Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদায়ের আগে ছোট দুই বোনকে বলেছিল ‘বাবার দিকে খেয়াল রাখিস’

ফলোআপ : টিকাটুলিতে ছিনতাইকারীর হাতে ছাত্র খুন

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ছোট দুই বোনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বাবার দিকে খেয়াল রাখার জন্য বলেছিল তালহা। কে জানতো তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বাবা সন্তানহারা হবেন। তালহার বাবা নূর উদ্দিন খন্দকার বলেন, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশায় করেই বাসার সামনে আসে তালহা। খবর পেয়ে আমি দ্রুত দোতালা থেকে নেমে দেখি সে রিকশায় বসে আছে। সমস্ত শরীরে রক্ত। আমি কাছে যেতেই সে ‘বাবা’ বলে ডাকার চেষ্টা করে আর পারেনি। সাথে সাথে ঢলে পড়েছে। এসময় আমি তাকে ধরে ফেলি। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ক্লাস ছিল বলে তালহা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে। আমি ফজরের নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পড়ি। এর মধ্যে সে গোসল করে রেডি হয়ে আমাকে ডাক দেয়। বলে, বাবা টাকা লাগবে। আমি তার হাতে টাকা দিয়ে জড়িয়ে ধরে আদর করে বিদায় দেই। এরপর সে ছোট দুই বোনকে ডেকে তুলে বলে, তোরা ভালোভাবে পড়াশুনা করিস, বাবার দিকে খেয়াল রাখিস। কথাগুলো বলতে গিয়ে কণ্ঠ জড়িয়ে যাচ্ছিলো ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত তালহার বাবা নূর উদ্দিনের। বললেন, আমার ছেলে যে আর পৃথিবীতে নেই, একথা একটু আগেও আমার মনে ছিল না।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল আবু তালহা (২২)। সাভারের আশুলিয়া ক্যাম্পাসে হোস্টেলে থাকতো সে। গত বৃহস্পতিবার বাসায় এসেছিল। দুদিন বাসায় থাকার পর শনিবারেই চলে যেতে চেয়েছিল। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় তার ক্লাস ছিল। কিন্তু বাবা তাকে ওই দিন যেতে দেন নি। বলেছিলেন, আজকের দিনটা থেকে যা বাবা। বাবার অনুরোধে শনিবারে আর যায় নি তালহা।
রোববার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে টিকাটুলির ১২/২ কেএম দাস লেনের বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে দু’শ গজ সামনে হুমায়ুন সাহেবের বাড়ির মোড়ে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে তালহা। ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার পর সে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আরেক বাসা থেকে সানি নামের এক যুবক ও তার বোন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকি সাদিয়া আসেন ওই মোড়ে। মোড়ের কর্ণারে ৪৯/৫ নং বাড়ির গ্যারেজে সানির মোটরসাইকেল রাখা ছিল। মোটর সাইকেল নেয়ার জন্য তারা ওই বাসার সামনে এলে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের মুখে সানিকে জিম্মি করে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও মানিবাগ এবং সাদিয়ার হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তালহা একটু এগিয়ে গিয়ে একজন ছিনতাইকারীকে পেছন থেকে গলার মধ্যে জাপটে ধরে। ছিনতাইকারী নিজেকে রক্ষার জন্য তালহার হাতে কামড় দেয়। তাতেও সে না ছাড়লে ছিনতাইকারী তার কোমড় থেকে ছুরি বের করে সামনের দিকে তালহার রানের নীচে সজোড়ে আঘাত করে। তালহার বাবা বলেন, এতে করে তালহার রানের মেইন রগ কেটে যায়। এ কারনে দ্রুত রক্তক্ষরণ হয়ে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তালহার বাবা বলেন, ছিনতাইকারীরা তালহাকে ছুরিকাঘাত করে পায়ে হেঁটে রেললাইনের দিকে চলে যায়। তখন তালহা নিজেই রিকশায় উঠে বাসার দিকে ফিরে আসে। খবর পেয়ে আমি দোতালা থেকে নেমে রাস্তায় যাই। আমাকে দেখে সে ‘বাবা’ বলে ডাক দিতে গিয়ে আর পারেনি। রিকশা থেকে ঢলে পড়ে। আমি তাকে ধরে ফেলি। তিনি বলেন, ওর হাত, পা, বুকসহ সারা শরীরে রক্ত দেখে আমি বুঝে উঠতে পারিনি ক্ষতটা কোথায়। একটা সিএনজি নিয়ে প্রথমে সালাহউদ্দিন মেডিকেলে যাই। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার কিছুক্ষণ পরেই সে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়। বিত্তবান ব্যবসায়ী পিতার একমাত্র ছেলে ছিল তালহা। তার এক মামা বলেন, এভাবে ছেলেটার মৃত্যু হবে তা কেউ কল্পনাও করিনি। যে স্থানে ঘটনা ঘটেছে সেই রাস্তার মোড় বড়জোর ১৪ ফুট হবে। মোড়ের দুদিকে দুটি বহুতল নির্মাণাধীন ভবন। চারিদিকে বহুতল বাড়ি। ভোর ৬টা ৪০ মিনিটের ঘটনা। ওই সময় তালহা এবং আরও দুজনের চিৎকার কেউ শুনলো না? নির্মাণাধীন ভবনে অনেক মানুষ কাজ করে রাতে ঘুমিয়ে থাকে। তারাও কেউই টের পেল না? তালহার ওই মামা বলেন, সানির কাছে জেনেছি ছিনতাইকারীরা ছিল তিনজন। এর মধ্যে একজনকে তালহা জাপটে ধরেই ফেলেছিল। ওই সময় কেউ এগিয়ে এলে আর এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। কিন্তু কেউ এগিয়ে না আসায় ছিনতাইকরীরা তাকে ছুরিকাঘাত করার সময় পেয়েছে। গতকাল সোমমবার বিকালে তালহাদের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, শোকে সবাই পাথর হয়ে গেছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। বাসার ভেতরে মহিলাদের আনাগোনার শব্দ পাওয়া গেলেও কান্নার কোনো শব্দ নেই। একজন জানালেন, রোববার সারাদিন কাঁদতে কাঁদতে সবারই চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তালহার এক আত্মীয় জানান, রোববার আছরের পর জানাযা শেষে মাগরিবের পর আজিমপুর গোরস্থানে তালহাকে দাফন করা হয়েছে। ওই আত্মীয় আফসোস করে বলেন, এমনভাবে ছেলেটার মৃত্যু হলো যার কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। প্রকৃত খুনী ধরা পড়বে কিনা তাও জানি না আমরা। খুনি ধরা পড়লে বা তার শাস্তি হলে তাও মনে একটা শান্তনা পাওয়া যেতো। জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, খুনীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হারুন সরদার বলেন, খুনীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুনীদের ধরতে পারবো।



 

Show all comments
  • সাব্বির ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৩৩ এএম says : 1
    অনতিবিলম্বে ছিনতাইকরীদেরকে গ্রেফতার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • akib ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৩৩ এএম says : 1
    oi kane ki cc cemera chilo na ? shothan golake dore taratari shasti dea hok
    Total Reply(0) Reply
  • ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১০:১৯ এএম says : 0
    ছিনতাইকারীদের ধরে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:৪৪ এএম says : 0
    দৃস্টান্ত মুলক শাস্তি দিতে হবে, তবে কে দিবে? পুলিশ! না কারন পুলিশে ছিনতাইকারীদের হতে পার্সেন্টিস পায়।আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষী,, এসময় ছিনতাই হয় পুলিশ জেনেও না জানার ভান করে, সুযোগ দেয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ