান মীলাদ মাহফিলের মাধ্যমে নিজেদের অন্তরের আনন্দকে প্রকাশ করে এবং আল্লাহপাকের দরবারে। এই চিরস্থায়ী নেয়ামত লাভের উপর শোকর আদায় করে। এইদিন খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করার মধ্যে ঈমান নিহিত আছে। জমহুর মুসলিম উম্মত সর্বদাই এই কার্যক্রমকে পালন করে আসছে এবং রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর জন্মদিন ১২ রবিউল আউয়ালকে খুবই ইজ্জত এবং সম্মানের সাথে ঈদের মত উদযাপন করে থাকে। কোন কোন ভিন্ন মতাবলম্বী জ্ঞানীজন আপত্তি উত্থাপনের করেন যে, ‘ঈদুল ফিতর’ এবং ‘ঈদুল আযহা’ ছাড়া অন্য কোন দিনের জন্য ঈদ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। আমরা এই প্রশ্নটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)-এর দিকে নিয়ে যাচ্ছি যে, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ছাড়া অন্য কোন দিনের জন্য ঈদ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে, নাকি যাবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)-এর দিক থেকে এই উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ‘ইন্নাহা নুজিলাত ফী ইয়াওমি ইদাইনি, ফী ইয়াওমিল জুমআহ, ওয়া ইয়াওমিল আরাফাহ’। অর্থাৎ জুমা এবং আরাফাহ্্ (হজ)-এর দুই ঈদের দিন এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে।
এই উত্তরের ওপর এই অভিযোগ ও করা যেতে পারে যে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ তো ঈদুল আযহার দিন। আমাদের দিক থেকে এই অভিযোগের উত্তর হচ্ছে এই যে, হযরত ওমর ফারুক (রা:) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) জুমার দিনকেও ঈদের দিন বলে সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং তাদের মত জালিলুল কদর সাহাবার কথা মোতাবেক যদি জুমার দিনকে ঈদ বলা যায়, তাহলে মীলাদে মোস্তফা (সা:)-এর দিনকে কেন ঈদ বলা যাবে না? বরং এই দিনটি হল ‘ঈদুল আঈয়াদ’ অর্থাৎ সকল ঈদের ঈদ। কেননা সেই ‘ছাহেবে লাওলাক’ (সা:)-এর সদকাহ ও ওছিলায় সকল মানব বংশোদ্ভূত জনেরা কোরআনুল হাকীম-এর মত বেমিছাল আসমানী কিতাব এবং হেদায়েতে রাব্বানীর ফয়েজ ও বরকত লাভের সুযোগ পেয়েছে। জুমার দিনের খাস গুরুত্ব এবং ফজিলতের ভিত্তিতে একে সাইয়্যেদুল আইয়্যাম অর্থাৎ সকল দিনের সর্দার বলা হয়েছে। এই দিনে গোসল করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা, খুশবু লাগানো এবং জীন্দেগীর কায়কারবার ছেড়ে মসজিদে সমবেত মুসল্লিদের সাথে শরীক হওয়া সুন্নত কাজ। হুযুর নবী আকরাম (সা:) সে দিন বেশি বেশি করে দরুদ শরীফ পাঠ করার হুকুম ও প্রদান করেছেন। হযরত আউস বিন্্ আউস (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযুর নবী আকরাম (সা:) বলেছেন : “তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হল জুমার দিন। এই দিনে হযরত আদম (আ:) জন্মগ্রহণ করেছেন। পোশাকে বা আকৃতিতে সৌভাগ্যবান করা হয়েছে। আর এই দিনেই তার রূহ কবজ করা হয়েছে এবং এই দিনেই সিঙ্গায় ফুঁৎকার করা হবে। সুতরাং এই দিনে বেশি করে আমার প্রতি দরুদ শরীফ প্রেরণ কর। নিশ্চয়ই তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” [(ক) সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস্্ সালাত, বাবু তাফরিয়ে আবওয়াবুল জুমায়াতে, ওয়া ফযলে ইয়াওমিল জুময়াতে ওয়া লাইলাতিল জুময়াতে, খন্ড-১ পৃষ্ঠা ২৭৫, বর্ণনা সংখ্যা ১০৪৭। (খ) সুনানে আবু দাউদ, আবওয়াবুল বিতরি বাবু ফিল ইস্তিগফারি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৮, বর্ণনা সংখ্যা ১৫৩১।] জুময়াতুল মুবারক হচ্ছে ঈদের দিন। এই বিষয়ের উপর প্রখ্যাত মুহাদ্দিসগণ নিজ নিজ কিতাবে নি¤েœাল্লিখিত হাদীসসমূহ সংকলিত করেছেন। ইবনে মাজাহ (২৩৯-২৭৩ হি:) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হুযুর নবী আকরাম (সা:) বলেছেন:” নিশ্চিয়ই এ হচ্ছে ঈদের দিন। যাকে আল্লাহপাক মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি জুমার নামাজের জন্য আগমন করবে তবে সে যেন গোসল করে আসে; যদি সম্ভব হয়, তাহলে যেন খোশবু ব্যবহার করে; আর তোমাদের জন্য মেসওয়াক করা জরুরী কাজ। [(ক) সুনানে ইবনে মাজাহ; কিতাবু ইকামাতিস্্ সালাত, বাবু ফীজ জিনাতি ইয়াওমিল জুময়াতি; খন্ড-১, পৃষ্ঠা ৩৪৯, বর্ণনা সংখ্যা ১০৯৮। (খ) তিবরানী : আল মুজামুল আওছাত খন্ড-৭, পৃষ্ঠা ২৩০, বর্ণনা সংখ্যা ৭৩৫৬; (গ) মুনজেরী, আত্তারগিবু ওয়াততারহীবু মিনাল হাদীসিস্ শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৬; বর্ণনা সংখ্যা ১০৫৮।] আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হি:) হযরত আব হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হুযুর নবী আকরাম (সা:) বলেছেন, “নিশ্চয়ই জুমার দিনটি হচ্ছে ঈদের দিন। সুতরাং তোমরা নিজেদের ঈদের দিনকে রোজার দিন বানিয়ে নিয়ো না। বরং তোমরা এর পূর্ববতী বৃহস্পতিবারে অথবা এর পরে সপ্তাহের দিনে রোজা রাখ।” [(ক) মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৩, ৫৩২, বর্ণনা সংখ্যা ৮০১২; ১০৯০৩। (খ) সহীহ ইবনে খুজাইমাহ : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৫; ৩১৮; বর্ণনা সংখ্যা ২১৬১,২১৬৬। (গ) মুসনাদে ইবনে রাহওয়াই : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫১, বর্ণনা সংখ্যা ৫২৪। (ঘ) হাকেম : আল মুছতাদরিকু আলাস্্ সহীহাইন : খন্ড-১, পৃষ্ঠা ৬০৩, বর্ণনা সংখ্যা ১৫৯৫।] এক্ষেত্রে একটি প্রশ্নের উদয় হয়। প্রশ্নটি হল এই যে, জুমার দিনের ফযিলতের কারণ কি? কি জন্য এই দিনটিকে সকল দিনের সর্দার এবং ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনায় প্রদান করা হয়েছে। স্বয়ং হুযুর নবী আকরাম (সা:) এই দিনের ফযিলতের কারণ বর্ণনা করে বলেছেন : “শুক্রবার দিন হল হযরত আদম (আ:)-এর মীলাদ বা জন্মদিন। (অর্থাৎ এই দিন হযরত আদম (সা:)-এর জন্ম হয়েছে এবং তাঁকে মানবিক পোশাক পরিচ্ছদ দ্বারা সুসজ্জিত ও মর্যাদাবান করা হয়েছে।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।