পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কয়েক মাস আগেও উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাতে মনে হয়েছিল, যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। এ নিয়ে সারাবিশ্বেই ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বাগযুদ্ধ এবং পারস্পরিক হুমকিতে পড়ে পুরো বিশ্ব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। দুই পরাশক্তিধর দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে অনিবার্য হয়ে উঠত তাতে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। হঠাৎ করেই যুদ্ধোন্মুখ এই পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক শুরুর পর দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যেতে থাকে। অলিম্পিকে অংশ নেন উত্তর কোরিয়ার ক্রীড়াবিদরা। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন-এর সঙ্গে বসতে রাজী হন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ট্রাম্পের সঙ্গেও মে বা জুনে তার বৈঠকের কথাবার্তা চলছে। এ অবস্থায় কয়েক দিন আগে পারমাণবিক কর্মসূচি আপাতত স্থগিতের ঘোষণা দেন কিম। মূলত তখন থেকেই যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠা স্তিমিত হতে থাকে। গত শুক্রবার কোরীয় যুদ্ধবিরতি পরবর্তী ৬৫ বছরে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ কোরিয়ায় পা পড়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডিন্ট কিম জং উন-এর মধ্যকার বৈঠক ও যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শন্তির এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রচিত হয়। কোরীয় উপদ্বীপ সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন দুই নেতা। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, দুই নেতা তাদের আট কোটি মানুষ ও সারাবিশ্বের সামনে ঘোষণা করছে যে, কোরীয় উপদ্বীপে আর কোনো যুদ্ধ হবে না এবং শন্তির যুগের সূচনা হলো। দুই কোরিয়া নিজেদের মধ্যে হামলা বা সামরিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখবে। সীমান্তে সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে এবং আসন্ন এশিয়ান গেমসসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে অংশগ্রহণ করবে। এ ছাড়া সামরিক অস্ত্র হ্রাস বৈরিতা কমানো, সুরক্ষিত সীমান্তে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বহুপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এগোবে তারা। দুই কোরিয়ার নেতার সফল বৈঠকের খবরে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন স্বস্তি প্রকাশ ও স্বাগত জানিয়েছে। তারা শান্তির জন্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
১৯৫০ সালে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। তিন বছর যুদ্ধ চলার পর ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই দুই কোরিয়া যুদ্ধবিরতিতে যায়। সেই থেকে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও আনুষ্ঠানিক কোনো শন্তিচুক্তি হয়নি। বরং ক্রমেই বৈরিতা বেড়েছে। মাঝে মাঝেই যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে। এ অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উত্তর কোরিয়া একঘরে হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে, নিজের সুরক্ষার অজুহাতে দেশটি পারমাণবিক কর্মসূচি বেগবান করে। বিশেষ করে ২০১১ সালে কিম জং উন কমিউনিস্ট শাসিত দেশটির শাসক হওয়ার পর পারমাণবিক কর্মসূচি আরও জোরদার করেন। তার নেতৃত্বে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপক বিকাশ ঘটায়। গত বছর দেশটি ষষ্ঠ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে। মাটির গভীরে হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো এ ব্যাপারে যত নিন্দা জানাতে থাকে উন তত বেশি আগ্রাসী হয়ে পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে থাকেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিম জং উন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালানোর প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলে। দিন যতই যেতে থাকে বিশ্বে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক উত্তপ্ত এ পরিস্থিতিকে শীতল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উত্তর কোরিয়ার ক্রীড়াবিদরা এতে অংশগ্রহণ করেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে বসতে রাজী হন। এটা ছিল অকল্পনীয়। কারণ উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন সারাবিশ্বে অত্যন্ত বদমেজাজী ও গোয়ার হিসেবে পরিচিত। সে যে কোনো সময় যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে, এমন ধারণা প্রত্যেকের মধ্যেই ছিল। এরকম একরোখা ব্যক্তি যখন চিরশত্রু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বসতে রাজী হন, তখন তা বিস্ময়কর মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিম হয়তো উপলব্ধি করেছেন, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, শান্তিই সমাধান। পারমাণবিক যুদ্ধের চেয়ে চলমান অর্থনৈতিক যুদ্ধই শ্রেয় এবং নিজ দেশের দুর্দশা ঘুচিয়ে এ যুদ্ধে শামিল হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন, দশকের পর দশক একঘরে হয়ে পড়ায় যুদ্ধাস্ত্রে সমৃদ্ধ হলেও অর্থনীতিতে তার দেশ অত্যন্ত দুর্বল রয়ে গেছে। মুনের সঙ্গে মতৈক্যের পর কিম বলেছেন, আমরা নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে ভালো ফলের জন্য চেষ্টা করব। অন্য চুক্তির মতো এই চুক্তি ফুরিয়ে যাবে না, সারাবিশ্বকে এ কথা নিশ্চিত করে বলতে চাই। কিমের এ কথা থেকেই তার বোধোদয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
যুদ্ধ ধ্বংস ও মানবিকতার পরাজয় ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। রক্ত কেবল রক্তই বয়ে আনে। তারপরও বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলো তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলছে। শক্তিধর দেশগুলো দুর্বল দেশগুলোর ওপর খবরদারি অব্যাহত রাখছে, যা বিশ্বশান্তিকে ধারাবাহিকভাবে হুমকির মুখে রেখেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে একজন ওয়ার মংগার বা যুদ্ধবাজ নেতা হিসেবে কিম জং উনের আত্মপোলব্ধি থেকে অন্যান্য পরাশক্তিধর দেশগুলোর নেতাদের যেমন শেখার বিষয় রয়েছে, তেমনি এই উপমহাদেশের প্রতিবেশি বৃহৎ দেশগুলোর নেতাদেরও শিক্ষা নেয়ার বিষয় রয়েছে। যুদ্ধ-বিগ্রহ, হুমকি-ধমকি, দাদাগিরি বা আগ্রাসী মনোভাব দিয়ে নয়, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।