নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রথম দিন বোলারদের হতাশা। দ্বিতীয় দিন হতাশ করলেন ব্যাটসম্যানরা। তবে তৃতীয় দিনে যখন একটু আশার সলতে জ্বালিয়েছিলেন, সিটেও নিভে গেছে এক দমকা বাতাসে। পচেফস্ট্রুম টেস্টের তিন দিনেই একবার ইনিংস ঘোষনা করে, বাংলাদেশকে ৩২০ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ অলআউট ৩২০ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ১৭৬ রানের। এক পর্যায়ে দলের রান ছিল ৬ উইকেটে ২৯২। শেষ ৫ উইকেট পড়েছে ২৮ রানে। বাংলাদেশের ইনিংসে দুটি অর্ধশতক, সেঞ্চুরি নেই। আরও চার জন ২৫ ছুঁয়েও করতে পারেননি বড় কিছু। তাই গড়ে ওঠেনি বড় কোনো জুটি। পঞ্চাশের জুটি হয়েছে চারটি, একটিও নেই তিন অঙ্কের জুটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার মটিতে পঞ্চম টেস্টে প্রথমবার স্বাগতিকদের দুইবার ব্যাট করাতে পারছে বাংলাদেশ। যদিও ম্যাচের বাস্তবতায় এটিকে প্রাপ্তি ভাবার কারণ নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের আগের সর্বোচ্চকে ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে করা ৩২৬ এখনও শীর্ষে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ দলীয় এটিই। এর আগে ২০০২ সালে ইস্ট লন্ডনে করা ২৫২ই ছিল সর্বোচ্চ।
তবে এবার আর স্বস্তিতে নেই স্বাগতিকরা। তৃতয় দিন শেষে দুই উইকেট হারানো প্রোটিয়াদের সংগ্রহ (১৫.৫ ওভারে) ৫৪। আমলা ১৭, বাভুমা আছেন ৩ রানে।
দেখে শুনে, বুঝে শুরুটা করতে চেয়েছিলেন প্রথম থেকেই যাদের কারণে এত ভোগান্তি সেই এলগার ও মার্করাম। তবে বেশিক্ষণ স্থায় হয়নি বাংলাদেশের এই অস্বস্তি। শুরুর আঘাতটা করেন শফিউল। প্রথম ইনিংসের মতো ভোগান্তির কারণ হতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি। লিড দুইশ ছাড়ানোর পর বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিলেন এই পেসার। রাউন্ড দা উইকেটে করা লেংথ বল লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন ডিন এলগার। মিস করেছেন লাইন। আঙুল তুলতে খুব বেশি সময় নেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি এলগারের। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রানে আউট হওয়া এলগার এবার করলেন ১৮। দলের রান ১ উইকেটে ৩০।
দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় ৩৮ রানের মাথায় আরেক পেসারের ঝলকানি। ওভার দা উইকেটে বল করা মুস্তাফিজকে শাফল কলে অনায়াসে খেলছিলেন এইডেন মারক্রাম। বাঁহাতি পেসার বদলে লেন অ্যাঙ্গেল। এলেন রাউন্ড দা উইকেট। সাফল্য হাতে নাতে। বলটি ছিল অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে। শট খেলার আমন্ত্রণ। তাতে সাড়াও দিলেন মারক্রাম। কিন্তু সেটি যে সাধারণ গতির ডেলিভারি নয়, ১২৪ কিলোমিটারের কাটার! একটু বেরিয়ে যাওয়া বলটিতে কট বিহাইন্ড মারক্রাম। প্রথম ইনিংসে ৯৭ রানে রান আউট হওয়া অভিষিক্ত ওপেনার এবার আউট হলেন ১৫ রানে। ততক্ষণে লিড ২১৪ রানের।
এর আগে টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৩ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান নিয়ে (৩৬৯ রানে পিছিয়ে থেকে) গতকাল খেলতে নামে টাইগাররা। আজ ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দেখে শুনে করলেও দিনের তৃতীয় ওভারে পেসার কাগিসো রাবাদার বলে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন ওপেনার তামিম। আম্পায়ার সেটাকে আউট না দিলে প্রোটিয়া দলপতি রিভিউ নেন। পরবর্তীতে সেখানেও বেঁচে যান তামিম। এর দুই ওভার পর একই বোলার রাবাদের ছোড়া ইয়র্কারে আবারো লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন তামিম। আম্পায়ার আবারো সেটিকে আউট না দিলে প্রোটিয়া দলপতি রিভিউ নেন। এরপর আবারো বেঁচে যান তামিম।
এরপর ম্যাচের ৪৪ তম ওভারে এসে রাবাদের এক ওভারে ১৭ রান নিয়ে দলীয় ১৫০ পার করে টাইগাররা। কিন্তু দুইবার আউটের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসা তামিমকে ৪৫ তম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠান আন্দাইল ফেহলুকায়ো। এরই সাথে ভাঙ্গে তামিম-মমিনুলের ৫৫ রানের দুর্দান্ত জুটিটি। তামিম ফিরে গেলে মমিনুলের সাথে ক্রিজে যোগ দেন টাইগার অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে মমিনুল পূরণ করেন নিজের অর্ধশতক।
এরপর রিয়াদ এবং মমিনুলের ব্যাটে দলীয় রান ২০০ পার করে বাংলাদেশ দল। সঙ্গে নিজেদের মধ্যে পঞ্চাশ রানে জুটিও পূরণ করেন তারা। এরপর আর কোন উইকেট না হারিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল। লাঞ্চের পর ব্যাট করতে নেমে ধীরগতিতে ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ দল। কিন্তু ম্যাচের ৬৩.৩ ওভারে স্পিনার কেশাভ মহারাজের বলে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মমিনুল। ৭৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন মমিনুল।
মমিনুলের বিদায়ে রিয়াদকে সঙ্গ দিতে নেমেছেন সাব্বির রহমান। সাব্বিরকে সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ২৫০’র উপর নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন রিয়াদ। অর্ধশতক হাঁকানোর পর রিয়াদ অভিজ্ঞ সাব্বিরকে নিয়ে দেখে শুনেই খেলছিলেন। কিন্তু দলীয় ২৯২ রানে ফলো-অন থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকায় অবস্থায় ডুয়েন অলিভিয়েরের বলে বোল্ড আউট হয়ে ফিরেন সাব্বির।
সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। সাব্বিরের বিদায় ক্রিজে নামেন মিরাজ। সাব্বির বিদায় নেয়ার পর কেশাভ মহারাজের ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে টাইগারদের দলীয় ৩০০ পূরণের পাশাপাশি ফলো অন এড়ান রিয়াদ। তবে এরপর মরনে মরকেলের করা ৮৩ তম ওভারের চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত ৬৬ রানে মাহমুদউল্লাহ বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তার কিছুক্ষণ পরই ১ রান করে তাসকিন রান আউট হয়ে ফিরলে অল আউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা।
তারপর ৮৬ ওভার শেষে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ৩০৮ রান করে চা বিরতিতে যায় টাইগাররা। চা বিরতির পর কাগিসো রাবাদার বলে ডিন এলগারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৮ রানে সাজঘরে ফিরেছেন মিরাজ। মহারাজের করা ৯০ তম ওভারের প্রথম বলে ২ রান করে শফিউল ইসলাম হাসিম আমলার হাতে ক্যাচ দিলে ৩২০ রানে থামে টাইগারদের ইনিংস।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা, ১ম টেস্ট ৩য় দিন
সেনউইস পার্ক, পচেফস্ট্রুম
দ.আফ্রিকা ১ম ইনিংস ৪৯৬/৩ ডিক্লে.
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
লিটন দাশ ক আমলা ব মর্কেল ২৫ ২৯ ৪ ০
ইমরুল ক মার্করাম ব রাবাদা ৭ ২০ ০ ০
মুমিনুল ক মার্করাম ব রাবাদা ৭৭ ১৫০ ১২ ০
মুশফিকুর ক মার্কমার ব মহারাজ ৪৪ ৫৭ ৭ ১
তামিম ক ডি কক ব ফেলুকাহোয়ে ৩৯ ৬৭ ৬ ১
মাহমুদুল্লাহ ব মর্কেল ৬৬ ১২৪ ১১ ১
সাব্বির ব ওলিভার ৩০ ৪৬ ৪ ১
মিরাজ ক এলগার ব রাবাদা ৮ ১৬ ০ ০
তাসকিন রান আউট (বাভুমা/মার্করাম) ১ ২ ০ ০
শফিউল ক আমলা ব মহারাজ ২ ১৩ ০ ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ১০ ১২ ২ ০
অতিরিক্ত (লে বা ১, বা ১, নো ১) ১১
মোট (৮৯.১ ওভার, অল আউট) ৩২০
উইকেট পতন : ১-১৬ (ইমরুল), ২- ৩৬ (লিটন), ৩-১০৩ (মুশফিক), ৪-১৫৮ (তামিম), ৫-২২৭ (মুমিনুল), ৬-২৯২ (সাব্বির), ৭-৩০৪ (মাহমুদুল্লাহ), ৮-৩০৫ (তাসকিন), ৯-৩০৮ (মিরাজ), ১০-৩২০ (শফিউল)।
বোলিং : মর্কেল ১৯-৭-৫১-২, রাবাদা২৪-৫-৮৪-২, মহারাজ ২৭.১-৮-৯২-৩, ওলিভার ১১-১-৫২-১, ফেলকওয়ায়ে ৬-২-১৮-১, মার্করাম ২-০-১৩-০।
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
মার্করাম ক লিটন ব মুস্তাফিজ ১৫ ২৬ ২ ০
এলগার এলবি ব শফিউল ১৮ ২৫ ২ ০
আমলা ব্যাটিং ১৭ ৩২ ১ ০
বাভুমা ব্যাটিং ৩ ১৩ ০ ০
অতিরিক্ত (নো ১) ১
মোট (২ উইকেট ১৫.৫ ওভারে) ৫৪
উইকেট পতন : ১-৩০ (মার্করাম), ২-৩৮ (এলগার)।
বোলিং : মিরাজ ৪-১-১৫-০, শফিউল ৫-১-১৮-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৭-১, তাসকিন ২.৫-০-১৪-০।
(৩য় দিন শেষে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।