Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নথির জন্য অপেক্ষা...

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নথির অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নথি হাইকোর্টে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারককে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালতের কার্যক্রম সরকারি ছুটির দিন তথা (শুক্রবার ও শনিবার) বন্ধ থাকে। সেই হিসাবে কার্যদিবস আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত নথি পাঠানোর সময় আছে।
তবে কার্যদিবস গণনা না করলে করলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সময় শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তবে এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন দুদকের আইনজীবী। অ্যার্টনি জেনারেলও বলেছিলেন, নথি পাঠাতে কার্যদিবস অনুযারী ১৫ দিন সময় পাবেন নিন্ম আদালত। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে নথি পাঠাতে কাল ক্ষেপন করছে সরকার। মামলার নথি এলেই বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশ দিবেন উচ্চ আদালত। জামিন বিষয়ে শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ করে নিন্ম আদালত থেকে মামলার নথি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোট বেঞ্চ।
নিন্ম আদালতের দেয়া খালেদা জিয়াকে দেয়া অর্থদন্ড আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। এরপর জামিন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনের মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠাজুড়ে ৩২টি যুক্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন। শুনানি শেষে মামলার নথি এলে জামিন আদেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন উচ্চ আদালত। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন শুনানিতে দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীদের রাখা যায় কি না তা নিয়েও ভাবছেন বিএনপি‘র আইনজীবীরা। যদিও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএনপি আইনজ্ঞরা বলেছেন, আশা করি উনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাবেন। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও এ মামলায় লড়বে বলে জানিয়ে দিয়েছে। হাইকোর্ট যদি খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ও তাহলে দুদক নিশ্চয়ই আপিল বিভাগে যাবে। যদিও এ বিষয়ে সরাসরি কোন কথা বলতে রাজি হননি দুদকের আইনজীবী।
এ বিষয়ে জানতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেছেন, আশা করছি আজ কালের মধ্যে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠাবে নি¤œ আদালত। আর যদি না পাঠান তাহলে বুঝবো সরকার এখানে প্রভাব বিস্তার করছে। আগামীকাল ৮ মার্চ সময় শেষ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্ট যেন সহসা খালেদা জিয়াকে জামিন বিষয়ে আদেশ দিতে না পারেন সেজন্য সরকার নথি পাঠাতে বিলম্ব করছে। এজন্য আমরা যেমন উদ্বিগ্ন ও সারাজাতিও আজ উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন, সারা জাতি আজ উদ্বিগ্ন। খালেদা জিয়াকে একটা অন্ধকার কুপের মধ্যে রাখা হয়েছে।
দুনীতি দমন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশেদ আলম খান ইনকিলাবকে বলেছেন, এখনো সময় বাকি আছে। এ নিয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই্। এত অস্থিরতার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, কার্য দিবস অনুয়ারী আগামী রোরববার পর্যন্ত সময় আছে। উচ্চ আদালতের আদেশ নথি আসবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, আগামী কাল নথি উচ্চ আদালতে পৌছতে পারে এমনটাই প্রত্যশা করছি। তবে এ নিয়ে আমরা আজ বুধবার বৈঠক বসবে। এরপর বিস্তারিতভাবে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলব। তিনি আরো বলেন, নথি পাঠানো এক দিনের কাজ। আদালত পাঠাতে কেন বিলম্ব করছেন তা তো আমার জানা নেই। তবে আমার মনে হয় সরকারের নির্দেশে এমটা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। কারণ সবই তো প্রস্তুত আছে শুধু মাত্র লিষ্ট করে পাঠালে তো হয়
কালক্ষেপণ করাচ্ছে সরকার অভিযোগ বিএনপির:
কারান্তরীণ খালেদা জিয়া যাতে সহসা মুক্তি না পায়, সেজন্য সরকার নথি পাঠাতে কালপেক্ষণ করাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি। রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন উচ্চ আদালত থেকে জামিন যেন সহজে না পান এজন্য সরকার নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে মামলার নথি দিতে বিলম্ব করাচ্ছে। মামলার নথি পাঠাতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। আইন বিশেষজ্ঞরাও নথি পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করছেন। মূলত: খালেদা জিয়া যাতে সহসা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ না করেন সেজন্য নথি পাঠাতে কালক্ষেপণ করাচ্ছে সরকার। তার আইনজীবীরা নথির জন্য বিচারিক আদালতে বারবার ধর্ণা দিলেও এখনো নথি পৌঁছেনি হাইকোর্টে। নথি পাঠাতে নি¤œ আদালতের গড়িমসি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে সরকারই নথি পাঠাতে বিলম্বের কলকাঠি নাড়ছে, বলেন রুহুল কবির রিজভী
সাজার বিরুদ্ধে কামালে’র আপিল:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পর এবার আপিল করেছেন ওই মামলায় ১০ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল। গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার পক্ষে আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায় আপিল দায়ের করেন বলে জানান আইনজীবী ।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর ও তার ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেন আদালত। সাজা ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করা হয়।



 

Show all comments
  • মারিয়া ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ পিএম says : 14
    আল্লাহই ভালো জানে কবে এই অপেক্ষার শেষ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নথি

২৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ