পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
সউদী আরব বলেছে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) বিষয়ে সে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। সোমবার পাকিস্তানে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত অ্যাডমিরাল (অব) নাওয়াফ আহমাদ আল-মালিকি পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের সাথে বৈঠককালে ৫৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় সাপেক্ষ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) বিষয়ে রিয়াদের সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ সম্ভাব্য সহযোগিতার প্রকৃতি তিনি বিশদ করেননি। আল -মালিকি বলেন, তার দেশ রেল ও সড়ক প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশকে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের সাথে যুক্ত করার গেম-চেঞ্জার প্রকল্পে ভূমিকা পালন করতে চায়। সউদী আরব তার দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহযোগিতা করতে চায়। কিন্তু এ অঞ্চলে কানেক্টিভিটি উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক বিনিয়োগ বান্ধব প্ল্যাটফরম থেকে কল্যাণ পেতে সউদী আরবের কি তার ঐতিহাসিক মিত্রের সাথে একসাথে কাজ করতে সিপিইসিতে যোগ দেয়া উচিত?
সউদী-ইরান বিরোধ নিরসনে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ
চীন ও পাকিস্তান যদি সউদী আরবকে সিপিইসিতে যোগ দিতে দেখে তা সউদী আরবকে তার ঐতিহ্যবাহী দু’ প্রতিদ্ব›দ্বী কাতার ও ইরানের কাছে আনতে ইসলামাবাদকে সাহায্য করবে। এ দু’টি দেশও বহু শত কোটি ডলারের এ প্রকল্পের অংশীদার হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকরা বলেন, সউদী আরব ও ইরান উভয়ের সাথে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত উষ্ণ সম্পর্কের কথা ধরলে ইসলামাবাদ সউদী-ইরান সম্পর্কে দীর্ঘকালের ফাটল মেরামতে সাহায্য করতে পারে। এ বছরে গোড়ার দিকে তেহরান বলে যে সে তার সকল সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও সামর্থ নিয়ে সিপিইসিতে যোগদানে আগ্রহী।
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র কাতারও তার দক্ষিণ এশীয় বন্ধুর সাথে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার কথা ভাবছে। সউদী আরব ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে তিন মাস যাবত স্থল, নৌ ও বিমান অবরোধের প্রেক্ষিতে কাতার নতুন বাণিজ্য পথ সন্ধান করছে। এ মাসের গোড়ার দিকে কাতারের একটি শিপিং কোম্পানি দোহা ও পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচির মধ্যে দ্রæতগামী সরাসরি সার্ভিস চালু করেছে।
যখন এ গ্রীষ্মে সউদী আরব ও তার মিত্ররা কাতারের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে তখন পাকিস্তান সউদী আরব ও কাতার উভয় দেশের সাথে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কারণে পাকিস্তানকে বেকায়দায় অবস্থায় ফেলে দেয়। পাকিস্তান দু’দেশের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে।
যদি সউদী আরব ও কাতার সিপিইসিতে যোগদান করে তাহলে পাকিস্তান দু’দেশের মধ্যকার ফাটল মেরামতের ভালো সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে সরকারী পর্যায়ে আলোচনার অনুপস্থিতিতে এটা পরিষ্কার নয় যে দোহা ও রিয়াদ তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘুচাতে এবং চীন-পাকিস্তান প্রকল্প থেকে লাভবান হতে চায় কিনা।
ইরান-সউদী সিপিইসিতে যোগ দিলে তা মুসলিম বিশ^কে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে
সিপিইসিতে ইরান ও সউদী আরবের যোগদান এ দু’টি মুসলিম দেশের শত বছরের প্রতিদ্ব›িদ্বতারই শুধু অবসান করবে না, তা এ গেম-চেঞ্জ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও বিরাট অবদান রাখবে।
ইরান, যার রাজস্বের ৮০ শতাংশই আসে তেল রফতানি থেকে, সে তার বিশাল জ¦ালানি সম্পদ সিপিইসি প্রকল্পগুলোর জন্য ব্যবহার করতে পারে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তেহরানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সাথে পাকিস্তান ও চীনের প্রযুক্তি বিশষজ্ঞদের উজ্জ্বল মেধাসমূহের সমন্বয়ের ফলে এ অঞ্চলে বিপ্লব সংঘটিত করবে।
কার্যত সউদী আরব ও ইরান সিপিইসিতে যোগ দিলে এ তা অঞ্চলে শুধু কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য সম্পর্ককেই উন্নত করবে না, তা শান্তি ও স্থিতিশীলতার ভিত্তিও স্থাপন করবে। তাছাড়া, সিপিইসিতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশের যোগদান খুব সম্ভবত অন্য মুসলিম দেশগুলোকেও এ প্রকল্পে যোগদানে উৎসাহিত করতে পারে এবং তা মুসলিম বিশ^কে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে।
সিপিইসিতে যোগদানে ইরান এক ধাপ এগিয়ে
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ^শক্তির সাথে পারমাণবিক চুক্তির পর ইরানের উপর আরোপিত অর্থনীতি পঙ্গুকারী নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তারপর থেকে ইসলামাবাদ ও পাকিস্তান তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী। ২০১৬ সালে ইরান পাকিস্তান ২০২১ সাল নাগাদ তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। ইরানের বিরদ্ধে অবরোধ আরোপের আগে এ বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার।
স্্উদি আরবের সিপিইসিতে যোগদান এক বড় ঘটনা
পাকিস্তান-ইরান বাণিজ্য যখন ধীরে ধীরে আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে সে সময় সউদী আরব তার তেল নির্ভর অর্থনীতির অস্থির প্রবৃদ্ধি হারের পরিবর্তে দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের দিকে ফিরতে পারে। পাকিস্তান ও চীন যদি সউদী আরবকে সিপিইসিতে পায় তাহলে তা যে শুধু এ অঞ্চলে কানেক্টিভিটিকেই শক্তিশালী করবে না, তা সউদী অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে।
সিপিইসি রিয়াদের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ নিয়ে এসেছে। সউদী ভিশন ২০৩০-এ ২০৩০ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা রয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সউদী অপরিশোধিত তেলের দুই শীর্ষ আমদানিকারক। তাদের আমদানি যথাক্রমে বার্ষিক ২৬ বিলিয়ন ও ২০ বিলিয়ন ডলার।
সিপিইসিতে যোগদান ও পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে প্রবেশাধিকার পেলে সউদী আরব ভূ-অর্থনৈতিক আঙ্গিনায় প্রবেশ করবে যা দেশটির জন্য বিপুল অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দেবে।
পাকিস্তান সেন্ট্রাল ব্যাংকের তথ্য মতে, পাকিস্তানে রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সউদী আরব শীর্ষে রয়েছে চলতি অর্থ বছরে যার পরিমাণ হচ্ছে ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার। সেখানে প্রায় ২০ লাখ পাকিস্তানি শ্রমিক রয়েছে।
সিপিইসিতে সউদী আরব পাক-যুক্তরাষ্ট্র ফারাক বন্ধ করতে পারে
পাকিস্তান যদি সউদী-ইরান ফারাকের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করতে পারে তাহলে সউদীও পাশ্চাত্যের সাথে পাকিস্তানের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তান কৌশল বিষয়ক বক্তৃতায় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করার পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে।
সউদী আরব যেহেতু আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের মত বিষয়গুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের অংশীদার , তাই সউদী-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়ন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কথিত অপর্যাপ্ত যুদ্ধ বিষয়ে ওয়াশিংটনের সমালোচনা হ্রাস করে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ মসৃণ করতে পারে।
ইরান ও সউদী আরব যদি সিপিইসিতে যোগ দেয়, তাহলে তা সউদী ও ইরানিদের জন্য আরো প্ল্যাটফরম সৃষ্টি করবে যেখানে তারা সাক্ষাত করতে, হাত মেলাতে ও আলোচনা করতে পারবে। এটা দু’ প্রতিদ্ব›দ্বীকে শান্ত চুক্তিতে পৌঁছতে ও তাদের মধ্যকার শত্রæতা পিছনে ফেলতে সহায়তা করতে পারে। আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।